সম-অধিকার
- রুহুল আমিন রাকিব
- ২১ নভেম্বর ২০১৯, ০০:০০
আমাদের মফিজ ভাই জরুরিভাবে ফোন করে বলল, এই মুহূর্তে তুই আমার বাড়ি আসবি।
মফিজ ভাই আমার তিন বছরের বড়! কয়েক দিন আগে বিয়ে করছে, বিয়ের পরে মফিজ ভাই আমাদের থেকে লাপাত্তা ! রাতের চাঁদের আলোয়ও কোথাও খুঁজে পাওয়া যায় না। অথচ বিয়ে করার আগে এই মফিজ ভাইয়ের যন্ত্রণায় রোজ বাবা-মায়ের বকা শুনতে হতো। ঠিক সময়ে খাবার খাওয়া ও পড়তে না বসার জন্য। মফিজ ভাই আমাদের এলাকা ছাড়াও, পাশের দুই-তিন এলাকার ছেলেদের বড় ভাই বলা চলে। যাই হোক, আজ অনেক দিন পরে মফিজ ভাই ওনার বাড়ি ডাকছে বলে কথা। আমার একমাত্র সঙ্গিনী সাইকেল লইয়া একটু পরে মফিজ ভাইয়ের বাড়িতে উপস্থিত, আহা! মফিজ ভাইয়ের নতুন বউকে আজ কাছে দেখতে পাব! ভাবতে খুশিতে, হাত পা ছেড়ে লাফাতে ইচ্ছে করছে। তবে বড় হয়ে গেছি বলে ওই সব চেপে গেলাম। আমাকে দেখে মফিজ ভাই মুখ গোমড়া করে বলল, কিরে রাকিব তুই এসেছিস? আয় আয় ঘরের ভেতরে আয়।
সাইকেল রেখে, ঘরে গিয়ে দেখি মফিজ ভাইয়ের বউও মুখ গোমড়া করে বসে আছে। আমি বললাম, বিষয় কী মফিজ ভাই? ভাবিও দেখি মন খারাপ করে বসে আছে! আপনারো মন খারাপ, হঠাৎ কী এমন হলো?
এবার মফিজ ভাই বলল, শোন তাহলে বলছি। আর তোরে তো ডাকছি এই কারণে। আমি বললাম, আগে বলেন তাহলে। আমি শোনার জন্য অধীর হয়ে অপেক্ষা করছি।
মফিজ ভাই বলল, তুই তো জানিস আমি হলাম নয় ক্লাস বাদে মেট্রিক পাস। এই কারণে এই সম-অধিকার, মানে নারী-পুরুষ সমান অধিকার এই বিষয়টা বুঝি না। তবে তোর ভাবীরে বিয়ে করে আনার পর থেকে, বাড়ির সব কাজে, আমাকে এই সম-অধিকারের খোটা দেয়। সমান ভাগে সমস্ত কাজ করতে বলে। এমন কি গোসল করা শেষে, ওর কাপড়ও আমাকে ধৌত করতে হয়। কারণ আমি যে থালা বাসন, পরিষ্কার করি না তাই। শুধু কি এই কাপড় ধোয়া! টয়লেট, গোয়াল ঘর, রান্নাঘর, এসব কিছু আমাকে পরিষ্কার করতে হয়।
এ কথা বলে হু হু করে কান্না শুরু করল মফিজ ভাই। কাঁদতে কাঁদতে আমাকে বলল, আজ সকালে কোনো এক কারণে আমি ওর গালে একটা থাপ্পড় দিছি। আর এই থাপ্পড় দেয়ার পরে, তোর ভাবীও আমাকে সমান তালে, দুই গালে থাপ্পড় লাগাই দিয়ে বলল, এটাও নাকি সম-অধিকার। এখন বল, আমি কী করব? নতুন বউ বলে এসব কথা কাউকে বলতেও পারছি না। বাইরে আমার তো মানসম্মান বলতে কিছু একটা আছে।
মফিজ ভাই আরো বলল, আগে পেঁয়াজ কাটলে বাড়ির গিন্নিরা শুধু কান্না করত! আর এখন বাজারে পেঁয়াজ কিনতে গিয়ে, আগে আমাকে কান্না করতে হয়।
মফিজ ভাইয়ের এমন শত শত অভিযোগের ডালি শুনে মনে মনে বললাম, ওরে বাপরে! এই মেয়েতো মনে হয় বড় ডাকাত! কখন যে আমার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে! চোখ লাল করে যেভাবে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। তাই আমিও চাওয়া চিন্তা না করে মফিজ ভাইকে বললাম, এটা কোনো ব্যাপার না ভাইয়া। পেঁয়াজ কিনতে যেয়ে আজকাল পুরুষরা একচোট কান্না করে নেয় আগে। যদিও কোনো পুরুষই স্বীকার করে না যে, এখন নারী ও পুরুষ সম-অধিকার চলছে। তবে মনে মনে সবাই ঠিক এটাই বলে। মফিজ ভাই তুমি মন খারাপ করিও না। ভেবে নাও, এখন নারী-পুরুষ সম-অধিকার চলছে দেশজুড়ে।
এই কথা বলে সাইকেল হাতে নিয়ে আমিও লাপাত্তা দিলাম। মনে মনে বললাম, এখন বুঝেছি মফিজ ভাইকে বিয়ের পরে খুঁজে না পাওয়ার কারণ! বিয়ের পরে মফিজ ভাইয়ের সম-অধিকার আইন মেনে চলতে হচ্ছে।