০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ অগ্রহায়ন ১৪৩১,
`

ভালোবাসার এইতো সময়

-

রাত ১২টায় সুপ্রিয়া ফেসবুকে মেসেজ দিয়ে লিখেছে, ‘কালতো ভালোবাসা দিবস। আমাকে নিয়ে তোমার পরিকল্পনা কী?’
রিপ্লাইয়ে লিখলাম, ‘তোমাকে নিয়ে সকাল ১০টায় ন্যাশনাল পার্কে ঢুকব। সারাদিন প্রেমের আড্ডা দিয়ে দুপুরে ভালো কোনো রেস্টুরেন্টে খাবো।’
আমার মেসেজ পড়ে সন্তুষ্ট হয়ে সে লিখেছে, ‘থ্যাংক্স।’ তারপর ভালোবাসার লম্বা লম্বা মেসেজ আদান প্রদান করতে করতে রাত দেড়টায় চোখে ঘুম নেমে এলো।
ঘুম ভাঙল সকাল ৮টায়। ফ্রেস হয়ে নাশতা সেরে ভালো পোশাক পরে রওনা দিলাম ন্যাশনাল পার্কের উদ্দেশে। পকেটে হাত দিয়ে দেখি মাত্র বিশ টাকার একটি নোট। আজ ভালোবাসার একটি বিশেষ দিন। সুপ্রিয়াকে না হয় কিছু গিফট করব না, কিন্তু ভালো কোনো রেস্টুরেন্টে নেয়া তো দরকার। টাকা পাবো কোথায়! চুপি চুপি আব্বার ঘরে গেলাম। আব্বার পাঞ্জাবির পকেট থেকে চুরি করে ৫০০ টাকার একটি কচকচে নোট নিয়ে বের হলাম। এই প্রথম আমি আব্বার পকেট থেকে টাকা মেরেছি। ভালোবাসার জন্য আমি সব করতে পারি।
২.
ন্যাশনাল পার্কে আজ জোড়ায় জোড়ায় টোনাটুনি বসে আছে। আজ ভালোবাসা দিবস বলে কথা। এত টোনাটুনির মাঝে সুপ্রিয়াকে খুঁজে নিতে আমার অসুবিধা হয়নি। সাজসজ্জায় সুপ্রিয়াকে আজ ডানাকাটা পরীর মতো লাগছে। আমি সুপ্রিয়ার পাশে বসে বললাম, ‘আজ তোমাকে নিয়ে ভালো কোনো রেস্টুরেন্টে খাবো।’
আমার কথা শুনে সে খিলখিলিয়ে হেসে উঠল। ঠিক তখনই একটি ভিক্ষুক ছেলের আগমন।
Ñভাইজান, ১০০ টাকা সাহায্য করেন।
Ñ১০০ টাকা! বলো কী?
Ñআজকে প্রেম করার দিন। এই উপলক্ষে ১০০ টাকা দেন।
Ñতাই বলে ১০০ টাকা?
Ñজি ভাই। আজ একটু বাসে করে বাড়ি যাবো।
Ñএখন যাও। ১০০ চাকা ভাংতি নেই। ৫০০ টাকা আছে।
Ñতাহলে ৫০০ টাকা দেন ভাই। বাসের বদলে সিএনজিতে করে বাড়ি যাবো।
Ñহোয়াট?
ভিক্ষুক ছেলেটির সাথে আমার তর্ক বাড়ার উপক্রম দেখে সুপ্রিয়া বলল, ‘এই দাও তো। ওকে বিদায় করো। ৫০০ টাকা দিয়ে দাও।’
চোখ কপালে তুলে বললাম, ‘বলো কী?’
সুপ্রিয়া কোনো কিছু বলার আগেই ভিক্ষুকটি বলল, ‘দেখছেন ভাইজান, আপনার মনের মানুষ বলছে ৫০০ টাকা দিতে। আর আপনি দেন না। কেমন প্রেমিক আপনি?’
ভিক্ষুকটাকে জোরসে একটা ধমক দেয়ার আগেই সুপ্রিয়া আমায় থামিয়ে দিয়ে আমার শার্টের পকেট থেকে ৫০০ টাকা বের করে ভিক্ষুকটাকে দিয়ে বলল, ‘যাও তো এবার।’
ভিক্ষুক মহানন্দে টাকা নিয়ে চলে গেল।
হায় হায়! এখন কী হবে! পকেটে যে কোনো টাকাই নেই। বিশ টাকা ছিল, সেটা ভাড়ায় খরচ হলো। সুপ্রিয়াকে নিয়ে রেস্টুরেন্টে যাবো কিভাবে!
৩.
ন্যাশনাল পার্কে সুপ্রিয়াকে নিয়ে নানা গল্প গুজবে যখন ভরদুপুর, সুপ্রিয়া বলল, ‘চলো এবার রেস্টুরেন্টে যাই। ক্ষুধা পেয়েছে।’
আমার বুক ধক করে উঠল। কী হবে এখন! টাকা পাবো কই?
আমরা এখন আমানিয়া রেস্টুরেন্টের সামনে। কী হবে জানি না। অভিজাত এই রেস্টেুরেন্টে খেলে কী পরিমাণ বিল আসবে, তা ভেবে আমার হাত পা ঠাণ্ডা হয়ে এলো। সুপ্রিয়াকে নিয়ে রেস্টুরেন্টে আসবো, এ কথা কেনো যে আগেভাগে বলতে গেলাম!
আমার হাত ধরে টেনে সুপ্রিয়া বলল, ‘অ্যাই চলো না, এখানে হ্যাবলার মতো দাঁড়িয়ে কী দেখছ? আমাকে কিন্তু আজ চাইনিজ খাওয়াতে হবে।’
চাইনিজের কথা শুনে মনে হলো এখনই মাথা ঘুরে পড়ে যাবো। হঠাৎ সুপ্রিয়ার মোবাইলটা বেজে উঠল। রিসিভ করেই সুপ্রিয়া বলল, ‘আম্মা, আমি আমার বান্ধবীর বাসায়। চলে আসব... হোয়াট? কী বললে, মাহবুব ভাইয়ার ডায়রিয়া শুরু হয়েছে? হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছ? দাঁড়াও আমি এখনই আসছি।’
সুপ্রিয়া মোবাইল ব্যাগে ভরে উদ্বিগ্ন গলায় বলল, ‘আজ আর চাইনিজ খাওয়া হবে না। আমার ভাইয়ের ডায়রিয়া। হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছে। আমি আসি।’
সুপ্রিয়ার কথা শুনে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে বললাম, ‘যাও, জলদি যাও। চাইনিজ পরে। আগে ডায়রিয়া রোগীকে সুস্থ করো।’ সুপ্রিয়া হিল জুতায় ঠকঠক আওয়াজ তুলে চলে যাচ্ছে। আমি মনে মনে ধন্যবাদ জানাই ডায়রিয়া রোগীকে।

 


আরো সংবাদ



premium cement
যাত্রাবাড়ী থানার সাবেক ওসি আবুল হাসান গ্রেফতার সাভারে দাফন করা ব্যক্তিই হারিছ চৌধুরী তদন্ত প্রতিবেদনসহ আমু-কামরুলকে ১৭ ডিসেম্বর ট্রাইব্যুনালে হাজিরের নির্দেশ দেশের ৬৯ কারাগারের মধ্যে অতি ঝুঁকিপূর্ণ ১৭ : কারা মহাপরিদর্শক আমরা হিন্দু-মুসলমান একসাথে লড়াই করে দিল্লির দাসত্বকে খান খান করে দেবো : রিজভী আজমির শরিফ : খাজা মইনুদ্দিন চিশতির দরগাহের ইতিহাস জাতিসঙ্ঘ নিরাপত্তা পরিষদে রাশিয়া ও আমেরিকার বাকবিতণ্ডা ‘শেখ হাসিনা সরকার সবকিছু ধ্বংস করে গেছে’ পুলিশের ওপর হামলার মামলায় ১২ আসামির রিমান্ড মঞ্জুর দেনার দায়ে শক্ত অবস্থান হারাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র? বাংলাদেশ কঠিন সময় পার করছে : প্রধান উপদেষ্টা

সকল