ওগো বিদেশিনী
- আমজাদ হোসেন বাপ্পি
- ১২ মার্চ ২০২০, ০০:০০
মহানগর এক্সপ্রেস ট্রেনটি ছাড়ার অপেক্ষায়। ৯টা ২০-এ যাত্রা শুরু হবে। এখনো ১০ মিনিট বাকি আছে। এ সময়টায় সেলিম প্লাটফর্মে দাঁড়িয়ে সিগারেট ফুঁকছে। উদ্দেশ্য চট্টগ্রাম যাবে চাকরির আশায়। তার এক মামা থাকে আগ্রাবাদে। বিশাল কাজ কারবার। অনেক পয়সাকড়ি করে ফেলেছে অল্প সময়ে। আগ্রাবাদ গোল চত্বরের পাশে আখতারুজ্জামান শপিংমলের সেকেন্ড ফ্লোরে মামার বিশাল কাপড়ের শোরুম। সম্ভবত ওই শোরুমের ইনচার্জ হিসেবে তাকে নিয়োগ দেয়ার সম্ভাবনা আছে। যদিও সেলিম এখনো সঠিক করে কিছুই জানে না।
মহানগর এক্সপ্রেসের বিরতিহীন হুইসেল শোনা যাচ্ছে। ট্রেনও কচ্ছপ গতিতে এগোচ্ছে। সেলিম সিগারেট ফেলে কাঁধের ব্যাগ ঠিক করে গ বগিতে এক লাফে উঠে গেল। সেলিমকে নিয়ে ট্রেন ছুটে চলেছে আপন গতিতে।
২.
সেলিম টিকিট হাতে নিয়ে সিট খুঁজতে থাকল। বগির সরু পথ মাড়িয়ে কাক্সিক্ষত সিটে এসে থামল সে। নিজের সিটে বসতে যাবে ওই মুহূর্তে আশ্চর্য হয় সেলিম। তার পাশের সিটে ধবধবে ফর্সা একটি মেয়ে বসা। বাইরে আলো আঁধার পথের দিকে তাকিয়ে আছে সে। এমন সুন্দরী একজনের সিট তার পাশে পড়বে এটা কোনোভাবেই বিশ্বাস হচ্ছে না সেলিমের। সে আবার পকেট থেকে টিকিট বের করে সিট নাম্বার মিলিয়ে নিলো। হ্যাঁ ঠিকই তো আছে। নিজেকে কোনোভাবে সামলে নিয়ে, মনের আনন্দ চাপা রেখে খুব সাবধানী হয়ে পাশে গিয়ে বসল। ফর্সা করে মেয়েটি সাপের ফণার মতো ফোঁস করে সেলিমের দিকে ফিরল। ভ্রƒ বাঁকিয়ে আবার বাইরে তাকিয়ে রইল। বাতাসে তার চুল উড়ছে।
সেলিম আরো বেশি আশ্চর্য হলো। মুগ্ধ নয়নে মেয়েটির দিকে চেয়ে রইল। এখন সে বুঝতে পারল মেয়েটি আসলে বিদেশী। এ জন্যই মেয়েটি অস্বাভাবিক ফর্সা। মনে মনে ভাবে সেলিম। নিজেকে নিজে প্রশ্ন করে, ‘আচ্ছা। মেয়েটির দেশ কোথায় হতে পারে?’
আবার নিজে নিজে উত্তর করে, ‘হু... ইউরোপ-আমেরিকা! না না! ইউরোপ-আমেরিকার মেয়ে এমন নয়। এর দেশ হংকং সিঙ্গাপুর এরকম কিছু একটা হবে! আরে ধুর! যে দেশই হোক। আমার সাথে মানাবে। এ দেশে থেকে আমার কিছুই হবে না! এ দেশে কী আছে। কিচ্ছু নাই। আর দেশের মেয়েগুলোও পুরাই ক্ষেত! নাক বোঁচা, শ্যামলা বেঁটে খাটো! আমার সাথে মানাবে না!’
সেলিম মতলব করে। চট্টগ্রাম পৌঁছতে কমপক্ষে ৭-৮ ঘণ্টা বাকি। এ সময়ের মধ্যে মেয়েটাকে তার পটাতেই হবে। কোথাকার কোনো মামা না টামা। ওখানে গিয়ে কে করবে কাপড়ের শোরুমে চাকরি। অথচ তার পাশেই সোনার হরিণ বসে আছে। এ বিদেশিনীকে বিয়ে করে সে প্লেন চড়বে। ফাইভ স্টার হোটেলের সুইমিংপুলের পাশে ছাতাওয়ালা বেঞ্চে বসে স্ট্র দিয়ে অরেঞ্জ জুস খাবে!
আহারে নিজের দেশের জন্য একটু মায়া লাগবে তবে ব্যাপার না, পরে মানিয়ে যাবো! এসব ভেবে চোখে জল চলে এলো সেলিমের। দূর থেকে দেখা যায় ট্রলি ঠেলে ক্যান্টিনের বয় চা চা করে সামনে এগোচ্ছে। এখনি সুযোগ। মেয়েটিকে চায়ের অফার করে কথা বলে আদ্যপ্রান্ত জানতে হবে।
হ্যালো ম্যাম বলে হাতের ইশারা দিয়ে চা খাওয়াত ইঙ্গিত করে সেলিম! বিদেশী মেয়েটি মাথা নাড়িয়ে ভাঙা ভাঙা গলায় বলে, ‘না, খাবো না। আপনি খান!’
‘আরে আপনি তো দেখছি ভালোই বাংলা রপ্ত করে ফেলেছেন!’
‘জ্বি! জ্বি! একতু একতু ফারি!’
‘তা ম্যামের নাম?’
‘আমার নাম পাউলি!’
সেলিমের চোখে-মুখে আনন্দ বহু গুণ বেড়ে গেল। অতি উৎসাহী হয়ে আবার জানতে চাইল, ‘ইউ ফ্রম সিঙ্গাপুর?’
মেয়েটি মুখ বাঁকিয়ে চোখ বড় বড় করে বলল, ‘না না। আমার বাড়ি তো বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়িতে!’
এ কথা শুনে সেলিম দুঃখে ২০ মিনিট অজ্ঞান হয়ে ছিল। হ