আমি বেকুব নই
- জোবায়ের রাজু
- ১৮ জুলাই ২০১৯, ০০:০০
অদিতি খানের সাথে আমার পরিচয় ফেসবুকে। বেশ রূপসী মেয়ে। রোজ তার আপলোড করা ছবিগুলো আসলেই মুগ্ধ হওয়ার মতো। ছবিগুলো আপলোডের সাথে সাথে শত শত লাইক-কমেন্টের ছড়াছড়ি দেখে অনায়াসে বোঝা যায় অদিতি খান একজন ফেসবুক সেলিব্রেটি। এই ফেসবুক সেলিব্রেটির সাথে খুব অল্প সময়ে আমার গুড রিলেশন হয়ে গেছে। ইনবক্সে দীর্ঘ আলাপচারিতায় অদিতি খান ফেসবুকে আমার অতি কাছের মানুষদের একজন হয়ে উঠেছে।
অদিতি খান ফেসবুক সেলিব্রেটি হোক আর যাই হোক, তার প্রতিদিনকার আপডেট দেয়া স্ট্যাটাসগুলো বেশির ভাগ আমার কাছে অবান্তর আর অবাস্তব মনে হয়। এই যেমন কিছু দিন আগে সে স্ট্যাটাসে লিখেছেÑ ‘এই মাত্র হেলিকপ্টারে করে শহর থেকে গ্রামের বাড়ি এলাম।’ সে স্ট্যাটাসে তার এক কাছের বান্ধবী কমেন্টে লিখেছেÑ ‘তোর সাথে এক ঘণ্টা আগে না গুলিস্তানে আড্ডা দিলাম? হেলিকপ্টার ভাড়া করে গ্রামে গেলি কখন?’ অদিতি বান্ধবীর কমেন্টটি ডিলিট করার আগেই ভাগ্যিস আমি দেখি গেছি। এমন আরো অনেক আজগুবি চাপা মারা স্ট্যাটাস কেবল অদিতির দ্বারাই সম্ভব।
সেদিন সকাল বেলা ফেসবুকে প্রবেশের কিছুক্ষণ পর আমার ইনবক্সে অদিতির সাড়া।
Ñবিদায় বন্ধু।
Ñমানে?
Ñআমি একটু পর কুয়েতে বাবা-মা’র কাছে চলে যাচ্ছি। তোমাদের অনেক মিস করব।
Ñতোমার বাবা মা কুয়েতে থাকেন বুঝি?
Ñরাইট। আমি এক্ষুণি মালামাল নিয়ে বিমানবন্দরে যাচ্ছি। বাই।
আমার মনে হলো অদিতির এটাও একটা সাজানো নাটক। এসবের কোনো মানে হয়? সেদিন সে আমায় মেসেজে লিখেছেÑ ‘জানো, আমাদের ইডেন কলেজের একটা সুন্দর ছেলে আমাকে আজ প্রেমপত্র লিখেছে। ছেলেটা একটা গাধা। আজকাল ফোন আর নেটের যুগে কেউ চিঠি লেখে?’
আমি অবাক হয়ে রিপ্লাই দিলামÑ ‘ওমা! ইডেনে ছেলেরা পড়ে নাকি?’
৫মিনিট পর অদিতির রিপ্লাইÑ ‘স্যরি আমার ভুল হয়েছে। ছেলেটি আসলে ঢাবির ছিল।’
এ রকম আরো অদ্ভুত সব চাপা মেরে মেরে অদিতি তার নেটের মেগাবাইট শেষ করে।
এই যে এখন সে কুয়েত যাবেÑ এটাও তার চাপা। কুয়েতে গেলে তোমার এখন নেটে কী? চাপার আর জায়গা পেলে না? দাঁড়াও ধরা দিচ্ছি আজ তোমায়। আজ তোমার জামিন নেই। চাপা মারা কত প্রকার ও কী কী দেখাচ্ছি। আমি গোয়েন্দা হয়ে তোমার কুয়েত যাওয়ার তদন্ত বের করছি।
এক দৌড়ে চলে গেলাম আমাদের তিনতলার রনির কাছে। রনি তার পড়ার টেবিলে বসে ফেসবুকে মগ্ন। আমি জলদি তার ফেসবুক আইডি থেকে অদিতির আইডিতে ঢুকে মেসেজ দিলামÑ
Ñহাই আপু।
Ñহাই। আপনাকে ঠিক চিনলাম না।
Ñচেনার কথাও না আপু। আমি আপনার ফ্রেন্ডলিস্টে নেই। একটু আগে আমার হোমপেজে আপনার আইডিটা দেখেছি। প্রোফাইলে আপনার সুন্দর ছবিখানা দেখে মুগ্ধ হয়ে মেসেজ করলাম। আপনার চেহারা আসলেই নাইস।
Ñতাই নাকি? ধন্যবাদ ভাইয়া। অনেকের ধারণা আমি বিউটি পার্লারে যাই, আসলে এটা তাদের ভুল ধারণা।
Ñতাই? তো আপু কী করছেন এখন? কোথায় আছেন?
Ñএই তো। শুয়ে আছি বাসায়। একটু পর চোখের ডাক্তারের কাছে যাবো হাসপাতালে।
Ñকেন কেন? আপনার চোখে বুঝি গুটি উঠেছে?
Ñনা না তা হবে কেন? আসলে দাদুকে নিয়ে হাসপাতালে যাচ্ছি। দাদুর চোখে সমস্যা।
Ñতাই নাকি? বাংলাদেশে আমার দাদুরও চোখে সমস্যা। আহা, কতদিন দাদুকে দেখি না।
Ñও আচ্ছা। আপনি দেশের বাইরে থাকেন?
Ñরাইট। আমি কুয়েতে থাকি। আছে নাকি কুয়েতে আপনার কেউ?
Ñজি না। কুয়েতে আমার কেউ নেই। শুনেছি কুয়েত নাকি অনেক স্ন্দুর দেশ।
Ñহ্যাঁ। আচ্ছা আপু আমি এখন কাজে যাচ্ছি। ভালো থাকবেন।
Ñওকে ভাইয়া। বাংলাদেশে এলে অবশ্যই বাসায় আসবেন।
Ñচুপ থাক চাপাবাজ!
Ñমানে?
Ñস্যরি আপু আমার বন্ধুকে মেসেজ লিখতে গিয়ে আপনাকে লিখে ফেলেছি। কিছু মনে করবেন না।
Ñওহ। নো প্রবলেম। এটা আমারও হয়।
এই হলো অদিতি খানের আইডির কাণ্ডকারখানা। রনির আইডি থেকে গোয়েন্দার মতো এই ঘটনা তদন্ত না করলে অদিতি খানের কুয়েত যাওয়ার বানোয়াট গল্প কিভাবে প্রমাণ পেতাম! অদিতি সবাইকে মদন ভেবে ফেসবুকে এভাবে ধোঁকা দিলেও আমাকে পারবে না। আমি তো আর সবার মতো বেকুব নই।