২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

ঘুমকাতুরে হাবলু

-

দীর্ঘ দিনের অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে বিয়ের পিঁড়িতে বসতে চলেছে হাবলু ভাই। এই নামের জটিলতায় বেশ কয়েকটা বিয়ে ভেঙে যায়। সে জন্য বন্ধুবান্ধবদের অনেক অনুরোধ করা হয়েছিল; কিন্তু কে শোনে কার কথা পাড়াপড়শি সবার মুখে এক নাম হাবলু। যখনই পাত্রীপক্ষ থেকে খোঁজ নিতে আসতো হাবলু নাম শুনে ভাবতো ছেলে হাবাগোবা আর তখনই বিয়ে ভেঙে যেত।
এই নিয়ে নানান জটিলতায় বয়স প্রায় ত্রিশ পার হতে চলল তবুও বিয়ের খোঁজ নেই। অনেক চেষ্টা করে বন্ধুবান্ধব-পাড়াপড়শির মন ভালিয়ে ভুলিয়ে নতুন করে নাম রাখলো চৌধুরী হাবলু।
এবার বিয়ের সম্বন্ধ এলো। চৌধুরী হাবলু ভাইকে পাত্রীপক্ষের ভীষণ পছন্দ হলো। হাবলু ভাই ভীষণ স্মার্ট। পছন্দ না করে উপায়ও নেই। এত দিন ওই নামের জটিলতার কারণে বিয়ে যদিও আটকে ছিল। এবার সেটি হওয়ারও কোনো সম্ভাবনা নেই। তবে এটা ঠিক রাত ১০টার পর হাবলু ভাই অর্থাৎ চৌধুরী হাবলুকে কোনোক্রমেই জাগনা পাওয়া যায় না। কারণ চৌধুরী হাবলু ভীষণ ঘুমকাতুরে।
অনেক কষ্টের পর বিয়েটা এবার হতে যাচ্ছে। কোনো রকম ভুলত্রুটি হওয়া যাবে না। তাহলে আবারো বিয়ে ভাঙার সম্ভাবনা ৯৯ শতাংশে গিয়ে দাঁড়াবে।
যাই হোক চৌধুরী হাবলু এবার ভীষণ সজাগ, কোনোক্রমেই কোনো রকম ভুলত্রুটি হবে না।
অবশেষে বিয়ের দিন ঠিক হলো। সব রকমের আয়োজন প্রায় সম্পন্ন। বিয়ের দু’দিন আগে কী করল চৌধুরী হাবলু ভাইয়ের হবু বউ, তার হবু স্বামীর কোনো প্রেমপিরিতি আছে কি না এসব পরীক্ষা করার জন্য ফোন করল। বেশ কিছুক্ষণ কথা হলো হবু ভাবী কিছু আন্দাজ করতে পারলেন না।
এটাই আবার খটকা লাগল। ভাবল এত স্মার্ট একটা ছেলে সে প্রেম করেনি! বিশ্বাস করতে কেমন যেন মনটা খচখচ করছিল। তাই পরের দিন অর্থাৎ বিয়ের আগের দিন রাতে এসএমএস করল হবু ভাবীÑ
ভালো আছো?
হ্যাঁ।
খেয়েছ?
হ্যাঁ।
খাওয়ার আগে হাত ধুয়েছিলে?
হ্যাঁ
খাওয়ার পর হাত ধুয়েছিলে?
হ্যাঁ।
এভাবে একের পর এক প্রশ্ন করেই যাচ্ছে। হাবলু ভাই কোনো প্রশ্ন করার সুযোগই পাচ্ছে না। এ দিকে রাত প্রায় ১টা বাজতে চলল। যে মানুষ রাত ১০টার পর ঘুমাতে অস্থির হয়ে পরে সেখানে ১টা বেশ অসম্ভব ব্যাপার।
হাবলু ভাই তবুও কিছু বলতে পারছে না। যদি হবু বউ কিছু মনে করে। ওদিকে হবু বউ ভাবছে তার হবু স্বামী এত রাত অবদি তার সাথে কথা বলছে এমন অভ্যেস নিশ্চয়ই আগের, কোনো মেয়ের সাথে এভাবেই কথা বলেছে।
হাবলু ভাইয়ের হবু বউ যতটা প্রশ্ন করেছে সব উত্তর হ্যাঁ দিয়েই উত্তর করার মতো।
তখন হাবলু ভাই ভাবল, ফোনটা হাতে রেখে ভাইব্রেশন মুডে রেখে একটু ঘুমাই। যখনই এসএমএস আসবে হাতে ফোনটা কাঁপলেই এসএমএস না পড়েই উত্তর দেবো যেহেতু সব উত্তরে হ্যাঁ লিখতে হয় ওসবেও হ্যাঁ লিখে দেবো ব্যস।
তারপর ঘটল আসল ঘটনা। যখন ফোন হাতে রেখে ভাইব্রেশন মুডে রেখে ঘুমিয়েছে তখন হবু ভাবী এসএমএস করেছিল আচ্ছা আপনার কি কোনো প্রেমিকা আছে?
উত্তরে লিখেছিলÑ হ্যাঁ।
আবার বলেছিল তার সাথে কি আপনার যোগাযোগ এখনো আছে?
ফোন কাঁপতেই এসএমএস না পড়ে হাবলু ভাই আবার উত্তর করেছিলÑ হ্যাঁ।
ভাবী আবার বলেছিলÑ
আচ্ছা আপনি তাকে এখনো ভালোবাসেন?
উত্তরে হাবলু ভাই লিখেছিল, হ্যাঁ।
হবু ভাবী লিখেছিল বিয়ের পরও তার সাথে প্রেম করবেন?
উত্তরে হাবলু ভাই লিখেছিল, হ্যাঁ।
তারপর আর কোনো এসএমএস করেনি। হাবলু চৌধুরীও ঘুমিয়ে গেল। বিয়ের দিন সকালে কনে সব ঘটনা বাড়ির লোককে জানিয়ে এবং ঘটককেও জানিয়ে দিলোÑ এ বিয়ে আর হচ্ছে না। কারণ ছেলের প্রেমিকা আছে।
তারপর ঘটক সব ঘটনা শুনে চৌধুরী হাবলুকেও জানিয়ে দিলো বিয়ে আর হচ্ছে না। কারণ জানতে চাইলে মোবাইল ফোনের এসএমএস ঘেঁটে দেখার কথা বলা হলো। অবশেষে চৌধুরী হাবলু বুঝতে পারল, ঘুমে মগ্ন থাকাই তার বিয়ে ভাঙার অন্যতম কারণ। হ

 


আরো সংবাদ



premium cement