বাণিজ্যমেলায় এক দিন
- তারেকুর রহমান
- ১৬ জানুয়ারি ২০২০, ০০:০০
বাণিজ্যমেলায় নিয়ে যাওয়ার জন্য মতি ভাইয়ের স্ত্রী ঘ্যানর ঘ্যানর করছে। মতি ভাই অবশ্য তার কথায় পাত্তা দিচ্ছেন না। মতি ভাইয়ের কাছে এসব আহ্লাদের কোনো দাম নেই। কারণ অতীত বড়ই বেদনাদায়ক। গত বছর বাণিজ্যমেলায় স্ত্রীকে নিয়ে গেলে খুব কঠিন অবস্থায় পড়তে হয়েছে। পকেটে অবস্থা কাহিল করে ছেড়েছিল। মতি ভাই তখন থেকে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, আর যাই হোক স্ত্রীকে নিয়ে বাণিজ্যমেলায় যাবেন না। কয়েক দিন থেকে তার স্ত্রী ইনিয়ে-বিনিয়ে নানাভাবে বাণিজ্যমেলায় যাওয়ার ব্যাপারে মতি ভাইকে রাজি করানোর চেষ্টা করছে। বাণিজ্যমেলায় গেলে কী কী সুবিধা পাওয়া যাবে তার একটা লিস্টও মতি ভাইকে ধরিয়ে দেয়া হয়েছে। মতি ভাই লিস্টে একবার চোখ বুলিয়ে ছিঁড়ে ফেলে দেন। মতি ভাই ভালো করেই জানেন তার স্ত্রীর কাছে এসব লিস্ট এক ধরনের চালাকি। একবার কোনোভাবেই বাণিজ্যমেলায় যেতে পারলে প্রয়োজনীয় ও অপ্রয়োজনীয় জিনিস কিনে একাকার হয়ে যাবে। মতি ভাইয়ের সিদ্ধান্ত হলো এবার তিনি একা একা বাণিজ্যমেলায় যাবেন।
বেশ পরিপাটি হয়ে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে আছেন তিনি। মাথায় যে ক’টা চুল আছে তা আঁচড়িয়ে নিচ্ছেন। চুল নিয়ে তার অনেক কষ্ট। ওসব ভুলে যেতে চান। এখন মাথার ওপর গুটিকয়েক চুল রয়েছে। হয়তো আরো কয়েক বছর পর এটাও হারিয়ে যাবে। মতি ভাই মাথার পেছনে যে অল্প কয়েকটা চুল আছে তা বড় রাখার চেষ্টা করেন। এগুলো চিরুনি দিয়ে টেনে মাথা ঢেকে রাখার চেষ্টা করেন। বাসা থেকে বের হওয়ার সময় স্ত্রী বলল,
- কোথায় যাচ্ছ তুমি?
- কোথায় আর যাবো! এই একটু বাইর থেকে ঘুরে আসি।
- আমার মনে হয় বাণিজ্যমেলায় যাচ্ছো তুমি।
- তোমার মাথায় বাণিজ্যমেলা ঘুরছে। এখন আমি যেখানেই যাই না কেন তোমার কাছে মনে হবে বাণিজ্যমেলায় যাচ্ছি।
- ধারণার কী আছে? অতীতেও তুমি এরকম অসংখ্য মিথ্যা কথা বলেছ। এবার যদি মিথ্যা বলো তবে তোমার খবর আছে।
মতি ভাই অত প্যাঁচাল না বাড়িয়ে রওনা হলেন। মেলার সামনে মানুষের ভিড়। এই ভিড় ঠেলে ভেতরে ঢোকা বেশ মুশকিলের ব্যাপার। লাইনে দাঁড়াতেই পেছন থেকে ধাক্কা আসতে লাগল। মতি ভাই ধাক্কা খেয়ে লাইনচ্যুত হয়ে গেলেন। যখন লাইনে ঢুকতে গেলেন তখন এক ছেলে বলল, কোথা থেকে এসে আপনি লাইনে ঢুকছেন। তাড়াতাড়ি পেছনে গিয়ে লাইনে দাঁড়ান।
মতি ভাই রেগে গিয়ে বললেন, বললেই হলো? আমি তো এতক্ষণ এই জায়গাই ছিলাম।
অনেক্ষণ তর্কাতর্কির পরও মতি ভাই তার জায়গা ফিরে পেলেন না। কী আর করা! আবার পেছনে গিয়ে লাইন ধরতে লাগলেন। এবার যত ধাক্কাই আসুক তিনি আর লাইনচ্যুত হবেন না। এখন পেছনে ধাক্কা এলে মতি ভাই সামনের যারা আছে তাদের ওপর গিয়ে পড়েন। আবার তারা ধাক্কা দিলে তিনি পেছনের মানুষের ওপর গিয়ে পড়েন। এভাবে করেই তিনি বাণিজ্যমেলায় প্রবেশ করলেন। ভেতরে ঢুকেই এক ধরনের ভালো লাগা কাজ করতে লাগল। এবার স্ত্রীকে ছাড়াই একা একা বাণিজ্যমেলা উপভোগ করা যাবে। মতি ভাই এই প্যাভিলিয়ন থেকে ওই প্যাভিলিয়নে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। তাকে নানা অফার দিলেও গলানো যাচ্ছে না। কারণ মতি ভাই কিছু কিনতে আসেননি। এসেছেন একা একা ঘুরতে। হাঁটতে হাঁটতে ক্ষুধা লেগে যায়। একটি হোটেলে ঢুকে সবচেয়ে কম দামে যা পাওয়া যাবে তারই অর্ডার করলেন মতি ভাই। খাওয়া শেষে বিল দিতে গিয়ে লাগল বিপত্তি। বিল এত বেশি হলো কেন, মতি ভাই বুঝতে পারছেন না। দোকানদার বলছে, আপনার স্ত্রী নাশতা খেয়ে মাত্রই বের হয়ে গেছে। সে বলেছে আপনি বিল দেবেন।
- আমার স্ত্রী কোথায় থেকে আসবে?
- সে তো বলল, আমার হাজবেন্ড পেছনে বসে থাকা টাকওয়ালা লোকটা। তিনিই টাকা দেবেন।
- কেউ একজন আমাকে হাজবেন্ড বলবে আর আমি তা বিশ্বাস করব? আমি টাকা দেবো না।
মতি ভাই জানে এখানে টাকা না দিয়ে যাওয়া যাবে না। তার চিন্তা হলো তার স্ত্রী এখানে এলো কিভাবে? তাকে তো বাসায় রেখে এলাম। বাইরে এসে দাঁড়াতেই মতি ভাই এক ধরনের শক্ খেলেন। নিজের চোখকে কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারছিলেন না। তার স্ত্রী তারই সামনে দাঁড়িয়ে।
- তুমি এখানে?
- আগে বলো তুমি এখানে কেন? তুমি না বলেছ বাণিজ্যমেলায় আসবে না।
- হুম বলেছি, কিন্তু তুমি এখানে এলে আমি জানতে পারলাম না।
- জানলে কী হতো? তুমিতো আমাকে আনতেই চাচ্ছ না। আমি জানতাম তুমি এখানে আসবে, তাই আমিও তোমার পিছে পিছে চলে এসেছি।
মতি ভাই হতভম্ব হয়ে গেলেন। বিপদের একটা গন্ধ পেয়ে গেলেন। পকেটের অবস্থা যে কাহিল হবে তা তিনি ভালো করেই জানেন। হ