২৯ নভেম্বর ২০২৪, ১৪ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

যে কবিতা আবৃতির জন্য জেলে গিয়েছিলেন এরদোগান

তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়েব এরদোগান - ফাইল ছবি

হাজার দ্বীপ দিয়ে ঘেরা সুসজ্জিত তুরস্ক ভূখণ্ড। এর কিছু অংশ ইউরোপের অন্তর্গত হলেও অধিকাংশ এলাকা পশ্চিম এশিয়ায় অবস্থিত। তাই একে দ্বি-মহাদেশিক দেশ বলা হয়। দেশটি পশ্চিমে ইজিয়ান সাগর ও গ্রিস, উত্তরে বুলগেরিযা ও কৃষ্ণ সাগর, পূর্বে সাবেক সোভিয়েত রাশিয়া ও ইরান এবং দক্ষিণে ইরাক, সিরিয়া ও ভূ-মধ্যসাগর দ্বারা পরিবেষ্টিত।

সাগরবেষ্টিত উপকূল জুড়ে ব্লু-ওয়াটার বা নীল জলরাশি, গ্রিস বোট, সার্ফিং-রাইডস, সী-বোট, ডাইভিং সরঞ্জামাদি, কেনাকাটার মনোরম ও বিলাসবহুল শপিং প্লেসেস, সী-সাইড রিসোর্ট, ছুটির দিন আর আনন্দ উদযাপনের যাবতীয় ব্যবস্থা-আয়োজন দিয়েই সুসজ্জিত করে রাখা হয়েছে এখানকার সবকিছু।

এরদোগানের কবিতা সম্পর্কে জানার আগে তুরস্ক সম্পর্কে কিছু তথ্য জেনে নেয়া যাক। তুরস্কের মোট আয়তন সাত লাখ ৭৯ হাজার ৪৫২ বর্গকিলোমিটার। এর মধ্যে ২৩ হাজার ৭৬৪ বর্গ কি.মি. ইউরোপীয় অংশে এবং বাকি সাত লাখ ৫৫ হাজার ৬৮৮ বর্গ কি.মি. এশিয়ার মধ্যে অবস্থিত। ২০০১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী দেশটির জনসংখ্যা ৭ কোটি ৬ লাখ ৭০ হাজার। জনসংখ্যার ৯৮.২% ভাগ মুসলমান। দেশটির ভাষা তুর্কী এবং মুদ্রার নাম লিরা।

তুরস্কের বিশেষ বৈশিষ্ট হলো, নান্দনিক সৌন্দর্যমণ্ডিত বিশ্বসেরা মসজিদ, স্থাপত্যশিল্প, চোখ ঝলসানো মিনার, আকাশচুম্বি গম্বুজ ইত্যাদি। এগুলো তুরস্কের জাতীয় নিদর্শনে পরিণত হয়েছে। তুরুস্কে ব্যাপকহারে বাড়ছে মসজিদ। ধর্ম মন্ত্রণালয়ের পরিসংখ্যান অনুযায়ী প্রায় ৮৬ হাজার ৭৬২ টি মসজিদ রয়েছে তুরস্কে। শুধু রাজধানী ইস্তাম্বুলেই রয়েছে ৩ হাজার ৩১৭ টি মসজিদ।

সম্প্রতি তুরুস্কের ধর্ম মন্ত্রণালয় ধর্মীয় অঙ্গনে যারা কাজ করেন তাদেরকে নিয়ে ‘মসজিদ সপ্তাহ’ পালন করেছে। সভ্যতা-সংস্কৃতি বিস্তারের ক্ষেত্রে মসজিদের ঐতিহাসিক ভূমিকা ও গুরুত্ব কী ছিল তা সম্পর্কে জনগণকে অবহিত করাই ছিল এর মূখ্য উদ্দেশ্য।

প্রতিবছরই এ ধরনের মসজিদ সপ্তাহ পালন করা হয় তুরস্কে। এর যাত্রা শুরু হয়েছে ২০০৩ সালে। মসজিদের কার্যক্রমে বৈচিত্র আনা, মসজিদের পাশে পাঠাগার গড়ে তোলা, মসজিদে শিক্ষামূলক বিভিন্ন সেমিনারের আয়োজন করা ইত্যাদি কার্যক্রমসহ প্রতিবছরই নতুন নতুন চিন্তা ও পরিকল্পনা করা হয় এসব অনুষ্ঠানে।

উল্লেখ্য, মসজিদ নিয়ে কবিতা আবৃত্তি করার কারণে ১৯৯৮ সালে জেল খেটেছিলেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়েব এরদোগান। তিনিই এখন এই মসজিদের দেশটিকে শাসন করছেন।

তুরস্কের টানা তিনবারের প্রধানমন্ত্রী সরাসরি ভোটে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন। ১৯২৩ সালে তুর্কি প্রজাতন্ত্র যাত্রা শুরুর পর তিনি হলেন ১৮তম প্রেসিডেন্ট । রাজনীতিতে আসার আগে এরদোগান পেশাদার ফুটবলার এবং একটি ট্রান্সপোর্ট কোম্পানিতে চাকরি করেন। তার রাজনৈতিক জীবন শুরু হয় নাজমুদ্দিন আরবাকানের নেতৃত্বাধীন ন্যাশনাল সালভেশন পার্টির (মিল্লি সালামত পার্টি) মাধ্যমে।

এরদোগান ১৯৮৫ সালে রাফাহ পার্টির ইস্তাম্বুল প্রদেশের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯১ সালের নির্বাচনে ইস্তাম্বুল প্রদেশ থেকে জাতীয় পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৯৪ সালের ২৭ মার্চ তুরস্কের স্থানীয় নির্বাচনে রাফাহ পার্টি সর্ববৃহৎ রাজনৈতিক দল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। এ নির্বাচনে এরদোগান ইস্তাম্বুলের মেয়র এবং গ্রেটার মেট্রো ইস্তাম্বুল মেট্রোপলিটন কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন।

তার জনকল্যাণমূলক কর্মসূচির কারণে মেয়র হিসেবে তিনি জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন। ১৯৯৭ সালের ১২ ডিসেম্বর দক্ষিণ তুরস্কে এক জনসভায় তুর্কি জাতীয়তাবাদী কবি জিয়া গোকাল্পের একটি কবিতার উদ্ধৃতি দিয়ে আলোচনায় ঝড় তোলেন। কবিতাটি ছিল এ রকম Mosques are our barracks. domes our helmets, minarets our bayonets, belevers our soliders. এ কবিতা আবৃত্তির দায়ে তৎকালীন তুর্কি সেকুল্যর সরকার তাকে আটক করে দণ্ডিত করে।

এরদোগানের দল ২০০২ সালের নভেম্বরে পার্লামেন্ট নির্বাচনে জাস্টিস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টি একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। বিজয়ী হয়েও আইনগত নানা প্রক্রিয়ার কারণে এরদোগানের প্রধানমন্ত্রী হওয়া বিলম্বিত হয়। অবশেষে ২০০৩ সালের ১৪ মার্চ তিনি তুরস্কের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করেন। কারণ মেয়র থাকা অবস্থায় কবিতা পড়ার কারণে তিনি শাস্তি ভোগ করছিলেন।

আর এ কারণে নির্বাচনে অংশ নিতে পারেননি। তার শাস্তির মেয়াদ শেষ হলে এবং বর্তমান পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুল্লাহ গুল তার আসন থেকে পদত্যাগ করলে সে আসনে উপনির্বাচনে প্রার্থী হন এরদোগান। নিবাচিত হয়ে তিনি পার্লামেন্টে আসেন। এরপর তিনি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন। পরবর্তীতে আরো দুদফায় প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন। তার নেতৃত্বে একে পার্টি তুরস্কের স্থানীয় সরকার নির্বাচনে বার বার বিজয়ী হয়ে আসছে। যে কবিতাটি আবৃত্তি করে তিনি জেলে গিয়েছিলেন তা এখানে তুলে ধরা হলো:

সেনাবাহিনীর জন্য দোয়া

জিয়া গোকাল্প



হাতে হাতিয়ার, অন্তরে ঈমান
আমার চাওয়া দু’টি, দ্বীন এবং ওয়াতান
আমার ঘর সেনা ক্যাম্প, আমার নেতা মহান সুলতান
সুলতানকে রক্ষা করো হে ইয়া রব
তার হায়াত দীর্ঘায়িত করো হে রব



আমাদের পথ গাজীর, শেষ ইচ্ছা শাহাদাত
আমাদের ধর্ম সততার সাথে সেবা করা
ওয়াতান আমাদের মা, বাবা আমাদের মিল্লাত
ওয়াতানকে সমৃদ্ধ করো হে রব
মিল্লাতকে সুখি করো হে রব



তোমার পতাকা তাওহিদের, আমার পতাকা হেলাল
একটি সবুজ, একটি অন্যটির পরিপূর্ণ
ইসলামের ব্যথায় ব্যথিত করো, দুশমন থেকে প্রতিশোধ নেয়ার তাওফিক দাও
ইসলামকে রক্ষা করো হে রব
দুশমনদের ধ্বংস করো হে রব

 


যুদ্ধের ময়দানে দাও সাহসী বীর ও সেনাপতি
যে দ্বীন এবং দেশের জন্য শহীদ হবে
যে হবে অগ্নিশিখা, যুদ্ধের ময়দানে থাকবে শেষ পর্যন্ত
শহীদদের কবুল করো হে রব
পরিবারদের দুর্বল হতে দিয়ো না হে রব



কমান্ডার, অফিসার আমাদের পিতা
সার্জেন্ট, ওমবাস আমাদের নেটওয়ার্ক
শৃঙ্খলা এবং সম্মান আমাদের কানুন
সেনাবাহিনীকে শক্তি দাও হে রব
পতাকা সুউচ্চ রাখো হে রব



মিনার আমাদের বেয়োনেট, গম্বুজ আমাদের হেলমেট
মসজিদ আমাদের ব্যারাক, মোমিনরা আমাদের সৈন্য
আমরা দ্বীনি যুদ্ধের জন্য অপেক্ষায়
আল্লাহু আকবর আল্লাহু আকবর
আল্লাহু আকবর আল্লাহু আকবর


আরো সংবাদ



premium cement