২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

বোকা

-

শফিকের সাথে রফিকের বন্ধুত্বটা ছোটবেলা থেকেই। শফিক একটু বোকা টাইপের। শফিক বোকা হলেও সে ভারি বুদ্ধিমান। মানুষজন তাকে যতই বোকা ভাবুক, সে যে দারুণ বুদ্ধিমান সেটা সে ছাড়া আর কেউই জানে না। তার একটাই কাজÑ সারাদিন মানুষের কথা শুনে হাসা। অর্থাৎ দাঁত কেলানো! কারণে-অকারণে তার এই হাসি দেখে, মানুষজন অতিষ্ঠ হয়ে যায়।
সেদিন এক ভদ্রলোক এসে শফিককে জিজ্ঞেস করল, ‘দাদা, এই ঠিকানাটা একটু বলতে পারবেন?’
শফিক দাঁত কেলিয়ে জবাব দিলো, ‘এইতো চল্লিশ কদম হেঁটে দুই কদম পেছনে ফিরবেন। তারপর আবার সাড়ে পাঁচ কদম হেঁটে আবার একটা ইউটার্ন নিলে আপনি এই ঠিকানায় পৌঁছে যাবেন।’
ভদ্রলোকের মুখে অন্ধকার নেমে এলো বেচারা শফিকের কথায়। কেমন মুষড়ে গেলেন। শফিকের কথা মতো সব অষ্টদশ সম্পন্ন করার পরে ঠিকানা না পেয়ে ফোন দিলেন তার আত্মীয়কে। আত্মীয় বলল, ‘সে কী! তুই অদ্দুর গেলি কিভাবে? আমার বাসা তো ১২ নম্বর রোডে। তুই তো বোধহয় আছিস চৌদ্দ নম্বর রোডে।’
লোকটি ফিরে এসে শফিককে ধমকালো। শফিক লোকটার ধমক শুনে হো হো করে হাসলো। লোকটি কঠিন গলায় বলল, ‘আপনার মতো মানুষ আমি জীবনেও দেখি নাই! মিয়া! ফালতু কোথাকার!’
শফিক হাসতে হাসতে বলল, ‘আসলে হয়েছে কি ভাই! এলাকার মানুষজন আমাকে বোকা বলে। তাই আমি বোকা। কিন্তু আমি আজ আপনাকে বোকা বানালাম! আপনি তো আমার থেকে ডাবল বোকা! হো হো হো।’
ভদ্রলোক রাগান্বিত হয়ে হেঁটে গেলেন।

২.
রফিক এলো। শফিককে বলল, ‘কি রে, এত দাঁত কেলাচ্ছিস কিসের জন্য?’
শফিক বলল, ‘আজ একজনকে বোকা বানিয়েছি! বেচারা আমার থেকেও ডাবল বোকা।’
রফিক শফিকের কথা শুনে, হাসতে হাসতে বিষম খাওয়ার উপক্রম। সে হাসি থামিয়ে বলল, ‘আজ যদি কেউ বলতো মহাকাশ পৃথিবীতে খসে পড়বে তাও বিশ্বাস করতাম। কিংবা ডোনাল্ড ট্রাম্প পান্তা ভাত খায় সেটাও বিশ্বাস করতাম। কিন্তু তোর এই কথা আমি বিশ্বাস করতে পারলাম না। তুই নিজেই তো মস্ত বড় বোকা। তুই আবার মানুষকে বোকা বানাবি কী করে? হে হে হে!’
রফিকের কথা শফিক দারুণ ক্ষিপ্ত হলো। শফিক জানে সে বোকাসোকা টাইপের মানুষ। কিন্তু মানুষ যখন তাকে বোকা বলে তখন তার আরো খারাপ লাগে। যখন তার বন্ধু তাকে বোকা বলে তখন তার দারুণ খারাপ লাগে। রফিক বলল, ‘মন খারাপ করিস না! তুই তো বোকা না। মানুষজন তোকে বোকা বলে।’
শফিকের মন ভালো হয়ে গেলো। রফিক শফিকের পকেটে হাত ঢুকালো। রফিকের কাছে টাকা না থাকলে সে এক কাজ করে। তারপর শফিককে বলে, ‘তোর টাকা মানে তো আমারো টাকা। একসময় চাকরি বাকরি করে তোর টাকা শোধ করে দেবো চিন্তা করিস না। শফিকের এতে দারুণ মন খারাপ হয়। কিন্তু বন্ধুত্বের খাতিরে সে রফিককে কিছুই বলে না?

৩.
সেদিন সকালে চায়ের দোকানে চা খেতে যাওয়ার সময় শফিক লক্ষ করল, একজন ব্যক্তির পকেট থেকে মানিব্যাগটি খানিকটা বের হয়ে আছে। শফিক আড়চোখে নজর দেয় সেদিকে। শফিক মনে মনে ভাবতে থাকে সে যদি মানি ব্যাগটি নিয়ে এখান থেকে কেটে পড়তে পারে তাহলে সে আর বোকা থাকবে না। সে আস্তে করে লোকটির পকেটে হাত দেয়। পকেট থেকে মানি ব্যাগটি বের করে যখন হন হন করে হাঁটা দিতে যায় তখনই দেখে ফেলে একজন। সে চিৎকার দিয়ে বলে উঠে, পকেটমার! ধর! ধর!
শফিককে ধাওয়া করে কয়েকজন। শফিক এক দৌড়ে এসে রফিকের বাসায় ঢোকে।
রফিক আয়নার সামনে চুল আঁচড়াচ্ছে। সে দেখা করতে যাবে তার গার্ল ফ্রেন্ডের সাথে। হঠাৎ রুমে ঢুকলো শফিক। তার হাতে চকচকে একটি মানিব্যাগ। রফিকের বরাবরই শফিকের জিনিসের ওপর চোখ। সে মানিব্যাগটি কেড়ে নিয়ে বলল, ‘মানিব্যাগ কিনেছিস? আগে বলবি না? আজ যাব তোর ভাবীর সাথে দেখা করতে। মানিব্যাগটা তো দামি মনে হচ্ছে। কোত্থেকে কিনলি রে!’
শফিক হাঁপাতে থাকল। রফিক দেখল, শফিকের গায়ে নতুন শার্ট। রফিল বলল, তোর শার্টটা তো বেশ সুন্দর। দেখি! খোল তো। আমি গায় দিয়ে দেখি। রফিক শফিকের গা থেকে শার্টটি খুলে গায়ে দিয়ে বলল, ‘দেখেছিস! আমাকে কী রকম মানিয়েছে।’
এ দিকে শফিকের নিশ্বাস নিতে নিতে হয়রান হওয়ার পালা। রফিক বাসা থেকে বেরুলো শফিকের শার্ট গায় দিয়ে। সাথে মানিব্যাগটাও পুড়ল পকেটে।
মোড়ের কাছে আসতেই মানুষজন ধর ধর মার মার বলেই এগিয়ে এলো রফিকের দিকে।
রফিক কিছু বোঝার আগেই আমজনতার হাতে উত্তম-মধ্যম খেলো। একজন বলে উঠল, ‘পকেটমারি করে আবার নায়কের বেশ ধরে হাঁটা! কী বুঝেছিলি তোকে কেউ চিনতে পারবে না?’ বলেই পিঠে ধড়াম করে কিল বসিয়ে দিলো একটা।
রফিক ফিরে এলো মুখ কালো করে। তার গায়ের শার্টটি ছিঁড়ে গিয়েছে। রফিক শফিককে কাঁদো কাঁদো গলায় বলল, ‘মোড়ের কাছে যেতেই মানুষজন আমাকে উত্তম-মধ্যম দিয়েছে রে!’
রফিক ভেউ ভেউ করে কাঁদতে শুরু করল।
শফিক বলল, ‘আমি একটু আগে পকেট মেরে তোর বাসায় এসেছিলাম। সেই মানিব্যাগ নিয়ে তুই বেরিয়েছিস। আর সাথে আমার শার্টটিও পড়েছিস গায়ে। হে হে হে হে হে! তোকে কেমন বোকা বানালাম বল।’
রফিক ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে শফিকের দিকে। শফিক হাসে!
হে হে হে!

 


আরো সংবাদ



premium cement