নাম বিড়ম্বনা
- রুহুল আমিন রাকিব
- ০৫ ডিসেম্বর ২০১৯, ০০:০০
মফিজ ভাই খুব ফেমাস। এই কারণে আশে পাশের দুই-চার গ্রামের মানুষ মফিজ ভাইকে অনেক সম্মান করে। তবে মফিজ ভাইয়ের আরো একটা নাম আছে, পেটুক। এই নামের ইতিহাসও আছে একটা। আর তা হলো মফিজ ভাই আশপাশের এমন কোন এলাকা নেই যে বিয়েশাদির অনুষ্ঠান বাদ রাখে। দাওয়াত করলেও উপস্থিত হবে, না করলেও উপস্থিত হবে। এই নিয়ে মফিজ ভাইকে অনেক অপমান করা হলেও এতে উনার কিছু আসে যায় বলে মনে হয় না। লজ্জা শরম বলতে কিছু আছে বলেও মনে হয় না। একবার তো হুট করে অপরিচিত এক এলাকায়, গিয়ে বিয়ের অনুষ্ঠানে খাবার আয়োজনে অপমান হয়ে এসেছে। উপস্থিত সবার সামনে খাবার প্লেট কেড়ে নিয়ে তাড়িয়ে দেয়া হয়েছে। এত কিছুর পরও মফিজ ভাইয়ের কোনো রকম পরিবর্তন নেই। তিনি বিনা দাওয়াতেই বিভিন্ন অনুষ্ঠানে চলে যান। এই কারণে পেটুক নামে দু’চার গ্রামের মানুষ চেনে।
এই তো সেদিন সকালবেলা শীতে কাঁপাকাঁপি করতে করতে মফিজ ভাই উপস্থিত আমার কাছে। আমাকে দেখে ভ্যাটকানো হাসি দিয়ে বলল, রাকিব এই রাকিব, আরে কি করো? আমার সাথে চলো, ওই যে ছাগলী পাড়া আছে না! ওই পাড়ার নাম পাল্টে নতুন একটা নাম রাখবে। ছাগলী নাম শুনতে নাকি অনেক খারাপ শোনায়! এই কারণে নতুন ভালো একটা নাম রাখবে। দুই, চার গ্রামের মানুষের সামনে বিশাল বড় আয়োজন করে এই নতুন নাম রাখবে।
আমি বললাম, তো আমি কী করব? নাম আমি রাখব মনে হচ্ছে!
এবার মফিজ ভাই আমাকে বলল, ধুর কী সব বাজে বলছ! নাম তো ওই পাড়ার লোকেরা সবাই মিলে ঠিক করছে। আজ অনেক লোকের সামনে প্রকাশ করবে। বিশাল বড় খাবার আয়োজন করেছে। অনেক কয়টা গরু জবাই করেছে, খাসিও জবাই করেছে। পাড়ার নতুন নাম রাখার পরে, উপস্থিত সবাইকে খাওয়ানোর জন্য এই আয়োজন করেছে।
মফিজ ভাইয়ের কথা শুনে আমি বললাম, তো আমি এখন কী করব এইটা বলো!
মফিজ ভাই বলল, তুইতো জানিস আমি সাইকেল চালাতে পারি না। তোর তো সাইকেল আছে, আমাকে সাইকেলের পেছনে বসিয়ে চল যাই। পেট পুরে তুইও খাবি আমিও খাবো।
আমি বললাম, না ভাই, আমি ওই সবে যাই না। ওই সব খাবার আমার পেটে সহ্য হয় না।
মফিজ ভাই অনেক মিনতি করে বলল, দেখ রাকিব অনেক দূরের পথ! আমি পায়ে হেঁটে যাইতে যাইতে খাবার আয়োজন শেষ হবে। ভাইটা ভালো! আয় না ভাই।
মফিজ ভাইয়ের এমন রসালো ডাক আমি আর ফেরাতে পারলাম না। শেষে বললাম, চলো যাই তাহলে।
সাইকেলের পেছনে মফিজ ভাইকে বসিয়ে নিয়ে, কিছু সময় পরে উপস্থিত হলাম ছাগলী পাড়ায়। সেখানে অনেক মানুষের ভিড়! এক জায়গায় সাইকেল রেখে মফিজ ভাইয়ের সাথে আমিও বসে পড়লাম শত লোকের মাঝে।
কিছু সময় পরে, ছাগলী পাড়া নাম পাল্টিয়ে ইমাম পাড়া রাখা হয়। নতুন নাম রাখা শেষে খাবার আয়োজন করা হয়। মফিজ ভাইয়ের সাথে আমিও খাইলাম। খাবার খাওয়া শেষে মফিজ ভাই তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলে বলল, আজ অনেকগুলো গরুর গোশত খাইছি। আজ সারা দিন পেটে কিছু না দিলেও চলবে। আহা! খাসির রোস্ট, চরম টেস্টি হয়েছে।
বলতে বলতে লাফিয়ে আমার সাইকেলের পেছনে বসল। আমার মতো আমি সাইকেল চালিয়ে আসতেছি। হঠাৎ এক লোক মফিজ ভাইকে বলল, কি রে পেটুক, মনে হচ্ছে কোথাও থেকে দাওয়াত খেয়ে আসলে!
আমি কিছু বলার আগে, মফিজ ভাই বলল, হ ভাই ঠিক বলছেন। এই যে আপনাদের ছাগলী পাড়ায় দাওয়াত খেয়ে আসলাম। আহা! চরম তৃপ্তি পাইছি ভাই, সুস্বাদু খাবার আয়োজন।
ছাগলী পাড়া নাম শোনামাত্র, ওই লোক বলল! কী তুমি আমাদের পাড়ার খাবার খাওয়ার পরে আবার আমাকে বলছ ছাগলী পাড়ায় খাবার খাইছি। একটু আগে নতুন করে ইমাম পাড়া নাম রাখা হলো। আর তুমি এখনো বলছ ছাগলী পাড়া বলতেছ! দাঁড়াও দেখাচ্ছি মজা!
এই কথা বলে ওই লোক চিৎকার শুরু করল। মুহূর্তের মধ্যে অনেক মানুষ জড়ো হলো। উপরের ঘটনা শুনে সবাই মফিজ ভাইকে উত্তম মধ্যেম দিল, সাথে আমাকেও। অবস্থা খুব খারাপ দেখে, সাইকেল রেখে দিলাম এক ভোঁ দৌড়।