সঙ্গী যখন লুঙ্গি
- রুহুল আমিন রাকিব
- ১৫ আগস্ট ২০১৯, ০০:০০
মফিজ ভাইয়ের কোনো ইচ্ছে ছিল না বিয়ে করার।
তার পরেও এই গরমে বিয়ে করতেই হবে। কারণ দুই বছর আগে থেকে বাড়ির লোকজন বিয়ের জন্য চাপ দিচ্ছে। যাই হোক এই গরমে আর রক্ষা নাই। এবার বিয়ে করতেই হবে। মফিজ ভাইয়ের কারণে ওনার কিছুদিনের জুনিয়র ভাইদের সিট ফাঁকা পড়ে আছে এখনো। আমি মফিজ ভাইকে বললাম, এই গরমে বিয়ে করলে আপনার কয়েকটা উপকার হবে। এর মধ্যে সব থেকে বড় উপকার হলো, নতুন বউয়ের জন্য প্রতি সপ্তাহে কয়েক প্রকার কসমেটিক্স কিনতে হবে। নামীদামি ব্র্যান্ডের ঠাণ্ডা দই, আইসক্রিমÑ এসব কিনে খাওয়াতে হবে। আমি শিওর, এসব জিনিস কিনতে গেলে মূল্য শুনে আপনার আত্মা বরফের মতো ঠাণ্ডা হয়ে যাবে।
আমি মফিজ ভাইকে অনেক বুঝিয়ে রাজি করালাম বিয়ে করতে। ওদিকে মফিজ ভাই বিয়ে করবে, এই কথা শুনে ওনার জুনিয়র ভাইদের আনন্দ দেখে কে? পারলে মফিজ ভাইয়ের ফোমশেভ করা গালে একটা চুমুও দেয়!
যাই হোক অনেক আনন্দের মধ্য দিয়ে বড় আয়োজন করে মফিজ ভাইয়ের বিয়ে দেয়া হলো।
তবে সমস্যা হলো অন্য এক জায়গায়। আর তা হলো আমাদের মফিজ ভাই জন্মের পরে আজ অবধি লুঙ্গি কী জিনিস তা হাত দিয়ে ছুঁয়েও দেখে নাই। পরা তো অনেক দূরের কথা। লুঙ্গি না পরার কারণ হলো, আজ থেকে অনেক বছর আগে মফিজ ভাইয়ের এক বন্ধু বেল গাছে লুঙ্গি পরে উঠেছিল।
সেদিন কী করে যে লুঙ্গিটা বেলের কাঁটার সাথে পল্টি বিঁধল। শত চেষ্টা করেও সেদিন লুঙ্গির কাঁটা ছাড়াতে পারে নাই। আর সেদিন লুঙ্গি গাছে রেখেই নিচে নেমেছে মফিজ ভাইয়ের বন্ধু। আর সেদিনের পর থেকে লুঙ্গি যেন মফিজ ভাইয়ের চরম শত্রু।
তবে এবার যে গরম পড়ছে! তার ওপর আবার নতুন শ্বশুরবাড়ি। সব সময় প্যান্ট পরে থাকলে লোকে কী বলবে! এসব সাত-পাঁচ ভাবতে ভাবতে হঠাৎ মফিজ ভাই তাকিয়ে দেখে, ওনার বউ হাতে একটা লুঙ্গি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। মফিজ ভাইকে ডেকে বলল, এই যে মিস্টার এবার প্যান্টটা খুলে লঙ্গি পরেন। যে গরম পড়ছে এই গরমে প্যান্ট পরে রাতে ঘুমাতে পারবেন না। কী আর করা, নতুন বউ বলে কথা! বাধ্য ছেলের মতো বউয়ের কথায় লুঙ্গি পরে রাতে শুয়ে পড়ল। পরের দিন সকাল বেলা মফিজ ভাইয়ের বড় শালা তন্ন তন্ন করে লুঙ্গি খুঁজে না পেয়ে তার বোনের কাছে বলল। উত্তরে বোন বলল, তোর দুলাভাই রাতে লুঙ্গি পরে ঘুমাইছে। দেখতো রুমে গিয়ে। এখনো মনে হয় ঘুম থেকে উঠে নাই।
বোনের কথা শুনে মফিজ ভাইয়ের শালা গিয়ে মফিজ ভাইকে ডাকতে যাবে। আর ঠিক তখনি তার চোখ পরে মফিজ ভাইয়ের নিচের দিকে! এ কী! দুলাভাইয়ের পরনে লুঙ্গি কই? এত দেখি শুধু একটা হাফপ্যান্ট পরে আছে। ভাগ্যিস রুমে ওই মুহূর্তে আর কেউ ছিল না।
মফিজ ভাইকে অনেক ঠেলাঠেলি আর ধাক্কাধাক্কি করে যখন ঘুম থেকে উঠান হলো। মফিজ ভাই নিজেও লজ্জায় লাল হয়ে গেল!
ওনার পরনের লুঙ্গি গেল কই? সেদিন অনেক খোঁজ করার পরে খাটের নিচে মফিজ ভাইয়ের লুঙ্গি পাওয়া যায়। সেদিন লজ্জায় মফিজ ভাই আর কারো সাথে কথা বলে নাই। প্যান্ট পরে বাড়ির পথে রওনা করেছে। আর কান ধরে তওবা করেছে, এই গরমে আর কোনো দিনও লুঙ্গি পরবে না। প্রয়োজনে বউকে সারা জীবন শ্বশুরবাড়িতে রাখবে।
আর কোনো দিন ওনি শ্বশুর বাড়ির নামও মুখে লইবে না। তবু বাকি জীবনেও আর লুঙ্গি পরবে না।