কল
- জোবায়ের রাজু
- ১২ ডিসেম্বর ২০১৯, ০০:০০
দুপুর বেলা। বাইরে কড়া রোদ আজ কম। আতিক সাহেব অফিসে বসে আছেন। মাথার ওপর স্লো গতিতে সিলিংফ্যান ঘুরছে। আতিক সাহেব সেলিম গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রির ম্যানেজার। ভালো বেতন। অল্প দিনে বাড়ি গাড়ির মালিক হয়েছেন। সেলিম গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রির কর্ণধার সেলিম খন্দকারের অগাধ বিশ্বাস আছে আতিক সাহেবের ওপর। আতিক সাহেবের শুধু শিক্ষাগত যোগ্যতা নয়, সুন্দর আচরণ আর মার্জিত স্বভাব দেখে সেলিম খন্দকার তাকে ম্যানেজার পদে নিয়োগ করেছেন। আতিক সাহেবও তার বস সেলিম খন্দকারকে যথাযোগ্য মূল্যায়ন করেন।
টেবিলে রাখা মোবাইলটা বেজে উঠল আতিক সাহেবের। একটি আননোন নাম্বার। আননোন নাম্বার সাধারণত রিসিভ করেন না তিনি। তবুও আজ কী মনে করে কলটা ধরলেন।
ওপার থেকে এক নারী কণ্ঠের রিনরিনে গলা, ‘হ্যালো। তুমি ফ্রি আছো? আমি তোমার স্ত্রী সানজিদা খান। আমি শপিং মলে। ভুলে মোবাইলটা বাসায় রেখে এসেছি। শপিং মলে এসে আমার বান্ধবী কণার সাথে দেখা। এটা ওর নাম্বার। আচ্ছা শোনো...।’
আতিক সাহেব বললেন, ‘ইয়ে মানে...।’
ওপার থেকে সানজিদা খানের ভারী গলা, ‘ তোমার কথা পরে শুনব। এখন আমি যা প্রশ্ন করব, শুধু তার জবাব দেবে।’
আতিক সাহেব ছোট্ট করে বললেন, ‘ওকে।’
‘তুমি কি অফিসে?’
‘হ্যাঁ।’
‘আমি তোমাকে না বলে শপিং মলে চলে এসেছি কেনাকাটা করতে।’
‘আচ্ছা।’
‘সেদিন আমরা দুই লাখ টাকা দামের যে ডায়মন্ডের হারটি দেখেছিলাম, সেটার দাম কমেছে। কিনব?’
‘কেনো।’
‘একটা দোকানে সুন্দর এক শাড়ি দেখেছি। পরলে আমাকে তোমার প্রিয় নায়িকা হেমা মালিনীর মতো লাগবে। দাম ৮০ হাজার টাকা। কিনি?’
‘অবশ্যই।’
‘পারফিউম দেখেছি অনেকগুলো। ঘ্রাণ ভালো। নিয়ে নিই?’
‘নিশ্চয়ই।’
‘আ্যাকুরিয়াম শপে নতুন কিছু মাছ এসেছে। আমি ৪০টি মাছ চয়েজ করেছি। দাম ৬০ হাজার। কিনব?’
‘কেন নয়?’
‘আর ছেলেদের জেন্টস শপে নতুন নতুন পাঞ্জাবি এসেছে প্রচুর। সব থেকে নি¤œ মানেরটার দাম ১৬ হাজার। কিনব? পরবে তুমি?’
‘পরব।’
‘ওকে, সেটাও কিনব। পাদুকালয়ে একজোড়া বিদেশী হিল জুতা পছন্দ করেছি। দাম চার হাজার। কিনি?’
‘সমস্যা নেই।’
‘হি হি হি। আর শোনো!’
‘বলো।’
‘ক্ষেপে যাবে না তো?’
‘না।’
‘বিএমডব্লিউ শপে যে নতুন মডেলের গাড়ি এসেছে, সেটা আমার ভীষণ পছন্দ হয়েছে। দাম ৮০ লাখ টাকা।’
‘বাপরে!’
‘হ্যাঁ। না কিনলে মনটা খুঁতখুঁত করবে।’
‘দাম তো বেশি।’
‘তাতে কী! বাসর রাতে তো বলেছো আমি যা চাইব, তা দেবে।’
‘অহ।’
‘এ্যাই, বলো না, গাড়িটা কিনব?’
‘ঠিক আছে।’
‘ওয়াও। থ্যাংক ইউ।’
‘ওয়েলকাম।’
‘তুমি কাশের ওষুধ নিয়ম করে খাওনি আজ? কাশতে কাশতে গলাটা কেমন বদলে গেছে। আচ্ছা এখন রাখি?’
‘রাখো।’
‘ভালো থেকো। অফিস ছুটি হলে সোজা বাসায় চলে এসো।’
‘ওকে।’
লাইন কেটে দেয়ার পর আতিক সাহেব দীর্ঘশ্বাস ফেলে মনে মনে বললেন, ‘কার বউয়ের রং নাম্বারের কল এসেছে কে জানে! আমি তো এখনো বিয়েই করিনি। বাবা মা অবশ্য পাত্রী খুঁজছেন।’
দম ফাটানো হাসি আসছে আতিক সাহেবের। তিনি একটু আগে ঘটে যাওয়া ঘটনাটি লিখে ফেসবুকে শেয়ার করবেন ভাবছেন। হ