২১ নভেম্বর ২০২৪, ৬ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ১৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

অবাধ্য ছেলে

-

আমি পরীক্ষা দেবো না শুনে আব্বার মাথায় যেন বাজ পড়ল। শাসন নয়, বরং আদরের সুরে কাছে টেনে বললেন, ‘পরীক্ষাটা দে বাপ।’
কিন্তু আমাকে বোঝানো মুশকিল। একে তো পড়ালেখায় আমার মন নেই, তার ওপর পরীক্ষার প্রস্তুতিও নেই। খাতায় কী লিখব! আব্বা আবার আদরের সুরে বললেন, ‘পরীক্ষার আরো সাত দিন বাকি, এখনই পড়ায় মন দে বাপ।’
ওহ, পড়েছি মহাবিপদে। পড়ালেখা কখনো ভালো লাগে না আমার। এখনো জোর করে স্কুলে পাঠানো হয়। সন্ধ্যায় মা পড়ার টেবিলে বসান কান ধরে, আর হোমটিচার এলে তো আমার ‘ছাইড়া দে মা কাইন্দা বাঁচি’ অবস্থা। এত কিছুকে গুরুত্ব যে দেবে, তার দ্বারা কখনো লেখাপড়া সম্ভব নয়। মোটকথা পড়ালেখায় চিরকাল আমার অনীহা।
আমার সেই অনীহা চরমে দেখে আব্বা বললেন, ‘এবার পরীক্ষাটা দিলে তোকে ৫০০ টাকা দেবো।’
৫০০ টাকা! বাপরে বাপ। মুহূর্তেই লোভ আমাকে পেয়ে বসল। টাকা পয়সার দিকে আমার লোভ তো পুরনো ব্যাপার। এ কথা আব্বা সম্ভবত জানেন। জানেন বলেই এখন ৫০০ টাকার লোভ দেখাচ্ছেন। কিন্তু কেন জানি মনে হলোÑ আব্বা আমাকে পরীক্ষার পর ৫০০ টাকা দেবেন না।
‘টাকাটা দেবেন তো?’
‘দেবো।’
‘তাহলে পরীক্ষা দিতেই হবে?’
‘দোহাই বাপ।’
আব্বা আমাকে রাজি করাতে পারলেন। ৫০০ টাকার বিনিময়ে আমি পরীক্ষা দেবো, এই আনন্দে আব্বা আত্মহারা।

২.
আজ পরীক্ষার শেষ দিন। দুপুরে পরীক্ষার হল থেকে বেরিয়ে এলাম শত শত স্টুডেন্টকে অতিক্রম করে। স্কুল গেটের সামনে আব্বা আমার অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে। দুপুরের গরম রোদে ভিজে আব্বার সারা শরীর জুবথবু। তা দেখে কোথায় আমার মায়া হবে, তা না, আমি বরং ৫০০ টাকার লোভে আব্বার পাশে গিয়ে দাঁড়ালাম।
‘পরীক্ষা ভালো দিয়েছিস আব্বা?’
‘জি। এখন টাকা দেন।’
‘কিসের টাকা?’
‘৫০০ টাকা। ৫০০ টাকার দেবেন বলে আমাকে যে পরীক্ষা দেয়ালেন, সেই টাকা।’
‘না, না। তা হবে না।’
‘মানে?’
‘তুই তোর পরীক্ষা দিয়েছিস, পাস করলে তুই করবি। আমি টাকা দেবো কেন?’
‘তার মানে টাকাটা দেবেন না?’
‘নো। নেভার।’
‘আমি জানতাম টাকাটা আপনি দেবেন না। তাই আমিও পরীক্ষার খাতায় কিছুই লিখিনি।’
‘কী বলছিস!’
‘জি আব্বা। হি হি হি...
আমি হাসছি। পরীক্ষার খাতায় কিছু লিখিনি, এই সত্য জেনে আব্বার মুখের হাসি চলে গেল। তাতে আমার মন গলছে না। অবাধ্য ছেলেদের মন কী এত সহজে গলে! হ

 


আরো সংবাদ



premium cement