২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

  মতি ভাই ও কিছু বাস্তবতা

-

মন খারাপ করে বসে আছেন মতি ভাই। কারণ কী জিজ্ঞেস করলে কোনো কিছুরই উত্তর মেলে না। সবার উৎকণ্ঠা মতি ভাইয়ের কী হলো। কেনইবা তিনি নিজেকে কথাবার্তা থেকে দূরে রেখেছেন। মতি ভাইয়ের স্ত্রী এতক্ষণ বিষয়টা অবলোকন করছেন। তেলেবেগুনে জ্বলে উঠে বললেন, এসব ভং বাদ দিয়ে তাড়াতাড়ি বাসাটা মুছে দাও। আজ কত দিন হলো বাসা মুছতেছো না। কী রকম ময়লা হয়েছে খেয়াল করেছো?
মতি ভাই একরকম বিরক্তি নিয়ে স্ত্রীর দিকে তাকালেন। গতরাতের ঘটনাটা মনে করে তার বিরক্তি আরো বেড়ে গেল। মশারি টানানো নিয়ে প্রতিদিনই এক প্রকার যুদ্ধ হয়ে যায়। কে আগে টানাবে সে কারণে না। মূলত কে মশারি টানাবে তা নিয়েই যুদ্ধ। বরাবরের মতো মতি ভাই পরাজিত হন। বিয়ে হলে সম্ভবত সব স্বামীকেই মশারি টানাতে হয়। এ এক অদ্ভুত নিয়ম। মতি ভাইয়ের এসব নিয়ম ভালো লাগে না। এটা এক ধরনের স্বৈরাচারী মনোভাব। মনের মধ্যে কষ্ট নিয়ে বেঁচে আছে মতি ভাই। স্ত্রীকে সাহস করে অনেকবার বলতে গিয়েও বলেননি তিনি। কিন্তু আর কত সহ্য করা যায়। কোথায় একটু আরাম করে ঘুমাবেন তা না তাকে মশারি টানাতে হবে। গতরাতে মতি ভাই অনেক ক্ষেপে যান। খাওয়া শেষে খাটে শুয়ে একটু ফেসবুকিং করছেন তিনি। এমন সময় স্ত্রী এসে বললেন, ঘটনা কী, শুয়ে আছো কেন?
- আমি দাঁড়িয়ে থাকব নাকি?
- আমি কি তোমাকে দাঁড়িয়ে থাকতে বলেছি?
- এত প্যাঁচাল করো না। কাহিনী কী, বলো।
- কাহিনী কিছু না। এতক্ষণ হলো এখনো মশারি টানাচ্ছো না কেন?
- মানে কী?
- তাড়াতাড়ি মশারি টানাও।
মতি ভাই স্ত্রীর নির্যাতন সহ্য করে থাকেন। ইচ্ছে থাকার পরও প্রতিবাদ করতে পারেন না। তিনি জানেন, প্রতিবাদ করলে তার ওপর অন্য আরেক শাস্তি প্রয়োগ করা হবে। তাও এবার বেশ সাহস করে বললেন, আমি আর মশারি টানাবো না।
- তাহলে কে টানাবে?
- এখানে আমি আর তুমি আছি। আমি না টানালে তুমি টানাবে।
- বেশি বাড়াবাড়ি হচ্ছে কিন্তু।
- বাড়াবাড়ি হলে কিচ্ছু করার নেই।
মতি ভাইয়ের স্ত্রী ক্ষেপে যান। তিনি মশারিটা নিয়ে পাশের রুমে গিয়ে ঘুমান। মতি ভাই মশারি ছাড়াই ঘুমান। মশার কামড়ে অতিষ্ঠ হয়ে যান তিনি। সারারাত ঘুমাতে পারেননি। সকালে উঠে দেখেন সারা শরীরে মশার কামড়ের দাগ। এ অবস্থা দেখেই মতি ভাই অনশন করলেন। কারো সাথে কোনো কথা বলবেন না। সবাই বুঝল মতি ভাইয়ের কিছু না কিছু হয়েছে কিন্তু তার স্ত্রী বুঝলেন না। তিনি এখন এসে বলেন বাসা মুছে দিতে। এ কেমন নিষ্ঠুরতা। এই নিষ্ঠুরতার শেষ কোথায়। মতি ভাই তা জানেন না।
রাগ করে লাভ নেই। স্ত্রী যা বলল তাই করতে হবে। তাড়াতাড়ি করে বাসা মুছতে লাগলেন মতি ভাই। মতি ভাই ভাবলেন এবার তার স্ত্রীকে একটা উপযুক্ত শাস্তি দিতে হবে। ডিটারজেন্ট পাউডার পানিতে মিশিয়ে বাসা মুছছেন মতি ভাই। তার চিন্তা হলো রান্নাঘরের পাশ দিয়ে মোছার সময় একটু পানি রেখে দেবে। আর রান্না ঘর থেকে আসার সময় স্ত্রী আছাড় খেয়ে ধপাস করে পড়ে যাবে। আর মতি ভাই তা দেখে উচ্চস্বরে হাসবেন।
যা চিন্তা তাই করলেন। মতি ভাই অপেক্ষা করছেন কখন তার স্ত্রী এ দিকে আসবে আর আছাড় খাবে। এটি ভাবতে ভাবতে মতি ভাইয়ের স্ত্রী ডাক দিলেন মতি ভাইকে। নাশতা বানিয়েছেন তা রান্না ঘর থেকে নিয়ে আসার জন্য তাকে ডাকছেন।
মতি ভাই খুশি হয়ে গেল। যাক শেষ পর্যন্ত স্ত্রীর মনে একটু হলেও ভালোবাসা জন্মেছে। তাড়াতাড়ি করে রান্নাঘরে যেতে লাগল মতি ভাই। রান্নাঘরের সামনে আসতেই ধপাস করে পড়ে যান মতি ভাই।
এ অবস্থা দেখে মতি ভাইয়ের স্ত্রী বললেন, তোমার প্ল্যান আমি ধরে ফেলি। তাই তোমাকে শাস্তি দিতেই তোমাকে রান্নাঘরে ডেকেছি।


আরো সংবাদ



premium cement

সকল