‘আয়া সুফিয়া’কে মসজিদ হিসেবে ঘোষণা এরদোগানের
- নয়া দিগন্ত অনলাইন
- ১০ জুলাই ২০২০, ২৩:২০, আপডেট: ১৫ জুলাই ২০২০, ১২:৩৭
তুরস্কের শীর্ষ আদালত আজ শুক্রবার আয়া সোফিয়াকে ১৯৩৪ সালের তৎকালীন সরকারের যাদুঘরে পরিণত করার আদেশটি বাতিল করেছে। যার ফলে এখন বিখ্যাত এই স্থাপনাটি আবারো মসজিদে রুপান্তরিত করতে আর কোন বাধা রইল না।
তুরস্কের প্রশাসনিক আদালত ১৯৩৪ সালের সিদ্ধান্তকে বাতিল করে দেয়ার কয়েক মিনিটের পরেই প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়েব এরদোগান ১০ জুলাই আয়া সোফিয়াকে মসজিদ হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করার জন্য আদেশ জারি করেন।
এই রায় প্রকাশের পরই খুশিতে মেতে উঠে তুর্কিরা। তারা আয়া ইস্তাম্বুলের আয়া সুফিয়ার আশেপাশে আল্লাহু আকবার ধ্বনিতে মুখরিত করে তোলেন।
এরদোগান তুরস্কের জনগণকে অভিনন্দন জানিয়ে আয়া সুফিয়াকে ইবাদতের জন্য উন্মুক্ত করেন।
তুর্কি আদালত জানায়, চুক্তি অনুযায়ী আয়া সোফিয়া স্থাপত্যটি অন্য কোনো পরিচয় বহন করলে তা বৈধ হবে না।
আদালত জানায়,“১৯৩৪ সালে মন্ত্রিসভার যে সিদ্ধান্ত অনুযায় মসজিদ হিসেবে এর ব্যবহার বাদ দিয়ে যাদুঘরে রুপান্তরিত করেছিল তা আইন মেনে করা হয়নি”।
আয়া সোফিয়াকে জাদুঘর থেকে মসজিদে রূপান্তর করার সিদ্ধান্ত নেয় তুর্কি সরকার। কিন্তু জাদুঘর রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে থাকা বেসরকারি সংস্থা দেশটির আদালতে এ বিষয়ে মামলা করলে রায় দেওয়ার আগে ২ জুলাই শুনানিতে আদালত পক্ষগুলোর যুক্তি শুনেন।
পিটিশনে বলা হয়েছে, আয়া সুফিয়া ইস্তাম্বুল বিজেতা উসমানিয়া সুলতান দ্বিতীয় মেহমুদ- এর নিজস্ব সম্পত্তি যা ১৪৫৩ সালে ইস্তাম্বুল দখলের মাধ্যমে অর্জন করে এই ধর্মীয় স্থাপনাকে মসজিদে রুপান্তরিত করেছিলেন।
আয়া সুফিয়া বিশ্বের অন্যতম ঐতিহাসিক গুরুত্বপূর্ণ ও স্বাংস্কৃতিক নিদর্শন যা ষষ্ঠ শতাব্দীতে বায়জান্টাইন সম্রাজ্যের আমলে নির্মাণ করা হয়েছিল। এটা গ্রীক অর্থোডক্স চার্চ হিসেবে ব্যবহৃত হত। পরবর্তীতে ১৪৫৩ সালে উসমানিয়া খিলাফতের সময় ইস্তাম্বুল বিজয়ের মাধ্যমে মুসলিমদের হস্তগত হয়। ১৯৩৫ সালে তুর্কি সেকুল্যার পার্টি এটিকে জাদুঘরে রূপ দেয়। তবে এটিকে পুনরায় মসজিদ হিসেবে রূপান্তরের দাবি উঠে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে।
আহমেত ইয়েসিভী বিশ্ববিদ্যালয়ের রেক্টর সেনজিজ তোমার তুর্কি গণমাধ্যম ডেইলি সাবাহকে বলেন, "আয়া সোফিয়ার বিষয়টি তুরস্কের অভ্যন্তরীণ ও সার্বভৌমত্বের বিষয়"।
তিনি বলেন, এটি তৎকালীন মন্ত্রিসভার আদেশে জাদুঘরে পরিণত হয়েছিল আবার এখন নতুন আদেশে পুনরায় মসজিদে রূপান্তরিত হবে।
যদিও কিছু গোষ্ঠী দীর্ঘদিন ধরে স্থাপনাটিকে মুসলিম উসমানীয় উত্তরাধিকার হিসেবে বিবেচনা করে আবার মসজিদে রূপান্তরিত করার জন্য চাপ দিচ্ছিল। আবার অন্যরা বিশ্বাস করেন, ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্য সাইটের অংশ হিসেবে খ্রিস্টান ও মুসলিম সংহতির প্রতীক হিসেবে একটি যাদুঘর থাকা উচিত।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, গ্রিস ও ইউনেস্কো এই রায় প্রকাশের আগে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিল।
আয়া সোফিয়ার আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া নিয়ে আঙ্কারার বক্তব্য হলো, এটি একান্তই তুরস্কের আভ্যন্তরীণ বিষয়।
গত সপ্তাহে প্রেসিডেন্ট এরদোগান বলেছিলেন যে, যারা আয়া সোফিয়া সম্পর্কে তুরস্কের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলছে তারা সরাসরি তুরস্কের সার্বভৌমত্বের দিকে আঙুল তুলছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও গত সপ্তাহে একটি বিবৃতিতে তুরস্ক সরকারকে আয়া সুফিয়াকে জাদুঘর হিসেবে রাখার আহ্বান জানিয়েছিল।
তখন তুর্কি প্রেসিডেন্ট উল্লেখ করেন, তুরস্কে ৪৩৫টি গীর্জা ও সিনাগগ রয়েছে যেখানে খ্রিস্টান ও ইহুদিরা প্রার্থনা করতে পারে।
তুরস্কের প্রেসিডেন্টের মুখপাত্র ইব্রাহিম কালান গতকাল বৃহস্পতিবার আনাদোলু এজেন্সিকে বলেন, নামাজের জন্য ইস্তাম্বুলের আয়া সোফিয়াকে পুনরায় খোলার ফলে এটি তার পরিচয় থেকে বঞ্চিত হবে না, বরং এটি সর্বদা বিশ্বের ঐতিহাসিক ঐতিহ্যের অন্তর্ভুক্ত থাকবে।
তিনি বলেন, "তুরস্ক এখনো স্থাপনাটিতে খ্রিস্টানদের স্মৃতি সংরক্ষণ করবে, যেমন আমাদের পূর্বপুরুষরা সমস্ত খ্রিস্টান মূল্যবোধ সংরক্ষণ করেছিল।"
তিনি আরো বলেন, আমাদের প্রধান মসজিদগুলো যেমন ব্লু মসজিদ, ফাতিহ ও সুলায়মানিয়া মসজিদগুলো যেমন দর্শনার্থী এবং ইবাদতের জন্য উন্মুক্ত এটিও তেমনি থাকবে।
২০১৫ সালে, একজন আলেম ৮৫ বছরের মধ্যে প্রথমবারের জন্য আয়া সুফিয়ার ভিতরে কুরআন তেলাওয়াত করেছিলেন। পরের বছর থেকে, তুরস্কের ধর্মীয় কর্তৃপক্ষ পবিত্র রমজান মাস ও মুহাম্মদ সা. এর উপর কুরআন নাজিলের বছরকে কেন্দ্র করে কুরআন তেলাওয়াত ও সম্প্রচার শুরু করে।
২০১৮ সালে এরদোগান কুরআন তিলাওয়াত করে সুলতান দ্বিতীয় মুহামেত সহ আয়া সোফিয়ার জন্য প্রাণ উৎসর্গ করা সকলের রুহের মাগফেরাতে কামনা মোনাজাত করেছিলেন।
উল্লেখ্য, আয়া সুফিয়া মধ্যযুগের রোম স্রামাজ্যের সাবেক রাজধানী ইস্তাম্বুলের (বর্তমান তুরস্ক) প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত একটি মসজিদ যেটি আদিতে গির্জা হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।
এটি স্থাপন করা হয়েছিল মূলত অর্থোডক্স গির্জা হিসেবে। এই স্থাপনাটি অর্থোডক্স গির্জা হিসেবে স্থাপনের পর থেকে ১২০৪ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত ব্যবহার করা হয়। এর এটিকে ক্যাথলি গির্জায় রুপান্তর করা হয় ১২০৪ খ্রিস্টাব্দে, যা ১২৬১ সাল পর্যন্ত ব্যবহৃত হয়। তারপর এটি পুনরায় অর্থোডক্স গির্জায় রূপান্তর করা হয়, যার মেয়াদকাল ১২৬১-১৪৫৩ সাল পর্যন্ত। কিন্তু এর পর মানে পঞ্চদশ শতাব্দীর মাঝামাঝি ইস্তাম্বুল মুসলিম সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত হয়।
ফলে এই স্থাপনাটিকে মসজিদে রুপান্তর করা হয়। যার নতুন নামকরণ হয় "ইম্পিরিয়াল মসজিদ", যা প্রায় ৫০০ বছর স্থায়ী হয়।
এরপর এই স্থাপনাটি ১৯৩৫ সালে আধুনিক তুরস্কের স্থপতি ও স্বাধীন তুরস্কের প্রথম রাষ্ট্রপতি "মুস্তফা কামাল আতার্তুক" যাদুঘরে রূপান্তর করেছিলেন। ডেইলি সাবাহ ও হুরিয়্যাত ডেইলি নিউজ
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা