ঠেলার নাম বাবাজি
- এস আর শানু খান
- ১৭ জানুয়ারি ২০১৯, ০০:০০
আমাদের আঞ্চলিক ভাষায় একটা কথার প্রচলন আছে ‘বিপদে পড়লে বিড়াল গাছে ওঠে।’
বিপদের সময় মানুষ যে কতটা অসহায় হয়ে পড়ে সেটা নতুন করে বলে বোঝাবার নয়। যে পড়ে সেই বোঝে কত ধানে কত চাল। বহুত বছর আগের ঘটনা। তখন বাংলা ইংরেজি ফার্সি যে সালের কথায় কন ক্যান তখন কোনো সালই আবিষ্কার হয়ে পারেনি। তখন আমাদের পাশের গ্রামের এক চেয়ারম্যান খুনির গুলিতে খুন হয়েছিল। তখন আব্বুর সাথে বাড়ির সামনের জমি থেকে পেঁয়াজ তুলছিলাম। অবশ্য সেই জমি আর এখন জমি নেই। এখন সেখান দিয়ে নবগঙ্গা নদী বয়ে গেছে। এ বিষয়টি বললাম এ জন্য যে, ঘটনা আসলে কত পুরনো। তার মানে নবগঙ্গা নদীর জন্মেরও আগের ঘটনা। যা হোক, চেয়ারম্যান খুন হয়েছেন। সে যেরকম হুনো-বুনো চেয়ারম্যানই হোক না কেন চেয়ারম্যান খুন কথাটার তেজই অন্য রকমে গিয়ে ঠেকল। চার-পাঁচ গ্রামের মানুষের নামে একচেটিয়া মামলা করল চেয়ারম্যানের বংশের লোকেরা। শুরু হয়ে গেল মহা জঞ্জাল। এলাকার অবস্থা এমন হয়ে দাঁড়াল যে, টয়লেট করতে গেলেও পুলিশের সাথে দেখা হতো। ভাত খেতে গেলেও শান্তি মনে খেতে পারত না। কেননা মনে হতো পুলিশ বুঝি গালের দিকে তাকিয়ে রয়েছে। রোজ রোজ যাকে তাকে ধরে নিয়ে যেত থানায় আর নানাভাবে জেরা করত।
ওই গ্রামের এক পাগলের নাম ছিল ভিকু পাগলা। ভিকু পাগলার কাজকাম বলতে ছিল সারা দিন মানুষের আনাচ-কানাচ দিয়ে টৈ টৈ করে বেড়ানো আর মানুষ দেখলেই হাতের মাথায় যা পায় সেটা নিয়ে ঝাঁপ দিয়ে পড়ে। আর মুখ দিয়ে গুলির আওয়াজ করে ঠাস-ঠুস, কখনো বা অন্য সব অস্ত্রেও শব্দ করত মুখে। আর বলত এক পাও নড়াচড়া করবে না। চার পাশ ঘেরা হয়ে গেছে। এগুলো ভিকু পাগলা টিভিতে সিনেমা দেখে দেখে শিখেছিল। ও, সে কথা তো বলতে ভুলেই গেছিলাম তখন কুচোর মার একটি মাত্র টিভি ছিল। তার পরের ঘটনায় যাই। সে দিন রাতে এক বাড়ির গরুর গোয়ালে গরুকে খড় দেয়া গৌড়ার ভেতর শুয়ে আছে। হঠাৎ পুলিশের পায়ের আওয়াজ শুনে ফাল মেরে বেরিয়ে আসে ভিকু পাগলা। হাতে তার গরু পেটানো লাঠি। মুখে বিভিন্ন অস্ত্রের শব্দ করতেই পুলিশ ধরে কয় বাড়ি কসাতেই নানা ক্ষমতার ভয় দেখায় ভিকু পাগলা। পুলিশের মার আরো বেড়ে যায়। অবশেষে পুলিশ নিয়ে যায় থাকা থানায়। ভিকু পাগলার ভাবভঙ্গি দেখে পুলিশ ধরে নেয় যে ১০০০% এই ভিকু পাগলা জড়িত আছে চেয়ারম্যান খুনে। প্রথম দিন রিমান্ডে নিয়ে ধোলাই দেয় আর বলে, অস্ত্র কোথায়? যে অস্ত্র দিয়ে চেয়ারম্যানকে খুন করেছিস।
এবার ভিকু পাগলা বলে, অস্ত্র বাড়ির উঠোনে ত্রিশ হাত নিচে রাখা। পুলিশ এসে খুঁজে দেখে কিছু নেই। আবার শুরু হয় রিমান্ড! মারের চোটে ভিকু পাগলা নিজের অজান্তেই বলে যে অস্ত্র আছে গরুর গোয়ালের গৌড়ার ভিতর। পুলিশ এই দিন ভিকু পাগলাকে সাথে করে নিয়ে এসেছিল। আমরা দেখতে গিয়েছিলাম। সবাই বলছিল যে ভিকু পাগল মানুষ। পুলিশ সে কথায় কান না দিয়ে উল্টে বলছিল, ও বড় সন্ত্রাসী দলের লিডার। সে যে কি হাল ভিকু পাগলার। চোখমুখ মিসরের পিরামিডের মতো উঁচু নিচু হয়ে গিয়েছিল। এরপর যখন গরুর গৌড়ার ভিতর অস্ত্র পাওয়া গেল না, তখন ভিকু পাগলার বাড়ির উঠোনেই শুরু করল মারতে। এবার মারের চোটে ভিকু পাগলা একবার বলল, অস্ত্র আমার আব্বার বদনার ভিতর। আবার বলল, অস্ত্র আমার মার পানের কৌটার ভিতর। এরকম আবলতাবল বকছিল। অবশেষে পুলিশ যখন বুঝতে পারল ভিকু আসলেই পাগল তখন ছেড়ে দিলো। সে দিন থেকেই আমি বুঝেছিলাম ঠেলার নাম বাবাজি।