আতঙ্কাপু
- মুহাম্মাদ সোহাগ
- ০৪ এপ্রিল ২০১৯, ০০:০০
ঘোড়ার ডিম হয়েছে নাকি ডিমের ঘোড়া হয়েছে ওসব বিবেচনা করার টাইম নেই। আর টাইম থাকলেও ওসব বিবেচনা করে সেই টাইমটা নষ্ট করতে চাইতাম না কখনো। কিছু একটা লিখে ফেলেছি, সাথে সাথে ফেসবুকে আপলোড করে দিতাম, বানানে ভুল আছে কি না সেটাও দেখতাম না। এক সময় এটাই ছিল আমার এক প্রকার নেশা।
তখন ফেসবুকে দু-এক দিন পরপরই যখন-তখন নিজের লেখা ছড়া বা গল্প পোস্ট করতাম। কেউ কেউ সেই ছড়াগুলোর ভুল ধরে সমালোচনামূলক মন্তব্য করতেন। তাতে বেশ মন খারাপ হতো। এক সময় বুঝতে পারলাম, তারা আসলে আমার অত্যধিক উপকারই করেছেন। তবে বেশির ভাগ ফেসবুক-বন্ধুই আমার সেই অল্প মানসমৃদ্ধ লেখাগুলোতে গতানুগতিক মন্তব্যের মাধ্যমে খুব প্রশংসা করায় আমি খুব উৎসাহ পেতাম। যার ফলে আমি লেখালেখি বাদ না দিয়ে আজো চালিয়ে যাচ্ছি।
আমাকে উৎসাহ প্রদানকারী সেই সব ফেসবুক-বন্ধুদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন এক আপু। সেই আপুটা সব সময়ই অন্যদের থেকে ব্যতিক্রম ও বুদ্ধিদীপ্ত মন্তব্য করে আমাকে অনেক উৎসাহ দিতেন। ওনার সাথে পরিচয়ের বেশ কিছু দিন পরে এক সময় মেসেজের মাধ্যমে আরো ভালোভাবে পরিচিত হচ্ছিলাম। মেসেঞ্জারে করা আমার প্রশ্নের উত্তরগুলো দিচ্ছেন আবার উনিও আমাকে প্রশ্ন করছিলেন। ওনার দু’টি সন্তান আছে জানার পর আমি প্রশ্ন করলামÑ আপনার বড় সন্তানের বয়স কত? শ্রদ্ধাভাজন বোনটি সে দিন আমাকে অবাক করে দিয়ে জবাব দিয়েছিলেনÑ কেন? কী দরকার? আমার বয়স কত সেটা অনুমান করার জন্য?
আরো আগে থেকে হলেও মূলত এই জবাবটার পর থেকেই উনাকে আমি চূড়ান্ত এবং স্থায়ীভাবে ‘আতঙ্ক আপু’র সংক্ষিপ্ত রূপ ‘আতঙ্কাপু’ বলে ডাকতাম। কারণ, উনি কমেন্ট বা রিপ্লাইয়ে সব সময় ব্যতিক্রম কিছু উপস্থাপন করতেন বলে আমি সব সময় আতঙ্কে থাকতাম এই ভেবে যে, না জানি উনি কখন কোনটা বলে ফেলেন! বলে রাখা ভালো, তিনি প্রথম থেকেই আমাকে ‘কবি ভাই’ বলেই সম্বোধন করতেন।
সেই আতঙ্কাপু ঢাকায় মহান একুশে গ্রন্থমেলা চলাকালে ফেসবুক মেসেঞ্জারের মাধ্যমে মেসেজ করে বললেনÑ কালকে বইমেলায় যাবো। মেলায় কোন বইয়ে আপনার ছড়া আছে?
আমার লেখা ছড়া কেউ পড়তে চায় ভেবে খুব আনন্দিত হলাম। তারপর নিজের পাণ্ডিত্য জাহির করার জন্য বললামÑ মেলায় কমপক্ষে ১০টা ম্যাগাজিনে আমার লেখা ছড়া বা কবিতা আছে (যদিও সত্যিকারেই তার চেয়ে বেশি ম্যাগাজিনেই ছিল।) আত্মসমালোচনামূলক একটা ভাব নিয়ে আরো বললামÑ বাদ দেন, আমার ছড়া পড়ার দরকার নেই।
তখন আতঙ্কাপুও আমাকে অবাক করে দিয়ে জবাব দিলেনÑ সে জন্যই তো বলছি, বইগুলোর নাম বলেন ওগুলো বাদ দিয়ে অন্য সব বই কিনব।
এবার নিশ্চয় বুঝতে পারছেন উনি কেন আমার জন্য আতঙ্কের কারণ ছিলেন। কেন আমি তাকে আতঙ্কাপু বলে ডাকি?