করম আলীর বাড়ি ফেরা
- মোহাম্মদ মাঈন উদ্দিন
- ২০ জুন ২০১৯, ০০:০০
করম আলী ও করিমন বিবি দুইজনের নামের প্রথম তিনটি অক্ষরে মিল থাকায় করম আলী প্রায়ই গেয়ে ওঠেÑ তোমারই নামে আমারই এই নাম, তুমি ছাড়া বাঁচি কী করে...। এবার করম আলীর ধৈর্যের পাহাড় ভেঙে খান খান হয়ে গেল। সে এবার প্রস্তাব করেই বসলÑ করিমন বিবি, এবারের ঈদটা আমরা একসাথে কাটাতে চাই। একসাথে মানে এক ঘরে, এক পাকে, এক বিছানায়। করিমন বিবির হৃদয়টা ধপাস করে লাফ দিয়ে উঠল, ‘এ তো আমার মনের কথা!’ সে কোনো আপত্তি করল না। সুতরাং আধা কেজি মিষ্টি বিতরণের মাধ্যমে সমাপ্ত হলো শুভ বিবাহ পর্ব। এই শুভ বিবাহের ফলে অশুভ বিপত্তি ভর করল করম আলীর ঘাড়ে।
নিজে নিজে বিয়ে করায় বাপ, কোরবান আলী সাফ বলে দিয়েছেÑ তুই এই বউ নিয়ে বাড়ি এলে সত্যিই আমি কোরবানি হয়ে যাবো। চরম দুঃখ ও ক্ষোভে করম আলী টপটপ করে দুই চোখের পানি ফেলল। বউ অবশ্য বলেছেÑ এবারের ঈদে পরিবারের সবার কাছ থেকে যে ভালোবাসা তুমি পেতে তার চেয়ে বেশি ভালোবাসা আমি তোমাকে দেবো। মনের দুঃখ বুকের মাঝে কবর দিয়ে করম আলী সিদ্ধান্ত নিলো এবারের ঈদ সে নতুন শ্বশুরবাড়িতেই কাটাবে। শ্বশুরবাড়ি ফেরার সব প্রস্তুতি সে সম্পন্ন করে ফেলেছে। লাল নাকি তারুণ্যের প্রতীক। তাই সে গায়ে তারুণ্যের ভাব ধরে রাখতে লাল টুকটুকে একটি শার্ট পরল।
কিন্তু শ্বশুরবাড়ি যাওয়ার মতো মানসম্মত প্যান্ট তার একটাই। সে প্যান্ট পরে জিপার বন্ধ করতে যাবে, এমন সময় ঘটে গেল আরেক বিপত্তি। জিপার আটকে গেছে। কিছুতেই ওপরের দিকে উঠছে না। করম আলী রাগে দাঁত কিড়মিড় করে দিলো এক হ্যাঁচকা টান। কাম সেরেছে। জিপার যে ছিঁড়ে গেল! সে ঘাড় নুইয়ে প্রত্যক্ষ করল জিপার ছাড়া প্যান্টটা সামনের দিকে ভেটকি মাছের মতো হাঁ করে থাকে। নিরুপায় হয়ে সে করিমন বিবিকে বললÑ সুই-সুতা দিয়ে জিপারটাকে শক্ত করে আটকে দিতে।
রেলস্টেশনে আসার পথে করম আলী একটি মার্কেটে ঢুকল শ্যালিকাদের জন্য হালকা-পাতলা শপিং করতে। শপিংয়ের একপর্যায়ে করিমন বিবি বললÑ তুমি একটা গরু। করম আলী ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে বললÑ গরু মানে? হঠাৎ গরুর প্রসঙ্গ এলো কেন? করিমন বিবি সামনে দেখিয়ে বললÑ ওই দেখো, একটি গরু আসছে। গরুটার গায়ের রঙ আর তোমার শার্টের রঙ একই। করম আলী মনে মনে বললÑ ঠিকই তো! ষাঁড়ের গায়ের রঙ আর আমার শার্টের রঙ একই! কিন্তু এ কী, বিস্ময়ে সে দেখল ষাঁড়টি তেড়ে-ফুঁড়ে তার দিকে ধেয়ে আসছে! করম আলী মুহূর্তেই নতুন বউয়ের মায়া ত্যাগ করে জীবনের মায়া বাঁচিয়ে রাখতে চোখ বন্ধ করে উত্তর দিকে দিলো ভোঁ-দৌড়। পেছনে তাকানোর মতো সময় করম আলীর নেই।
আধা কিলোমিটার দৌড়ানোর পর যখন নিজেকে নিরাপদ মনে করল ঠিক তখনই তার মনে পড়ল বউয়ের কথা। সে ভয়ে ভয়ে আগের জায়গায় এসে দেখে বউ নেই। সে ডানে-বামে, সামনে-পেছনে খুঁজল। অনেক খোঁজাখুঁজি করেও কোথাও পাওয়া গেল না। মনের দুঃখে করম আলী পাগলপ্রায়। এমন সময় সে দেখতে পেল ইঁদুর মারার ওষুধ বিক্রেতা মাইক দিয়ে ওষুধ বিক্রি করছে। সে একটি দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললÑ হায়রে আজব দুনিয়া! কারো পৌষ মাস, কারো সর্বনাশ। আমার বউ হারিয়েছে আর উনি মাইক দিয়ে ইঁদুর মারার ওষুধ বিক্রি করছেন। করম আলী ওষুধ বিক্রেতাকে অনুরোধ করে বললÑ ভাই, আমি মহাবিপদে পড়েছি। আমার বউকে কোথাও খুঁজে পাচ্ছি না। আপনার হ্যান্ড মাইকটা আমাকে দেন, একটি হাড়ানো বিজ্ঞপ্তি প্রচার করি। ওষুধ বিক্রেতা মুচকি হাসল। বললÑ ভাই, আপনি বরং মাইক ধরুন, আমি হারানো বিজ্ঞপ্তি প্রচার করি; বিনিময়ে ওষুধ বিক্রি করে যা পেতাম তা দিয়ে দিয়েন। করম আলী মাইক হাতে গুটি গুটি পায়ে সামনে এগিয়ে চলল, পেছন থেকে ওষুধ বিক্রেতা হাড়ানো বিজ্ঞপ্তি প্রচার করতে লাগলÑ একটি হাড়ানো বিজ্ঞপ্তি, এই মাত্র করম আলী ভাইয়ের বই দুঃখিত বউ হারানো গিয়াছে। যদি কোনো হৃদয়বান ব্যক্তি পাইয়্যা থাকেন তাহা হইলে করম আলী ভাইয়ের মন মন্দিরে ফিরাইয়া দেয়ার জন্য আমি ইঁদুরের ওষুধ বিক্রেতা আতর আলী আপনাদের কাছে বিনীত অনুরোধ করিতেছি। একটি হারানো বিজ্ঞপ্তি...