ছবি তোলার বিপদ
- আব্দুল্লাহ বিন রওহা তুহিন
- ০৪ এপ্রিল ২০১৯, ০০:০০
আমাদের মফিজ ভাইয়ের বয়স সবে চব্বিশ বছর। পড়ালেখার পাশাপাশি দোকানেও কাজ করেন তিনি। কিন্তু কয়েকদিন ধরে মফিজ ভাই অন্যরকম হয়ে গেছে। আমি এর কারণটা জানতে চাইলাম। উত্তরে মফিজ ভাই বললেন, আমার অনেক বন্ধু আছে। তাদের বাবা অনেক অর্থ আছে। তাই ওদের ফোন কিনে দিতে পেরেছে। কিন্তু আমার বাবা তেমন কাজ করে না, অর্থও কম। আমি দোকানে যা টাকা পাই তা বাবাকে দেই আর নিজের পড়ালেখা চালিয়ে যাচ্ছি। অনেক দিন ধরে ভাবছি একটা ফোন কিনব, কিন্তু আমার কাছে কোনো টাকা নেই! কিভাবে ফোন কিনব?
মফিজ ভাইয়ের কথা শোনার পর আমার অনেক খারাপ লাগল। লোকটা যেমনি হোক বড় ভাই তো। দেখি কী ব্যবস্থা করা যায়। পরের দিন আমার বাবার কাছ থেকে পাঁচ হাজার টাকা নিলাম। আমার কাছে যত টাকা ছিল সব মিলিয়ে মফিজ ভাইয়ের জন্য ভালো একটা স্মার্টফোন কিনে আনলাম।
সময় করে বিকেলে কলেজ মাঠে এসে বসতে বললাম মফিজ ভাইকে। আমার কথামতো ঠিক বিকেল ৪টার দিকে হাজির হলেন মফিজ ভাই।
বসে বসে গল্প করছি। কথার মাঝে ফোনটা বের করে মফিজ ভাইয়ের পুরাতন বাটন ফোন থেকে সিম খুলে সব সেট করে দিলাম।
১৬ জিবি মেমোরিসহ স্মার্টফোন উপহার। আহ কত আনন্দের ব্যাপার! মফিজ ভাইয়ের আনন্দের সীমা থাকল না। কী বলবেন তার ভাষা খুঁজে পাচ্ছেন না।
অনেক দিনের স্বপ্ন পূরণ করলাম আজ! আমিও খুশি, মফিজ ভাই এখন একটা গার্লফ্রেন্ড পাবে এই ভেবে।
নতুন ফোনের জন্য ১৮ জিবি দিয়ে, এবার মফিজ ভাই সুন্দর করে ফেসবুক আইডি খুলেছেন নিজের নাম দিয়ে। কিন্তু প্রোফাইলে নিজের ছবি এখনো দিতে পারেননি। কারণ, ফোনে একটাও নিজের ছবি নেই। ছবি তুলতে হবে! ভালো ছবি না পেলে গার্লফ্রেন্ড দূরের কথা, গার্লফ্রেন্ড কি চোখেও দেখতে পারবেন না। ছবি তোলার জন্য কোথায় যাবেন তা এখনো ঠিক করেননি। তবে ভালো ছবি তুলতে হবে! আমাকে রাত ১০টায় ফোন দিয়ে মফিজ ভাই বললেন, কাল বিকেলে একটা পার্ক যাবো! ভালো ভালো ছবি তোলার জন্য। সব খরচ আমার।
আমি সকালে বাবার কাছে এক হাজার টাকা চাইলাম। বাবা কিছুতেই দিতে রাজি হলেন না। আমাকে বললেন, তুমি কিছু দিন আগেই পাঁচ হাজার টাকা নিয়েছ। ওই টাকা কী করেছ?
আমি মফিজ ভাইয়ের কথা উল্লেখ না করে চুপ করে থাকলাম। আর মিথ্যা কথা হিসেবে বললাম, ওই টাকা একজন ধার নিয়েছে। পরে দেবে।
যা হোক, বাবা মাত্র এক শ’ টাকা দিলেন। আমি টাকা নিয়ে কলেজ মাঠে এলাম। মফিজ ভাই আগেভাগে আমার জন্য বসে আছেন। আমরা গাড়ি করে আনন্দ পার্কে চলে গেলাম। আহ বাইরে কী সুন্দর! না জানি ভেতরে কেমন হবে?
টিকিট কাউন্টার থেকে টিকিট কিনলাম। প্রতিজন ১৫০ টাকা। শুরু হলো ছবি তোলা। ছবি তোলার জন্য কোনো কিছুই বাদ রাখলেন না মফিজ ভাই। তারপর ফুচকা খেলাম আমরা। দাম না শুনেই মফিজ ভাই গপাগপ করে খেয়ে ফেলেছেন অনেক। আমাকেও খেতে হলো।
এখন বিল দিলো দুই শ’ টাকা! আমাদের হাতে আর একটাও টাকা নেই! মনে হচ্ছে হেঁটে হেঁটে যেতে হবে। তবে আমরা চিন্তামুক্ত। কারণ, এই পার্ক থেকে বাড়ি এক কিলোমিটার। দশ-পনের মিনিট হাঁটলেই যাওয়া যাবে।
মফিজ ভাই ছবি তোলা নিয়ে ব্যস্ত পার্কের ভেতরে। অনেক হলো ঘোরাঘুরি, এখন বাড়ি যাওয়ার পালা। তখনই মফিজ ভাইয়ের চোখে পড়ল একটা সাইনবোর্ড। সাইনবোর্ডে লেখাÑ এখানে ছবি তুলবেন না। তুললে এক হাজার টাকা জরিমানা।
সাইনবোর্ডের লেখাপড়া শেষ করতে না করতেই একজন দারোয়ান এসে হাজির হলো। বলল, এক হাজার টাকা দেন। না দিলে আপনার মোবাইল নিতে বাধ্য হবো।
আমি বললাম, আমাদের হাতে এখন টাকা নেই। আমাদের যেতে দিন।
দারোয়ান বলল, না। আপনি আপনার ফোন দিন।
এসব বলতে না বলতে মফিজ ভাইয়ের হাত থেকে ফোন কেড়ে নিলো। আর ফেরত দিলো না।