২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

বাহার ও তাহার উপহার

-

গ্রামের সবার কাছে ‘হাবলা’ নামে খ্যাত বাহারের মধ্যে কোনো প্রকার ঘাপলা নেই। না কখনো মিথ্যা বলে, না কাউকে কখনো কোনোভাবে ঠকায়।
তার সাথে হঠাৎ পাড়ার মোড়ের চায়ের দোকানে দেখা। দেখেই বুঝতে পারছি সে খুবই খোশ মেজাজে আছে। তার এত খুশির কারণটা না জেনে আমিও থাকতে পারছিলাম না। তাই প্রশ্ন করে ফেললামÑ কি রে বাহার, তোকে এত খুশি খুশি লাগছে। ব্যাপার কী?
আমার প্রশ্ন শুনে সেও জবাব দিলোÑ আজকে যে আমার কি খুশি লাগতাছে ভাইজান বুঝানোর মতো না।
-আচ্ছা বল্ শুনিÑ কেন এত খুশি হইলি।
-ভাই, অনেক অনেক উপহার আসছে।
-ও, বুঝছি। তাহলে তো খুব ভালো কথা, খুশি হওয়ার কথা। তা কে, কোথা থেকে পাঠাল?
-কইত্থিকা আবার! শ্বশুরবাড়ি থাইক্যা। শ্বশুর পাঠাইছে।
- কী কী পাঠাল?
-আমারে দেইখ্যা বুঝেন না কতটা খুশি হইছি। ছোট-খাটো উপহারে কি কেউ এত খুশি হয়?
-সেটাও তো কথা...
-অনেক কিছু পাঠাইছে। জুতা, লুঙ্গি, গামছা, শার্ট, প্যান্ট, গেঞ্জি, পাঞ্জাবিÑ সব, সব দিছে। বড়লোক শ্বশুরে এসবের সাথে ২০ হাজার টাকাও পাঠাইছে। দারুণ না!
-হ্যাঁ, দারুণ! তাহলে এটাই তোর এত খুশি হওয়ার কারণ?
-হ, ভাইজান।
বাহার সরলসোজা মানুষ। সে কাউকে ঠকায় না। কিন্তু প্রায় সময়ই দেখি অনেকেই ওকে নানাভাবে ঠকিয়ে যায়। আজ বাহারের শ্বশুর অনেক উপহার পাঠিয়ে বাহারকে খুশি করেছে। বিষয়টা চিন্তা করে খুব ভালো লাগছিল। এমন সময় হঠাৎ করে স্মরণ হলো, আমার জানা মতে তো বাহার এখনো বিয়ে করেনি। শ্বশুর, শ্বশুরবাড়ি... এসব কই পাইল! নাকি বিয়ে করছে আমি খবর পাইনি! বাহারের বিয়ের খবরাখবর আমি জানি না। ব্যাপারটা বেশ বিব্রতকর ও লজ্জাজনক মনে হচ্ছে। কিছুটা দুঃখ আর রাগও হচ্ছে। কেননা বাহারকে আমি খুবই স্নেহ করি। সেও আমাকে খুব শ্রদ্ধা করে। তার বিয়ের খবর আমি জানি না! এই অস্থির সময়টাকে আর সহ্য হচ্ছে না। তাই বিষয়টা আরো পরিষ্কার হওয়ার জন্য ওকে আবার জিজ্ঞেস করলামÑ আচ্ছা বাহার, তোর শ্বশুরবাড়ি যেন কোথায়?
এবারে অবাক হলো বাহার! বাহার কপাল কিছুটা কুঁচকে জবাব দিলোÑ কি যে কন ভাইজান! আপনে জানেন না, আমার শ্বশুরবাড়ি তো এই গ্রামেই। ওই যে ময়না, আমি তো ওরেই পছন্দ করি। ওরেই তো বিয়া করমু।
-ওরে এখনো বিয়া করিস্ নাই?
-কি যে কন! আমি বিয়া করলে আপনে জানবেন না? আপনেরে না জানায়া বিয়া করমু এইডা ভাবলেন ক্যামনে?
-বিয়ার আগেই তোরে এত উপহার দিলো?
-তা হইব ক্যান! ময়নার বাপ তো গরিব মানুষ সে এত কিছু দিতে পারব? ওইসব উপহার তো আমার দোস্ত বাবুলের শ্বশুর বাড়ি থাইক্যা পাঠাইছে।
এবার আমি অতিরিক্ত রকমের অবাক হয়ে আবারও প্রশ্ন করলামÑ তোর দোস্তর শ্বশুরবাড়ি থেকে তোর জন্য এত কিছু পাঠাইছে?
এবার বাহার বেশ খানিকটা দূরে সরে গিয়ে জবাব দিলোÑ আমার জন্য পাঠাইব ক্যান আমার দোস্তর জন্য পাঠাইছে।
-তাইলে তুই এত খুশি হইছস্ কেন? এত কিছু তো তোর জন্য না তোর দোস্তর জন্য।
-আরে ভাইজান, এতসব উপহার আমার জন্য না আইসা আমার দোস্তর জন্য আসার কারণেই তো আমি এত খুশি হইছি। দোস্ত খুশি আমি আরো হাজার গুণ বেশি খুশি। আর এতসব যদি কেউ আমারে দিত তাইলে এতণে তো আমি হাটপিল (হার্টফেইল) কইরা মইরা যাইতাম। মরন থাইক্যা বাঁচছি খুশি হওনের কথা না! ঘ

 


আরো সংবাদ



premium cement