২৮ নভেম্বর ২০২৪, ১৩ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

তুরস্কের বিপুল সৈন্য-সাঁজোয়া যান যেকোন মূহুর্তে সিরিয়ায় ঢুকবে

- ছবি : সংগৃহীত

সিরিয়ায় পশ্চিমা সমর্থিত কুর্দি মিলিশিয়াদের শক্তি খর্ব করতে এক সামরিক অভিযানের লক্ষ্যে সীমান্তে রাতভর বিপুল সংখ্যায় সৈন্য সমাবেশ এবং সাঁজোয়া যান জড়ো করেছে তুরস্ক। তুরস্কের সৈন্যদের সাথে সীমান্তে জড়ো হয়েছে তাদের সমর্থিত সিরিয়ান আরবদের বিদ্রোহী গোষ্ঠী ফ্রি সিরিয়ান আর্মির (এফএসএ) কয়েক হাজার মিলিশিয়া।

প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানের একজন মুখপাত্র ফারহেতিন আলতুন বুধবার বলেছেন, 'তুর্কি নাগরিকদের বিরুদ্ধে বহুদিনের এক হুমকির মোকাবেলায় খুব শীঘ্রই সীমান্ত অতিক্রম করবে তুরস্কের সৈন্যরা।'

তিনি ইঙ্গিত দিয়েছেন, কুর্দি মিলিশিয়াদের সামনে দুটো বিকল্প রয়েছে, হয় তারা দলত্যাগ করতে পারে, আর তা না করলে তাদের শায়েস্তা করা হবে।

‌উত্তর-পূর্ব সিরিয়ায় যুক্তরাষ্ট্র সমর্থিত কুর্দি মিলিশিয়া গোষ্ঠী এসডিএফকে তুরস্ক একটি সন্ত্রাসী গোষ্ঠী হিসাবে বিবেচনা করে। তুরস্কের ভয়, এসডিএফ তুরস্কের অভ্যন্তরে তৎপর কুর্দি বিচ্ছিন্নতাবাদীদের উস্কানি দিচ্ছে।

বিবিসির সংবাদদাতারা জানাচ্ছেন তুরস্ক ৪৮০ কিলোমিটার সীমান্ত জুড়ে সিরিয়ার অভ্যন্তরে ৩২ কিলোমিটার পর্যন্ত একটি 'সেফ জোন' বা নিরাপদ এলাকা তৈরির পরিকল্পনা করেছে।

কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে এসডিএফের সাথে তুর্কি সৈন্যদের লড়াই শুরু হয় কিনা? সোমবার হঠাৎ করে কয়েকটি ঘাঁটি থেকে যুক্তরাষ্ট্র সৈন্য প্রত্যাহার করেছে।

কুর্দি এসডিএফ কি বলছে?
তুর্কি সৈন্যরা সিরিয়ায় যেসব এলাকায় ঢুকতে পারে, সেখান থেকে দুদিন আগে মার্কিন সৈন্যরা সরে যাওয়ায় প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ হয়েছে এসডিএফ। তারা বলেছে, আইএসকে পরাজিত করতে এতদিন কুর্দিদের ব্যবহার করে যুক্তরাষ্ট্র এখন তাদের 'পিঠে ছুরি মেরেছে'।

এসডিএফ সাবধান করেছে তাদের নিয়ন্ত্রিত এলাকায় তুর্কি সামরিক অভিযানে 'চরম মানবিক বিপর্যয়' ঘটবে। এক বিবৃতিতে তারা বলেছে, "এই অভিযানে হাজার হাজার নিরপরাধ বেসামরিক লোকজনের রক্ত বইবে।"

এসডিএফ বলছে, তারা তিনদিন ধরে তুর্কি অভিযান প্রতিরোধে উত্তর-পূর্ব সিরিয়ায় মানুষজনকে একত্রিত করার প্রক্রিয়া শুরু করেছে।

আমেরিকার মিশ্র সিগনাল
তুরস্কের পরিকল্পিত তথাকথিত 'সেফ জোনের' বেশ কিছু অবস্থান থেকে রোববার হঠাৎ করে মার্কিন সৈন্য প্রত্যাহারের ঘোষণা দেওয়ার পর প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প দেশের ভেতর এবং নেটো মিত্রদের তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছেন।

সমালোচকদের বক্তব্য- এতদিনের মিত্র এসডিএফকে এভাবে বিপদের মুখে ফেলায় মিত্র হিসাবে আমেরিকার বিশ্বাসযোগ্যতা দারুণভাবে ক্ষুণ্ণ হবে। সমালোচনার মুখে, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প একের পর এক টুইটারে মিশ্র সিগনাল দিচ্ছেন।

তিনি বলেছেন, এসডিএফ আমেরিকার 'বিশেষ' বন্ধু, তাদের পিঠে ছুরি মারার প্রশ্নই আসেনা। তিনি বলেন, সিরিয়ায় ১,০০০ মার্কিন সৈন্যের মধ্যে মাত্র ৫০ জনকে অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।

আরেক টুইটে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেছেন, তুরস্ক আমেরিকার বাণিজ্যিক এবং নেটো জোটের মিত্র। তার কয়েক ঘণ্টা পরেই তিনি টুইট করেন, তুরস্ক যদি তাদের অভিযানে বেশি বাড়াবাড়ি করে, তাহলে তুরস্কের অর্থনীতি 'ধ্বংস করে দেওয়া হবে।'

আইএস বন্দিদের কি হবে?
তুরস্কের এই অভিযানের পর উত্তর-পূর্ব সিরিয়ায় কয়েকটি বন্দি শিবিরে আটক আইএস যোদ্ধা এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের কি হবে - এটাই এখন বড় চিন্তার কারণে হয়ে দাঁড়িয়েছে।

এসডিএফ নিয়ন্ত্রিত সাতটি কারাগারে ১২ হাজার সন্দেহভাজন আইএস যোদ্ধা আটক রয়েছে। এসব বন্দিদের মদ্যে চার হাজারের মত বিদেশী নাগরিক। এসব বন্দি শিবিরের অনেকগুলোই তুরস্কের সীমান্তের খুব কাছে।

এছাড়া, দুটো বন্দি শিবির - রোজ এবং আইন ইসা - যেখানে সন্দেহভাজন আইএস সদস্যদের স্ত্রী এবং পরিবারের সদস্যরা রয়েছে সেগুলো তুরস্কের 'সেফ জোনের' মধ্যে অবস্থিত।

এসডিএফকে এসব জায়গা ছেড়ে পিছু হটতে হলে- এসব বন্দি শিবিরের কি হবে- তা নিয়ে পশ্চিমাদের মধ্যে উদ্বেগ রয়েছে।

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেছেন, তিনি প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানকে বলে দিয়েছেন, সামরিক অভিযান চালালে তুরস্ককে এসব বন্দি শিবিরের দায় নিতে হবে। বিবিসি বাংলা।


আরো সংবাদ



premium cement