মতি ভাই ও কিছু স্মৃতি
- তারেকুর রহমান
- ০৩ অক্টোবর ২০১৯, ০০:০০
উপুড় হয়ে শুয়ে আছে মতি ভাই। মাথার ওপর একটা বালিশ দিয়ে তার ওপর হাত দিয়ে চেপে রেখেছেন। রুমে একটা ডিম লাইট জ্বালানো। রুমে ঢুকেই মতি ভাইকে দেখে অবাক হলাম। এ কোন সিস্টেমে ঘুমাচ্ছে সে। টিপটিপ পায়ে তার কাছে গিয়ে বসলাম। না, সে একটুও টের পায়নি। পিঠে হালকা টোকা দিয়ে বললাম,
-মতি ভাই কেমন আছেন?
মতি ভাই লাফ দিয়ে উঠে বলে,
-কে কে কে, তুই?
চোখ লাল করে তাকিয়ে আছে আমার দিকে। আমি নিজেই ভয় পেয়ে গেলাম। বললাম,
-মতি ভাই আমি।
-অলক্ষ্মী, তুই আইসাই আমার ঘুম নষ্ট কইরা দিলি?
-এই অসময়ে কেউ ঘুমায় নাকি?
-শোন, মতি ভাইয়ের ঘুমের কোনো স্টেশন নাই। তার যখন ইচ্ছা ঘুমের গাড়ি চলব। আর যখন ইচ্ছা হবে না তখন হরতাল চলব।
-বুঝালাম। কেমন যাচ্ছে দিনকাল?
এক দীর্ঘশ্বাস ফেলে মতি ভাই বলল,
-ভালো যাবে কি করে? পরিস্থিতি খুব খারাপ যাচ্ছে।
-কেন কি হয়েছে?
-তোর ভাবী বলে দিয়েছে ভালো কিছু না করলে সে বাপের বাড়ির পথ ধরবে।
-ভালো কিছু মানে কি?
-এই ধর চাকরিবাকরি...
-আপনার আর চাকরিবাকরি কিভাবে হবে? চাকরির বয়স গত হয়েছে অনেক বছর আগে।
-তা জানি কিন্তু কিছু একটা তো করতে হবে।
-এত বছরে পারলেন না, আর এখন বুড়া বয়সে ভীমরতি ধরছে।
-কি কইলি?
এই কথা বলে মতি ভাই আমাকে তাড়া করতে লাগলেন। অন্ধকারে গ্রামের ডোবানালা সব মাড়িয়ে ও আমাকে ধরতে পারেনি। বুড়া বলাতে মতি ভাই বেশ রাগ করেছে। একটু আগে গেলাম মতি ভাইয়ের কাছে ক্ষমা চাইতে। মতি ভাই তার স্টেডিয়ামে মেহেদি লাগাচ্ছে। মাথায় বড়জোর বিশটা চুল হবে। পেছনের চুলগুলো একটু বড় রাখে। যেন চুলগুলো টেনে এনে চান্দিটা একটু ঢেকে রাখা যায়। আমার উপস্থিতি টের পেয়ে মতি ভাই বলল,
-বদমাশটা আবার আইল।
-মতি ভাই আমার ভুল হয়ে গেছে তাই ক্ষমা চাইতে আসলাম।
-ও
-আরে আপনার তো বয়সই হয় নাই। এখনো যুবক যুবক লাগে।
- হাওয়া কম দিছ। মেজাজ গরম হয়ে আছে। পরে মাইর খাবি।
-আচ্ছা ঠিক আছে কিছু বললাম না।
- শোন, আমার বয়স একটু বেশি হলেও চেহারাটা অত খারাপ না।
-হুম একদম নায়কের মতো।
-এই যে ফেসবুকে এখনো মেয়েরা আমাকে কত মেসেজ দেয়। আমার চেহারার সে কি প্রশংসা করে। আমার খানদানি চান্দিটা তাদের অনেক ভালো লাগে। অবশ্য তোর ভাবী এসব বুঝতে চায় না।
-আচ্ছা
-ওইদিন একটা মেয়েতো প্রেমের প্রস্তাব দিয়েই দিলো, এই দেখ মেসেজটা দেখ।
মতি ভাই মেয়েটার মেসেজ দেখাল। মেয়ের নাম দেখে আমি মিটিমিটি হাসতেছি। এঞ্জেল শাহানা নামের মেয়েটি মতি ভাইকে প্রেমের প্রস্তাব দেয়। কিন্তু এই এঞ্জেল শাহানা যে ফেইক আইডি আর এটা যে আমার বন্ধুদের কাজ, তা মতি ভাই জানে না। মতি ভাই বিবাহিত এটা সবাই জানে। জানে না মনে হয় মতি ভাই নিজেই। না হয় এখনো কোনো মেয়ের মেসেজে মতি ভাই এত বেশি খুশি হয় কেন? শুনেছি চ্যাটরত অবস্থায় কয়েকবার স্ত্রীর কাছে হাতেনাতে ধরাও খেয়েছেন।
-মতি ভাই বাংলাদেশ আর আফগানিস্তানের মধ্যকার টি-টুয়েন্টির ফাইনাল কোথায় হওয়ার কথা ছিল?
- মিরপুরে। হঠাৎ এই প্রশ্ন? তোর মতলবটা কি?
-না কিছু না, খেলাটা এখানে হলেও খারাপ হতো না?
- কোথায়?
-মতি ভাই রাগ করো না, তোমার মাথার যে অবস্থা। এখানেই ম্যাচটা হতে পারত।
-দাঁড়া দেখাচ্ছি মজা।
মতি ভাই হাতে থাকা মেহেদির বাটিটা আমার গায়ের দিকে ছুড়ে মারল। এরপর আমাকে তাড়া করতে লাগল। কোনোরকম জান বাঁচিয়ে চলে এলাম।
এসেই তারে নিয়ে লিখলাম। ভাবছি তারে দেখামু। কিন্তু খুব মাইন্ড করব মতি ভাই। তাই আর দেখালাম না।