২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

পাল্টা জবাব

-

 

তীব্র কুয়াশা ভেদ করে বকুল মিয়াকে রোজ রোজ অফিস যেতে হয় ভাবতেই যেন কষ্টে চোখের জল বাধ মানছে না।
কিন্তু উপায় নেই যে। চাকরিটা ছেড়ে দিলে বউয়ের প্রতি মাসে হাত খরচ, শাড়ি, গয়না আর পার্লারে যাওয়ার টাকাটা কিভাবে জোগাড় হবে। বিয়ের পর থেকে অভাব অনটন লেগেই আছে আর থাকবে নেই বা কেন, যা বেতন পায় সেটা দিয়ে বউ বিলাসিতা করে বেশি কিছু বললেই বাপের বাড়ি চলে যায়।
এক বছরে সাতবার ছুটি নিয়েছে বকুল মিয়া। একমাত্র কারণ তার গুণবতী স্ত্রী। একটু উচ্চস্বরে কথা বললেই বাপের বাড়ি গিয়ে বসে থাকে হাত-পা পুড়িয়ে কত দিন রান্না করে খাওয়া যায় অগত্য ছুটি নিয়ে শ্বশুরবাড়ি গিয়ে ভুলিয়ে ভালিয়ে নিয়ে আসতে হয়।
যাক সে কথা। সে দিন বিকেলে শ্বশুরবাড়ির লোক এসে দাওয়াত করে গেল। এক শ্যালিকার বিয়ে। বিয়ের কথা শুনে মাথায় বাজ পড়ল কারণ আবার ও নতুন শাড়ি গয়না আরো কত কিছু লাগবে।
মাসের মাঝামাঝি সময় হতে তেমন টাকা পয়সা নেই কিন্তু না গিয়েও উপায় নেই যা হোক ধার করে টাকা পয়সা নিয়ে বেশ একটা কেনাকাটা করে রওনা দিলো দু’জনে। বকুল মিয়ার মনটা বেশ ফুরফুরে লাগছে টাকা ধার হোক সমস্যা নেই কিন্তু বিয়ে বাড়ির আয়োজন দেখে খুশিতে গদগদ করছে মনটা।
অনেক লোক এসেছে। সন্ধ্যার দিকে বকুল মিয়ার বউ ও তার চাচাতো মামাতো ফুফাতো আরকি যত তো-জাতীয় বোন ছিল সবাই বসে গল্প করছে। কার স্বামী কতটা কিপ্টে। মোট কথা স্বামীদের দোষ নিয়ে আলোচনার পর আলোচনা চলছে আর চলছে।
ঠিক সেই সময় বকুল মিয়া উপস্থিত হয়েই তার নামে বদনাম শুনলে। তিনি নাকি প্রচুর কিপ্টা। এতটাই কিপ্টা যে তরকারিতে লবণ তেল সব কম দিতে বলেন। এসব শুনে মাথায় যেন রক্ত উঠে গেল। বলে কী যার জন্য করলাম চুরি সেই বলে চোর। চিৎকার করে বলেই ফেলল, আরে আরে বলে কী? তোমার গ্যাস হবে বলে তেল কম দিতে বলেছি। তা ছাড়া লবণ একটু কম খাই তাই কম দিতে বলেছি। এতে কিপ্টামির কী আছে।
বকুল মিয়ার বউ বলে, হইছে থাক আর বলতে হবে না। চোরের মায়ের আবার বড় গলা।
একটা কথার চটাচটি করে চলে গেল বকুল মিয়া।
অন্য ঘরে এবার ছেলেরা গবেষণা করছে। তাদের বউ কেমন? এক পর্যায়ে বকুল মিয়া বলে ফেলল, এদের বাড়ির মেয়েদের শাসন হয়নি। একদম বেপরোয়া ব্যবহার। যার নুন খায় তার গুনগান একটুও করে না।
এই কথাটা শ্বশুর শুনতে পেরে মেয়েদের সাথে প্রচুর রাগ হলো। ওই দিক থেকে বকুল মিয়ার বউ এসে বলল, তুমি যার বাড়িতে এসে খাচ্ছো দাচ্ছো আবার সেই বাড়িরই বদনাম করছ। ছিঃ ছিঃ ছিঃ!
তোমার একটুও বিবেক বোধ নেই। যার নুন খাচ্ছো তারই বদনাম করছ।
আরে আমি তো কিপ্টা নুন খেতেও আমার এলার্জি। নুন কখন খেলাম আর গুনগান করব কিভাবে। আমি তো খেয়েছি বিরিয়ানি সে ক্ষেত্রে বদনাম করতেই পারি।

 


আরো সংবাদ



premium cement