২২ নভেম্বর ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ১৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

আটটার সংবাদ

-


কাউসার সাহেব প্রতিদিন অফিস থেকে বাসায় ফিরে ফ্রেশ হওয়ার আগেই, টেলিভিশনের দিকে দৌড় দেন।
টেলিভিশন ছেড়ে রিমোট ঘুরিয়ে তিনি ৮টার সংবাদে এসে থামেন।
টানা আধাঘণ্টা পর্যন্ত খুব মনোযোগী হয়ে তার এই দেখাদেখির পর্ব চালিয়ে থাকেন।
৮টার সংবাদ শেষ হওয়ার এক মিনিট আগেও তিনি সোফা থেকে নড়েন না।
কখনো-সখনো সংবাদ চলাকালীন বিদ্যুৎ চলে গেলে তিনি উদাস হয়ে অন্ধকার রুমে বসে ‘দেশ রসাতলে গ্যাছে’ বলতে বলতে সিগারেট ফোঁকেন।
স্বামী নিয়ে কামরুন নাহারের অভিযোগের অন্ত নেই।
তিনি এ নিয়ে সারা দিনই চেঁচামেচি করে বাসা মাথায় তোলেন। তার দাবি ‘একটা মানুষ হইছে আমার। সারাদিন খাটুনি দিয়া আইসা চিৎ হইয়া পইড়া থাকে আর টিভির দিকে চোখ দুইটা দিয়া রাখে ’
কাউসার সাহেব এসবে কান দেন না। চেঁচামেচি বেড়ে গেলে শুধু টেলিভিশনের ভলিউমটা বাড়িয়ে দেন।
এতে কামরুন নাহার আরো উত্তেজিত হন। রাগে গন গন করেন তিনি।
২. আজ কাউসার সাহেব ধীরে সুস্থে বাসায় আসেন।
জুতা খুলেন ড্রেস চেঞ্জ করে লুঙি পরেন। ওয়াশরুমে গিয়ে চোখেমুখে পানি ছিটান। বের হয়ে ড্রইংরুমে আয়েশি কায়দায় সোফায় বসেন। সোহাগী ভঙ্গিতে স্ত্রীকে ডাকতে থাকেন
‘আমার কামরুন নাহার কইগো?’
কাউসার সাহেবের এহেন আচরণে কামরুন নাহার বিস্মিত হয়। প্রশ্ন ছুঁড়ে দেন
‘কিগো আজ এত মধুর স্বরে ডাক দিলা যে? আজকে তোমার ৮টার সংবাদ নাই?’
জবাবে কাউসার সাহেব বলেন,
‘আটটার সংবাদ শুরু হতে আটটাতো বাজতে হবে নাকি! আজ রাস্তায় জ্যাম না থাকায় একটুু জলদি আসতে পেরেছি। এখনো পাক্কা আরো ২৩ মিনিট বাকি। যাও জলদি করে এককাপ চা বানিয়ে নিয়ে এসো’
কামরুন নাহার এতক্ষণে স্বামীর মতলব বুঝতে পারে।
তবুও আবদার মিটানোর ইচ্ছায় তিনি চা বানাতে চলে যান কিচেনে।
এই ফাঁকে কাউসার সাহেব সিগারেট ধরিয়ে পুরো রুম ধোঁয়াটে করে ফেলেছেন।
কাউসার সাহেব ঘড়ির দিকে লক্ষ্য দেন। ৮টা বাজতে দুই মিনিট বাকি। খুব আনন্দিত হন তিনি। চটকরে টেলিভিশনের সুইচ অন করে আবার সোফায় গিয়ে বসেন।
হাতে রিমোট নিয়ে অন বাটন চাপেন। কিন্তু টেলিভিশন চালু হয় না। কয়েকবারের চেষ্টাতে কাজ না হওয়ায় তিনি বিরক্ত হয়ে রিমোট সোফার হাতলে আঘাত করে আবার চেষ্টা করেন।
এতেও কাজ হয় না। তার উত্তেজনা বাড়তে থাকে। ততক্ষণে ৮টা ৫। এখন কাউসার সাহেবের রাগ চরমে। মুখ গজ গজ করতে থাকেন আর রিমোটের ব্যাকপার্ট খুলে তিনি ব্যাটারি চেক করে আবার ব্যাটারি লাগিয়ে অন বাটন চাপেন। না তাতেও কাজ হয়নি।
এবার আর নিজের রাগকে ধরে রাখতে পারেন না তিনি। সজোরে রিমোট ছুড়ে মারেন দেয়ালে। বিকট শব্দে রিমোট ভেঙে চুরমার হয়। উঠে দাঁড়ান তিনি। টুকরো টুকরো হওয়া অংশগুলো লাথি মেরে দূরে সরিয়ে দেন।
ভাঙাচোরার শব্দে কামরুন নাহার কিচেন থেকে দৌড়ে রুমে আসেন।
স্বামীর কাণ্ডে তিনি রাগারাগি না করে অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকেন। পরক্ষণে হাসতে লাগলেন।
এতে কাউসার সাহেবের আরো রাগ হয়। তিনি চেঁচিয়ে উঠে বলেন, ‘টিভি অন হয় না! আমার ৮টার সংবাদ তো চলে যাচ্ছে ?’
কামরুন নাহার রিমোট বের করে কাউসার সাহেবের হাতে দেন, ‘এই নাও তোমার রিমোট! আর তুমি যেটা ভেঙেছ ওইটাতো তোমার মোবাইল!’
এই বলে কামরুন নাহার হাসতে হাসতে ফ্লোরে গড়িয়ে পড়ছেন...

 


আরো সংবাদ



premium cement