২২ নভেম্বর ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ১৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

এ জার্নি টু শীতের গোসল

-

শীত আসার পর থেকে মতি ভাই বেশ দেরি করেই ঘুম থেকে উঠেন। অবশ্য এ নিয়ে তার স্ত্রী বেশ বিরক্ত। বিরক্ত হওয়ার যথেষ্ট কারণও রয়েছে। এত বেলা হয়ে গেল, এখনো মতি ভাই নাক ঢেকে ঘুমাচ্ছেন। মতি ভাইয়ের নাক ঢাকার শব্দে পুরো খাট কাঁপে। বহু চেষ্টা করেও তার নাক ডাকা বন্ধ করা যায়নি। বরং প্রতিনিয়ত বাড়ছেই। মতি ভাইয়ের স্ত্রী এসে তার গায়ের মধ্যে ঠাণ্ডা পানি ঢেলে দেন। মতি ভাই আতঙ্কিত হয়ে চিৎকার করতে লাগলেন। তার চিৎকার শুনে আশপাশের লোকজন চলে এলেন। একজন জিজ্ঞেস করলেন,
Ñমতি তোর কী হইল?
Ñতেমন কিছু না।
Ñমানে কী? তোকে কি জিন-ভূতে আছর করছে নাকি?
Ñনা না, ওসব কিছু না।
মতি ভাই ভুলে যাননি ওই দিনের কথা। যেদিন তাকে ভূতে ধরছে বলে ঝাড়ুপেটা করা হয়েছিল। মতি ভাই তার স্ত্রীকে গিয়ে বললেন,
Ñতুমি এত নিষ্ঠুর প্রকৃতির মানুষ কেন? এত আরামের ঘুম কেউ ভাঙে?
Ñকথা বেশি বললে আরো পানি ঢেলে দেবো।
মতি ভাই ভয়ে আর কথাই বলেননি। আজ চারদিন মতি ভাই গোসল করছেন না। শীত এলে তিনি গোসল করতে চান না। সপ্তাহ পার হয়ে গেলেও মতি ভাই গোসল করতে চান না। শরীর থেকে ভ্যাঁপসা গন্ধ বের হচ্ছে। তাতে কী? মতি ভাই অত সহজে গোসল করার মানুষ নন। মতি ভাইয়ের স্ত্রী এসে বললেন,
Ñএবার অন্তত গোসলটা করো।
Ñনা করলে সমস্যা আছে?
Ñসমস্যা নাই মানে? তোমার গায়ের গন্ধে মশা-মাছি ওড়া শুরু করেছে।
Ñতাহলে তো ভালোই, আরো কয়েকদিন পর গোসল করলে তোমার উপকার হবে।
Ñকিভাবে আমার উপকার হবে।
Ñএই যে আমার গায়ের গন্ধে এখন মশা-মাছি আসে। ক’দিন পর আরো বেশি গন্ধ হলে মশা-মাছি যা আছে, সব অজ্ঞান হয়ে মারা যাবে।
Ñমশা-মাছি মরলে সমস্যা নেই। মনে হয় আমি নিজেই অজ্ঞান হয়ে যাবো।
মতি ভাইকে কোনো যুক্তিতেই গোসল করানো যাচ্ছে না। মতি ভাইয়ের স্ত্রী একটা বড় ধরনের প্ল্যান করতে লাগলেন। যেভাবেই হোক মতি ভাইকে গোসল করাতে হবে। সকালে নাশতা করতে বসেছেন মতি ভাই। এখন মতি ভাইকে গোসল করানোর একটা সুযোগ করে নেয়া দরকার। কী করলে তিনি গোসল করবেন? এই প্রশ্নের কোনো উত্তর পাচ্ছেন না মতি ভাইয়ের স্ত্রী। একটা বুদ্ধি মাথায় এলো। দেখা যাক, এটি মতি ভাইয়ের ওপর অ্যাপ্লাই করলে কেমন হয়। রুটি আর আলু ভাজি দিয়ে সকালের নাশতা সারছেন তিনি। হঠাৎ ভাজি শেষ হয়ে যায়। আসলে ভাজি তাকে কম দেয়া হয়েছে। মতি ভাই স্ত্রীকে বললেন ভাজি দিতে। ভাবী তাড়াতাড়ি ভাজি নিয়ে এলেন। বেশি তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে ধাক্কা খেয়ে পুরো ভাজি মতি ভাইয়ের গায়ের পড়ল। মতি ভাই চিৎকার করতে করতে বললেন,
Ñতুমি ইচ্ছে করেই এটা গায়ের ওপর ফেলছো।
Ñএটা আবার কেমন কথা? আমি এত কষ্ট করে এগুলো বানালাম তোমার জন্য। সেটা আবার তোমার গায়ে ঢালব?
মতি ভাই চেয়ার থেকে উঠে গিয়ে জামা খুলে ফেললেন। মতি ভাইয়ের স্ত্রী তো বেশ খুশি। যাক এ অছিলায় তিনি গোসল করবেন। এরপর মতি ভাই একটা গামছা নিয়ে পানিতে ভিজিয়ে গা মুছে ফেললেন। তারপরও মতি ভাই গোসল করলেন না। মতি ভাইয়ের স্ত্রী এ যাত্রায় ব্যর্থ হলেন। তবে এর একটা বিহিত তিনি করেই ছাড়বেন।
আজ বেশ সকালে মতি ভাই ঘুম থেকে উঠেছেন। পুকুর পাড়ে বসে দাঁত ব্রাশ করছেন। এই তো সুযোগ তাকে গোসল করানোর। দাঁত ব্রাশ শেষে পুকুরের ঘাটলায় বসলেন মুখ ধুতে। মতি ভাইয়ের স্ত্রী দ্রুত মতি ভাইয়ের কাছে চলে এলেন। মুখ ধোয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন ঠিক এই সময় মতি ভাইকে ধাক্কা দিয়ে ভাবী পানিতে ফেলে দেন। মতি ভাইও কম কিসে! তিনি পানিতে পড়ার সময় স্ত্রীর হাত ধরে ফেলেন। সে কি, একসাথে পানিতে পড়বে নাকি? স্ত্রীকে নিয়েই মতি ভাই ঠাণ্ডা পানিতে হাবুডুবু খেতে লাগলেন। এদিকে মতি ভাইয়ের স্ত্রীর অবস্থা আরো ভয়াবহ। ঠাণ্ডায় প্রায় জমে যাওয়ার উপক্রম হলো। এ যাত্রায় মতি ভাইকে গোসল করাতে সফল হলেও মতি ভাইয়ের স্ত্রী শপথ করেছেন, আর কখনো তাকে গোসল করানোর চেষ্টা করবেন না।


আরো সংবাদ



premium cement