বসগিরি
- মোহাম্মদ মাঈন উদ্দিন
- ১৭ অক্টোবর ২০১৯, ০০:০০
কছম আলী একটি সরকারি প্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা। তিনি বর্তমানে কর্তৃপক্ষের কৃপাদৃষ্টিতে আছেন। কৃপাদৃষ্টি তার নিজস্ব দৃষ্টিকে হরণ করেছে। তাকে করেছে অন্ধমনা। পাঁচ ফুট দুই ইঞ্চির এই গেদু চাচা বুকটাকে টানটান করে চলেন বলে তার উচ্চতা দুই ইঞ্চি বেড়ে হয়েছে পাঁচ ফুট চার ইঞ্চি। চলার সময় মাটি থেকে দুই ইঞ্চি উপর দিয়ে হাওয়ায় ভর দিয়ে হাঁটেন তিনি। গায়ে মাছি বসলে রামদা হাতে নেন মাছি মারতে। কছম আলী সিগারেট টেনে টেনে রুমে গন্ধ ছড়ায়। দুর্গন্ধ। এই দুর্গন্ধ দূর করতে দুই ঠোঁটে মারেন বডি স্প্রে আর বাতাসে এয়ার ফ্রেশনার। কিন্তু ডাস্টবিনে একাধিক সিগারেটের প্যাকেট থাকলে উপুর হয়ে দামি মোবাইল দিয়ে ভিডিও নিয়ে সন্দেহজনক কর্মচারীদের কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়ার সুপারিশ করেন। কেউ ভুল করলে কছম আলী চিতাবাঘের মতো চেতে যান। কর্কশ কণ্ঠে বলেন, ‘আপনারা আমাকে শান্তিতে চাকরি করতে দিবেন না বুঝি? আমিও তো ড্রাফট করি। কৈ, কখনো তো ভুল হয় না।’
একবার একজন বলেই ফেলল, ‘বস, কাজ করলে ভুল হবেই। যার কোনো ভুল হয় না সে হয় দেবতা; নয় শয়তান। কারণ শয়তান যা করে সবই শয়তানি, এতে ভুলের কিছু নেই! আপনি নিজেকে কোনটা দাবি করেন?’
গেদু চাচা চলেন হন হন করে। বাতাসও তার কাছে হার মানে। কাউকে কাজবিহীন দেখলে তিনি এক ডজন উপদেশ ছুড়ে দেন। কোনো শিশুকে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে জোরপূর্বক ট্যাবলেট গিলানো যেমন ওই শিশুটির কাছে বিরক্তিকর, অনুরোধে ঢেঁকি গেলা যেমন সবার কাছে বিরক্তিকর। তেমনি কছম আলীর উপদেশগুলো জনমনে উষ্মার উদ্রেক ঘটায়। তিনি বলেন, ‘আরে মিয়া, বসে থাকার চেয়ে বেগার খাটা ভালো। কাজ না থাকলে হাত-পা পকেটে গুঁজে বসে থাকবেন না।
আমি বিলাত হতে কত টাকা খরচায় একটা কুকুর কিনে আনলাম অথচ তার লেজটা নব্বই ডিগ্রি বাঁকা। অন্তত এই লেজটা মালিশ করুন। সোজা করুন।’
কছম আলী টেবিলে পা উঠিয়ে নাকে তেল দিয়ে গরগর শব্দে ঘুমান। ‘স্যার, ড্রাফটা একটু দেখে দিবেন?’Ñএমন ডাকে তিনি লাফ দিয়ে ওঠেন। চোখ কচলাতে কচলাতে দাঁত বের করে হুঙ্কার ছাড়েন, ‘সময়ে-অসময়ে আপনারা আমাকে ডিস্টার্ব করেন, এত যন্ত্রণা আর সহ্য করা যায় না। আরে ভাই, মাথা তো আমার একটা; তাও এটা তো আর কম্পিউটার নয়। প্রতিষ্ঠানের প্রধান এসি রুমে তন্দ্রা যায় আর এ দিকে প্রতিষ্ঠানের ভালোমন্দ আমাকেই দেখতে হয়।’
একেই কিনা বলে বাঁশের চেয়ে কঞ্চি বড়। মোদ্দা কথা, কছম আলী কর্তৃপক্ষের কৃপাদৃষ্টিকে পুরোপুরি সৎ-অসৎ ব্যবহার করতে চাচ্ছেন, কর্তৃপক্ষের কৃপাদৃষ্টির ছায়াতলে তিনি তৈলাক্ত পাঙ্গাশ মাছ খেয়ে খেয়ে পেটে তেল বাঁধাই করছেন, কারণ তিনি জানেন, সময় হলো এক বৃদ্ধ যাযাবর। যে সময় এখন তার বাহুবন্ধনে আবদ্ধ, তা হয়তো একদিন তাকে ঝেড়ে ফেলে ব্যাঙের মতো লাফাতে লাফাতে চলে যাবে অন্য কারো কাছে, অন্য কোনো স্থানে।