বৈশাখের মধ্যদুপুরে
- জোবায়ের রাজু
- ১১ এপ্রিল ২০১৯, ০০:০০
চার দিন ধরে সামিয়ার বিশেষ আবদার পয়লা বৈশাখে আমাকে পান্তা-ইলিশ খাওয়াতে হবে। আমি সামিয়ার অনুরোধ ফেলতে পারি না। আমাদের সম্পর্কের এখন দুই বছর চলছে। এ দুই বছরে মেয়েটা কখনো আমার কাছে কোনো কিছুর আবদার করেনি। অথচ আমার বন্ধু রকিকে ওর প্রেমিকা চৈতী দুই দিন পর পর দামি গিফট চেয়ে নাজেহাল করে ছাড়ে। সেই দিক থেকে সামিয়া হচ্ছে একেবারে দুধে ধোয়া তুলসী পাতা। আমার কাছ থেকে গিফট না পেয়েও ওর উচ্চ বাচ্য নেই।
সম্পর্কের এই দুই বছরের সীমানায় দাঁড়িয়ে সামিয়ার প্রথম আবদার বৈশাখে পান্তা-ইলিশ খাওয়ানোর। আমি একবাক্যে রাজি হয়ে গেলাম।
২.
আজ পয়লা বৈশাখ। সকালের ঘুম ভাঙে আমার মোবাইলের মেসেজ টোনে। সামিয়া মেসেজ পাঠিয়ে লিখেছেÑ শুভ নববর্ষ। আমি গুডহিল পার্কে বসে আছি। তুমি কখন আসবে?
বিছানা ছেড়ে ফ্রেশ হয়ে নাশতা সেরে গুডহিল পার্কের দিকে ছুটলাম। গুডহিল পার্কে আজ বর্ষবরণের আয়োজন চলছে। সেখানে পান্তা-ইলিশ বিক্রি হবে বলে তিন দিন ধরে মাইকে বিশেষ ঘোষণা প্রচার করা হয়েছে।
আমি এখন গুডহিল পার্কে সামিয়ার সামনে দাঁড়িয়ে। বৈশাখী শাড়িতে সামিয়াকে ইন্দ্রাণীর মতো লাগছে। ইন্দ্রাণী কি জানি না। প্রায়ই উপন্যাসে পড়ি সুন্দরী মেয়েকে ইন্দ্রাণীর সাথে তুলনা করা হয়। কাজেই ধরে নিয়েছি ইন্দ্রাণী কোনো অপূর্ব রূপবতী হবে। বৈশাখী সাজে সামিয়াকে লাগছে ইন্দ্রাণীর মতো।
‘ব্যাপার কী! এভাবে কী দেখছ আমাকে?’
‘আচ্ছা, তুমি নারী নাকি পরী?’
সামিয়া হেসে উঠল। হাসলে কোনো মেয়েকে এত সুন্দর লাগতে পারে, জানতাম না।
৩.
এই পড়ন্ত দুপুরে গুডহিল পার্কের দক্ষিণ পাশে যেখানে পান্তা-ইলিশের ব্যবস্থা করা হয়েছে, সে পান্তা-ইলিশের স্টলটি বেশ জমে উঠেছে। তবে শোনা যাচ্ছে পান্তা-ইলিশের প্রতি প্লেট নাকি ৮০০ টাকা। এটা শুনে আমার মাথায় যেন বাজ পড়ল। কারণ ভুল করে মানিব্যাগ বাসায় ফেলে এসেছি। যদিও মানিব্যাগে এত টাকা নেই। তবে কি আমার কাছে রাখা সামিয়ার প্রথম আবদার রক্ষা করা সম্ভব হবে না!
‘চলো পান্তা-ইলিশ খাবো।’
‘ইয়ে মানে...।’
‘কোনো সমস্যা?’
‘না। আচ্ছা চলো।’
আমরা পান্তা-ইলিশের স্টলে যাচ্ছি। জানি না কী হবে এখন! তার আগে একটা বুদ্ধি বের করে এখান থেকে পার হতে হবে। সামিয়াকে বললাম, ‘তুমি এখানে দাঁড়াও। আমি বন্ধু শুভকে একটু কল করব।’
মিষ্টি হেসে সামিয়া বলল, ‘ঠিক আছে।’
সামিয়ার থেকে ৩০ হাত দূরে এসে শুভকে ফোন দিয়ে বিস্তারিত সব বললাম। আমার বক্তব্য শুনে শুভ হেসে লুটোপুটি খায়।
‘হাসিস না শুভ। বুদ্ধি পেয়েছি একটা।’
‘কী?’
‘তুই তোর নাম্বার থেকে সামিয়াকে ফোন দিয়ে ডাক্তার সেজে বল যে আপনার মা ডায়রিয়ায় ভুগে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে।’
‘হা হা হা।’
‘হাসিস না তো! আমার বিশ্বাস, সামিয়া ওর মায়ের এমন সংবাদ শুনলে হাসপাতালে ছুটে যাবে। ব্যস, পান্তা-ইলিশের দায় থেকে বাঁচব।
‘ঠিক আছে, তুই সামিয়ার নাম্বার আমাকে মেসেজ করে পাঠিয়ে দে এখনই।’
শুভর নাম্বারে সামিয়ার নাম্বার মেসেজ করে পাঠালাম। কিছুক্ষণ পর সামিয়ার কাছে এসে দেখি ওর ফোন বাজছে। রিসিভ করল সেÑ ‘হ্যালো... জি সামিয়া বলছি। কে আপনি... ডাক্তার ইকবাল বলছেন? হাসপাতালে আমার মা ভর্তি মানে... কী হয়েছে মায়ের... ডায়রিয়া? মা আমাকে দেখতে চাইছেন? আচ্ছা, আমি এখনই আসছি। কোন হাসপাতাল? প্রাইম হাসপাতাল? ওকে, আসছি। আপনি জলদি মাকে স্যালাইন লাগান।’
সামিয়া ফোন রেখে দিয়ে বলল, ‘সর্বনাশ। হাসপাতাল থেকে এই মাত্র ডাক্তার ইকবাল ফোন করেছেন। আমার মায়ের নাকি ডায়রিয়া। আমি এখনই যাচ্ছি।’
বললাম, ‘পান্তা-ইলিশ খাবে না?’
উঁচুগলায় সামিয়ার জবাব, ‘পান্তা-ইলিশের গোষ্ঠী কিলাই। আমার মা বড় না পান্তা-ইলিশ বড়? গেলাম। বাই।’
বলেই সামিয়া দ্রুতপায়ে গুডহিল পার্ক থেকে বেরিয়ে গেল। সে দৃশ্য দেখে আমার হাসিও লাগছে আবার খারাপও লাগছে। কিন্তু কী করব, আমি যে নিরুপায়!