ফন্দি
- আজম সিদ্দিক রুমি
- ১৪ মার্চ ২০১৯, ০০:০০
গাজীপুরে এসে চরমভাবে ফেঁসে গেছি। চলার পথে কতই না রুলস মানি। এ রুলস যে পুরোটাই তির্যক টাইপের। মেনে চলা অত্যন্ত কষ্টকর। সকাল দুপুর ঘুম ও উচ্চস্বরে কথা বলা নিষেধ, এনড্রয়েট ইউজ নিষিদ্ধ, গার্লফ্রেন্ড থাকলে ১৪৪ ধারা জারি। সৌভাগ্যের কপাল আমার। জরুরি কারণবশত ছুটি পাওয়া যায় না। কোচিংয়ে অনুপস্থিত হলে, অকারণে পরীক্ষা না দিলে মার্কস কম পেলে সবগুলোতে পানিশমেন্টসহ জরিমানার মতো পদে পদে চমৎকার নান্দনিক নিখ্ুঁত ব্যবস্থাও আছে। এমনিতো এডমিশনের প্যারা আর রুলসগুলো জীবনের নতুন এক জ্বালা। না মেনে কি উপায় পার পায়? প্রত্যহ মান্য করে চলতে হয়। ফাঁকি দেয়ার সুযোগ আছে তবে পরিচালকগণ মনের আকুতি কবিরাজ বা ওঝা বাবাদের ধ্যান থেকে সব বুঝে ফেলে। প্রত্যেক রুমে কমপক্ষে পাঁচ পাকতো পড়ে। সকালে তিনবার, দুপুরে রাতে। অনেকে জেগে থাকতে পারেন না। ঘুমিয়ে পড়েন। আমারও চরম ঘুম পেয়ে বসে। ঠিক তখনি চূড়ান্ত ঘুম। ঘুমের সাথে কি আর বেয়াদবি করা যায়? সকালের ঘুম বলে কথা! ভদ্র বেশে চাদর মুড়ি দিয়ে আহা সকালের ঘুমে কি শান্তি! শুনেছি আগে এডমিশনের ছাত্ররা পরিচালকের রুম ক্লোজ করে নাকি অসম্ভম মধুময় ঘুম দিত। এখন তা দেয়ার সুযোগ নেই। কারণ তিন পরিচালক তিন রুমে। পৃথক পৃথক থাকায় আরো বিপদ নেমে এসেছে এই প্যারাময় জীবনে।
২.
ছাদের রুম বলতে চাঁদের দেশে দুই পরিচালক থাকে। নোয়াখালী ব্লক নামে পরিচিত। আরেকটু ভিন্নমাত্রায় বলতে হয়। নোয়াখালীর আঞ্চলিক কার্যালয়। পরিচালক সাব যন কতা কয় আই কিচু বুঝি ন, আই কি করিয়ুম? (পরিচালক সাহেব যখন কথা বলেন তখন আমি কিছু বুঝি না, আমি কি করব?)
নিচতলা সামনের ব্লকটা রাজশাহী ব্লক। এই ব্লকটা প্রতিভাবনদের ব্লক। শুনেছি নোয়াখালী, বীর চট্টলার দিকে বেশি বেশি প্রতিভাবানেরা আছে। এই ব্লকতো সবাইকে হার মানায়। কি নেই এই ব্লকে? কবি সাহিত্যিক ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার থেকে শুরু করে থানার ওসি পর্যন্ত হয়ে আছে। সব রাজশাহীর অবদান। কারণ বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠ শিক্ষা নগরী রাজশাহী। মাঝে মধ্যে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতায় অসামান্য। অন্য দেশগুলোর চেয়ে রাজশাহীর উপশহর প্রথম সারিতে স্থান করে নেয়। এই ব্লকের নাম পদ্মা ব্লক।
আমার পাঁচমিশালি একটু আধটু কবিতা লেখার দারুণ অভ্যাস আছে। সবাইকে শুনিয়ে মুগ্ধ করি। সবাই বেশ মজাও অনুভব করে। এ কারণে অনেকে নাম ধরে ডাকে না। উপাধি দিয়ে বসল ‘পদ্মকবি’। অবশ্য চয়নকৃত নামটি আমার কাছে স্পেশাল। বেশ এনজয় করি। ডাকটি পছন্দনীয় বটে।
৩.
কপোতাক্ষ ব্লক। এই ব্লকে সব ভিনদেশীরা থাকে। ইচ্ছে হয় এই ব্লকে গিয়ে কিছু কবিতা লেখে নোবেল নেই। কিন্তু প্রিয় সনেটের কবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের কথা চিন্তা করে মনের সেটাআপে নতুন করে উইন্ডজ দিয়েছি।
তাদের রুমে যাওয়া যায় না তা কিন্তু নয়। নিত্যনৈমিত্তিক প্রযুক্তির ছোঁয়া নিতে একবার হলেও আমার পদার্পণ ঘটে। আর তখন নানা কৈফিয়ত দিতে হয়। কেন এসেছি?
চট্টগ্রামের গাঙচিল ব্লকে আমার বন্ধু থাকে। কিছু নোট আদান প্রদান করায় ব্যস্ত হয়ে পড়ি। বন্ধু এ মাসে ম্যানেজার। আমরা উত্তর বঙ্গের লোকজনের তরকারিতে ধনেপাতা না হলেও চলে কিন্তু এনাদের ধনেপাতা না হলে তরকারি পরিপূর্ণতা পায় না। এমনকি আলু ভর্তাতেও ধনেপাতা দেয়া বাদ যায় না। আমি এসব তরকারি খেতে পারি না। খুব কষ্টে থাকি। চলমান পরিস্থিতি আর সংখ্যা লঘুতায় কোনো মতামত গ্রহণ যোগ্যতা পায় না, নীরবে সয়ে যাওয়া ছাড়া উপায় থাকে না।
আজ পরিচালকের ফাইনাল পরীক্ষা!
আহা কি মজা কি মজা? একটা জরুরি ঘুম হবে, অনেক দিন ঘুম হয় না তা নয়। কিঞ্চিত সুযোগ পেলেই ঘুমাই। আর ধরা খেলেতো জরিমানার বিকল্প নেই। একবার ডাকায় ১০ টাকা, জাগার পরে আবার ঘুম পেলে আবার ১০ টাকা।
এমন করে পর্যায়ক্রমে চলতে থাকে। যতবার জাগি ঠিক ততবারই ১০ টাকা করে জরিমানা চক্রহারে বৃদ্ধি পায়। দিশেহারা হয়ে বাবার কাছে চিঠি লিখি। এই মাসে ঘুম ও ছুটি বাবদ কিছু অর্থ জরিমানা হয়েছে। এভাবেই বাবার কাছে চিঠি লিখে টাকা আদায়ের ফন্দি করি। হ