কানাইয়ের নির্বুদ্ধিতা
- রবিউল ফিরোজ
- ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ০০:০০
আলিমুদ্দিন মিয়ার একমাত্র ছেলে বুদ্ধিমান কানাই। অবশ্য কেউ কেউ কানাইকে নির্বোধ বলে ঠাট্টা-মশকারা করে। তাতে কানাইয়ের কিছু আসে যায় না। তার কথা, নিজের বুদ্ধিতে ফকির হমু, কিন্তু অপরের বুদ্ধিতে বাদশা হমু না।
সেই কানাই একদিন শহরে যাওয়ার জন্য বের হলো। বাবা আলিমুদ্দিন মিয়া ট্রেনের টিকিট কেটে ছেলের হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলল, ‘বাজান, টিকিটটা খুব সাবধানে রাখিস, হারায় না য্যান।’
ছেলে কানাই বাপের কথা অক্ষরে অক্ষরে পালন করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। প্ল্যাটফর্ম থেকে বাপ সরতে না সরতে কানাই হাতের টিকিটটি পায়ের জুতার মধ্যে লুকিয়ে রাখল। নিরাপদ জায়গা। সুতরাং হারানোর ভয় নেই। স্টেশনে ট্রেন আসতেই সে ভিড় টপকে এক ঝাঁকিতে উঠে পড়ল। পরম শান্তিতে কানাই রওনা দিলো ঝকঝকাঝক ট্রেনে চড়ে। ট্রেনেও চরম ভিড়। দাঁড়ানোর জায়গা নেই বললেই চলে। লোকজন বাদুড়ঝোলা হয়ে গন্তব্যে যাচ্ছে। এরই মধ্যে আবার টিকিট চেকারের উৎপাত। এক হাতে বই আর আরেক হাতে কলম নিয়ে জনে জনে বলছেন, ‘টিকিট হইছে? টিকিট দ্যান।’
চেকার সাহেব টিকিট নিয়ে খচখচ করে সই করে দিচ্ছেন। এবার চেকার সাহেব কানাইয়ের কাছে এসে ভাব নিয়ে বলল, ‘টিকিট দাও দেখি।’
কানাইও ভাব নিয়ে বললেন, ‘টিকিট তো লইবেন, তয় জুতা খুলতে হইব। জুতা খুলব নাকি?’
চেকার সাহেব হকচকিয়ে গেলেন। ব্যাটা কয় কী? মানসম্মান ডুবিয়ে দেবে নাকি? অবস্থা সুবিধার মনে হলো না চেকার সাহেবের। তিনি অপর বগি থেকে আরেকজন টিটিকে ডেকে আনলেন। তিনি রাগতস্বরে কানাইকে বললেন, ‘মিয়া টিকিট ফ্যালাও।’
কানাই আগের মতোই ঠাণ্ডা মাথায় বলল, ‘টিকিট দিবো, তয় জুতা খোলার পর। খুলব নাকি জুতা?’
কানাইয়ের কথা শুনে মাথা ঘুরে গেল চেকারের। ছেলেটাকে মোটেও বিশ্বাস নেই! লোকজনের মধ্যে খুলতেও পারে পায়ের জুতা। ছিছি। পরিশেষে কানাইয়ের টিকিট না দেখেই বিদায় নিলো চেকারদ্বয়। সান্তাহার স্টেশনে পৌঁছতেই জিআরপি পুলিশ ধরে ফেলল কানাইকে। পুলিশের সাথে আছে দুই টিকিট চেকার। পুলিশেরও একই কথাÑ ‘টিকিট দেখাও মিয়া।’
কানাই তার পুরনো ডায়লগ আবার বলল, ‘তাইলে জুতা খুলব?’
পুলিশ বলল, ‘খুলো দেখি জুতা। আমরাও জুতা খুলতে জানি।’
এবার বাধ্য ছেলের মতো পায়ের জুতা খুলল কানাই। মোজার ভেতরে রাখা টিকিটখানি বের করে দিলো পুলিশের হাতে। কিন্তু তারপরও রেহাই পেল না কানাই। চেকারের অপমানের শোধ নিতে পুলিশের বেতের দুই ঘা পড়ল ওর ঊরুর ওপর। বাড়িতে ফিরে এলে আলিমুদ্দিন মিয়া ছেলেরে জিগান, টিকিট সাবধানে রাখছিলি বাজান?
কানাই ঊরুর ওপর মাইরের দাগ দুটো দেখিয়ে বলল, তুমার টিকিট সাবধানে রাখতে গিয়াই তো আমার বেহাল দশা। আলিমুদ্দিন মিয়া খুবই হতাশ হয়ে পড়ে। টিকিটওয়ালা লোকও যুদি মাইর খায়, তাইলে টিকিট ছাড়া যাত্রীর কী দশা হইবে? হ