হ্যাপি নিউ ইয়ার কাণ্ড
- ইরফান তানভীর
- ০৯ জানুয়ারি ২০২০, ০০:০০
বিশাল এক স্টেজের মধ্যে বিরাট সাইজের তিনটি সাউন্ড বক্সে দুম দুমাদুম শব্দ হচ্ছে। গানের দলের শিল্পীরা ইতোমধ্যেই তাদের গলা ঝেড়ে কেশে গান ধরল... তোকে দেখে গাইছে এ মন রিমিক্স কাওয়ালি... রিমিক্স কাওয়ালি-ই-ই... হেই...। পেছনের দর্শক সারিতে উচ্ছ্বাসের ঢেউ বয়ে যাচ্ছে। গানের তালে কেউ কেউ লাফাতেও শুরু করেছে।
তাবেদার খানের ভাগ্য ভালো, তাকে দর্শক সারিতে বসতে হয়নি। হ্যাপি নিউ ইয়ারের এ অনুষ্ঠানে তিনি অতিথি হিসেবে আমন্ত্রিত হয়েছেন। আমন্ত্রিত অতিথিদের জন্য স্টেজের ঠিক ডান কর্নারে টেবিল চেয়ার পেতে আলাদা জায়গা করা হয়েছে। ছয়জন অতিথির মধ্যে তাবেদার খান একদম মাঝামাঝি বসা। আয়োজক কমিটির ছেলেপুলেদের এমন আন্তরিক সম্মানে কোটিপতি তাবেদার খানের মনে অন্যরকম এক পুলক জাগতে শুরু করেছে। এর মধ্যেই নেতা গোছের এক ছেলে স্টেজে উঠে তাবেদার খানের সাথে কোলাকুলি করে গেলেন। তাবেদার খানের আনন্দের সীমা পেরিয়ে গেলেও স্টেজের দুমাদুম আওয়াজ একটুও কমেনি। বরং পাল্লা দিয়ে বেড়েই চলেছে।
দর্শকরা যে ক’জন বসা ছিলেন, তারাও মৃগী রোগীর মতো লাফাচ্ছে। তাবেদার খান এবার খানিকটা দমে গেলেন। তিনি দেখলেন, স্টেজে গানের দলটার সাথে আয়োজক কমিটির ছেলেরাও দে দে ছাইড়া দে টাইপ নাচ ধরল। স্টেজটা মৃদু মটমট করে শব্দ শুরু করেছে। যেকোনো সময়ে বিধি বাম কিছু ঘটতে পারে। নাহ, স্টেজে নাচানাচি আর সাউন্ড বক্সের কান ঝালাপালা শব্দটা আরো বেড়ে গেল। এক সপ্তাহ আগে ব্যাংকক হসপিটাল থেকে ঘুরে আসেন তাবেদার খান। ডাক্তারের কড়া নির্দেশÑ হৃদপিণ্ড কাঁপে এমন কোনো কাজ করা যাবে না! তাবেদার খানের শুধু হৃদপিণ্ড নয়, এখন পুরো শরীরই আতঙ্কে কেঁপে উঠছে। মানুষ সব কিছু ফেলতে পারেন; কিন্তু ডাক্তারের কথা নয়! তাবেদার খান চেয়ার ছেড়ে উঠতে যাবেন, ঠিক তখনই খাট থেকে তিনি ধড়াম করে নিচে পড়ে গেলেন। নিচে দামি কার্পেট বিছানো ছিল, তাই তেমন ব্যথা অনুভব হয়নি। ভয় আর আতঙ্কে তার কপাল প্রচণ্ড রকম ঘেমে গেছে। তাহলে নিউ ইয়ারের এ অনুষ্ঠান কি স্বপ্ন ছিল?... তাবেদার খান নিজের গায়ে চিমটি কাটলেন, তাই তো... তাবেদার খান যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচলেন। যাক, ঘটনা তাহলে সত্যি নয়। স্বপ্ন ছিল।
তবে তাবেদার খান নিশ্চিন্ত মনে ঘুমোতে পারলেন না! বলা যায় না কাল কোনো নিউ ইয়ার সেলিব্রেশন পোগ্রামে তাকে কেউ অতিথি করে বসে কি না এই ভেবে। হুটহাট করে এসে বলবেÑ স্যার আপনি আমাদের চিপ গেস্ট! নিজ থেকে হার্টের অসুখ বাড়িয়ে মরণের সময় ঘনিয়ে আনার কোনো মানে হয় না! সকাল হওয়ার আগেই তাবেদার খান ব্যাংককের উদ্দেশে আবার রওনা হলেন... ডাক্তারটা আরেকবার দেখানো জরুরি! হ্যাপি নিউ ইয়ারের স্বপ্নযোগে যে কাণ্ড তিনি দেখলেন, বাস্তবে তা মরলেও দেখতে চান না... বিলকুল না।