বোল্ড আউট প্যাঁচাল
- ইরফান তানভীর
- ১৬ জানুয়ারি ২০২০, ০০:০০
নোয়াপাড়া গ্রামের মধ্যমপাড়ার রুস্তম আলীর বিশাল ধানক্ষেতটাতে প্রায়ই শর্টপিচ ক্রিকেট খেলার আয়োজন হয়। এ শীতকালেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। প্রতিটি বিকেল বেলা থেকে সন্ধ্যার আগ পর্যন্ত খেলা জুড়ে থাকে টান টান উত্তেজনা ও দর্শকদের মধ্যে পণ্ডিতি আলোচনা।
বেলাল কাকা স্যুটেড-বুটেড হয়ে আম্পায়ারিংয়ে এলেন। কিছুক্ষণ পর খেলা শুরু হবে। আমি বরাবরের মতো আমাদের পাড়ার ক্রিকেট ক্যাপ্টেন জহির ভাইয়ের সাথে দাঁড়িয়ে আছি। মূলত আমি ক্যাপ্টেনের নজরে আসার তদবির করছিলাম! কিন্তু এবারো আমার ভাগ্য খারাপ। আমাকে ছাড়াই ক্যাপ্টেন জহির নয়জনকে নিয়ে ফিল্ডিংয়ে চলে গেল। যাওয়ার সময় তার নতুন স্মার্টফোনটা আমার হাতে দিয়ে বলল, অ্যাই কিসলু শোন, কেউ ফোন করলে ধরবি না! বুঝছোস? আমি কোনোরকম ডান বাম মাথা ঘুরিয়ে মাথার ভেতর ক্যাপ্টেন জহিরকে বিপাকে ফেলার ফন্দি আঁটছি। সবসময় আমাকে দল থেকে বাদ দিবে! কী সাহস তার! আমাকে কি তার খেলোয়াড় মনে হয় না? আজ খেলা বুঝিয়ে দেবো!!
ক্ষেতের আইলে বসে বসে এসব ভাবছিলাম। বেলাল কাকা হাত একবার প্রসার করে আবার ছেড়ে দিয়ে খেলা আরম্ভ করার ইঙ্গিত দেন।
প্রচণ্ড রকম চাপা কষ্ট আর ক্ষোভ নিয়ে বসে থাকার আধাঘণ্টা পর দেখলাম প্রথম ইনিংস শেষ হলো।
দ্বিতীয় ইনিংসে ওপেনিং করতে এলেন আমাদের ক্যাপ্টেন জহির ভাই। মনে মনে চাইছিলাম ক্যাপ্টেন যেন প্রথম বলেই বোল্ড হয়! কিন্তু প্রথম বলে বোল্ড না হলেও আমার হাতে থাকা জহির ভাইয়ের ফোনটা টুং টুং করে বেজে উঠল। দেখি জহির ভাইয়ের বাবার ফোন। ডান বাম না ভেবে ফোন ধরে বললাম, কাকুজান আমি কিসলু। জহির ভাই আমার কাছে ফোন দিয়ে কোন একটা জায়গায় যেন গেছে। বলছে আপনাকে না বলতে। জহির ভাইয়ের বাবা সমস্ত আদর গলায় ঢেলে বলল, কিসলু বলো না জহির কই গেছে? তুমি বলেছ, এটা আমি তারে বলব না! সত্যি বলছি, তাকে তোমার কথা বলব না!
সিরিয়াস ঢং করে বললাম, তেমন কোথাও না! দক্ষিণপাড়ার কাকে নিয়ে যেন রাতে হাঁস ধরতে যাবে। পরের দিন মনে হয় হাঁস দিয়ে বিরিয়ানি পার্টি আছে। আকাশে বজ্রপাতের সময় যেমন শব্দ হয় তেমন শব্দ করে জহির ভাইয়ের বাবা চিৎকার করে উঠলেন! আইজ আসুক ঘরে। ঠ্যাংগের সব হাড্ডি ভাইঙ্গা হাতে যদি না ধরাইছি আমার নাম রহিম না!
জহির ভাইকে সরাসরি তার বাবার কাছ থেকে বোল্ড আউট করিয়ে পেছনে ফিরলাম। দেখলাম আম্পায়ার বেলাল কাকার সাথে বোল্ড আউট নিয়ে জহির ভাইয়ের সতীর্থরা তুলকালাম কাণ্ড শুরু করে দিয়েছে। আম্পায়ার বলল আউট, ক্যাপ্টেন জহির ভাই বলছে নো বল। বোল্ড আউটের এ প্যাঁচালে জহির ভাইকে খুব অসহায় মনে হচ্ছিল। না যানি বাড়ি গিয়ে আবার কী ইয়র্কার বোলের শিকার তাকে হতে হয়।... তখন চেহারার কী হাল হবে কে জানে... হ