২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

বিবাহিত

-

মতিন সাহেব মস্ত বড় অফিসার। তিনিই অফিসের বস। তার ভয়ে সবাই কাঁপতে থাকেন। তিনি অফিসে ঢুকলেই পিনপতন নীরবতা নেমে আসে। তার মুখের ওপর কথা বলা তো দূরের কথা তার সামনে কেউ কথা বলতেও ভয় পায়? সবসময় মুখে এক ধরনের বিরক্তির চাপ দেখা যায়। এই ভয়ে তার কাছেও কেউ ঘেঁষতে চান না। তিনি যা বলেন তা ভুল হলেও সবাই সঠিক বলে সায় দেন। দেশী-বিদেশী বিষয় নিয়ে তার যে মত সেটার বাইরে কেউই কিছু বলেন না। সেদিন কলিগ জগলুকে ঢেকে নিয়ে গেলেন মতিন সাহেব। জগলুতো ভয়ে অস্থির হয়ে গেলেন কি জানি কি হয়। কাছে গিয়ে তার ভয় ভাঙল? সেখানে গিয়ে জগলুর সাথে খুচরা আলাপ করতে লাগলেন বস। কেন সে বিয়ে করে না জানতে চাইল। জগলু সহসাই বিয়ে করবে না সাফ জানিয়ে দিলেন। আগে তাকে স্টাবলিস্ট হতে হবে। মতিন সাহেব বিরক্ত হয়ে বললেন,
- আমি জিজ্ঞেস করলাম কবে বিয়ে করবে? আর তুমি কি ত্যানা প্যাঁছাইতেছ।
জগলু ভয় পেয়ে গেলেন। তাড়াতাড়ি উত্তর দিলেন,
- স্যার, এ বছরই বিয়ে করব।
- বিয়ে করাটা খুব জরুরি?
- না করলেও হয় স্যার।
- না করাটাই উত্তম।
- কি কন স্যার?
- হুম, ঠিকই বলছি। আমাদের দেখছো না কি অশান্তিতে আছি।
জগলু কিছু না বলে বসে থাকলেন।
মতিন সাহেবের যত মেজাজ কলিগদের সাথে। বাসায় গেলে পুরো কুল হয়ে যান তিনি। স্ত্রীর কথার বাইরে কোনো কথা বললে সেদিন হুলস্থূল কাণ্ড ঘটিয়ে বসেন। এক কথায় স্ত্রীর কথায় তিনি ওঠেন আর বসেন। স্ত্রীর প্রতি আনুগত্য প্রশংসার দাবি রাখেন। স্ত্রীর সামনে তার সব গর্জন চুপসে যায়। এইতো সেদিন দেখা গেল স্ত্রীসহ বাজার করতে গেছেন মতিন সাহেব। স্ত্রী তার হাতে ব্যাগগুলো ধরিয়ে দিয়েছে। তিনি সুবোধ বালকের মতো ব্যাগ নিয়ে স্ত্রীর পিছু পিছু ছুটলেন। বিক্রেতার সাথে দাম দস্তুর সব স্ত্রী নিজেই করে। মতিন সাহেব নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করেন।
বাসায়ও মতিন সাহেব অত্যাচারের শিকার। এত টাকা ইনকাম করলেও তার বাসায় কোনো কাজের লোক নেই। অফিস শেষে সবাই খুশি মনে বাসায় ফিরে যায়। কিন্তু মতিন সাহেব সম্ভবত বাসায় যেতেই বেশি ভয় পান। বাসায় গেলে সব কাজ তারই করতে হবে এই ভয়ে তিনি কুঁকড়ে ওঠেন। কিন্তু কিছুই করার নাই। বাসায় ঢুকেই জামা কাপড় পরিবর্তন করে মতিন সাহেবের মিশন শুরু হয়। রান্না ঘরের হাঁড়ি পাতিল ধোয়া থেকে শুরু করে মশারি টানানো পর্যন্ত মতিন সাহেব বেশ ব্যস্ত থাকেন। স্ত্রীও অবশ্য তখন অবসর থাকেন বলা যায় না। তিনি তখন সিরিয়াল দেখায় বেশ ব্যস্ত থাকেন। সিরিয়াল দেখার সময় পৃথিবী উল্টে গেলেও কর্ণপাত করবেন না। মতিন সাহেব ভয়ে কিছু বলেন না। মনে অনেক ক্ষোভ জমে আছে। অনেক রাগ জমে আছে। তার সে রাগ ক্ষোভ প্রকাশের জায়গা হলো অফিস।
অফিসের পক্ষ থেকে বার্ষিক পিকনিকের আয়োজন করা হলো। জগলু ছাড়া আর সবাই স্ত্রী নিয়েই পিকনিকে হাজির হয়ে গেলেন।
জগলু অবিবাহিত হওয়ায় তিনি একা। তবে এই মুহূর্তে তিনি বিয়ে করার বেশ প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করেন। তবে কিছুক্ষণ পরে তার ভুল ভেঙে গেল। পিকনিকে বিবাহিত দম্পতিগুলো দেখে তার বেশ হতাশ লাগল। স্ত্রীরা তাদের ব্যাগগুলো স্বামীর হাতে ধরিয়ে দিয়ে ঘুরছে আনন্দ করছে। স্বামী নামক লোকটার বুঝি কোনো আনন্দ থাকতে পারে না। অফিসের সাহসী পুরুষগুলোকে দেখা গেল স্ত্রীর সামনে নুয়ে পড়েছে। জগলু অবশ্য এর জন্য পুরুষদের দোষ দিতে লাগলেন। তার কথায় ওরা স্ত্রীকে শাসন করতে জানে না বলেই আজ এ অবস্থা। তিনি বিয়ে করলে তার স্ত্রী অবশ্য তার সাথে এমন করবে না বলে আশাবাদী।
কয়েক মাস পর জগলু বিয়ে করেন। এর কিছু দিন পর বার্ষিক পিকনিকের সময় চলে আসে। পিকনিকে গিয়ে জগলুকে বেশ ব্যস্ত দেখাচ্ছিল। স্ত্রীর কথায় ওঠে আর বসেন জগলু। স্ত্রীর কথা শুনতে শুনতে তার আর পিকনিক উপভোগ করা হলো না। জগলুও তার কলিগদের পথ অনুসরণ করল। হ

 


আরো সংবাদ



premium cement