২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

প্রপোজাল

-

মৌকে প্রথম দিন কলেজে দেখার পর রীতিমতো টাসকি খায় রবিন। তার পর থেকে কেমন যেন ঘুরান্তি রোগে ধরেছে ওর। সারাণ টরে টক্করে ও চক্করে ঘুরঘুর করে সময় কাটে। পড়াশোনা লাটে ওঠার জোগাড়। বাপের টাকা কাজের কাজে খরচা না করে, অকাজে-কুকাজে দিনরাত খরচা করছে। এমনিতে সমগ্র ক্যাম্পাসজুড়ে টো টো কোম্পানির ম্যানেজার হিসেবে দারুণ সুখ্যাতি রয়েছে তার। তার ওপর বাড়তি রয়েছে মেয়েঘেঁষা রোগ! বন্ধু মহলেও তাকে নিয়ে আড়ালে আবডালে হাসিঠাট্টা কিংবা রসিকতারও কমতি নেই। কিন্তু এসবে ডোন্ট কেয়ার রবিনের। ভাবখানা এমন, কোথাকার তুই কে রে? যা ভাগ এখান থেকে!
লজ্জা শব্দটাও তার কাছ থেকে মিনিমাম ২০০ গজ নিরাপদ দূরত্বে রাখে। মান-সম্মানের বালাই নেই রবিনের। সুতরাং অপমান ও অসম্মান নামক শব্দগুলো তার কাছে নেহায়েত পুস্তকে লিপিবদ্ধ কতগুলো নিছক শব্দ বৈ আর কিছুই নয়। বরং একগাল হেসে বলে, ‘দোস্ত রে এসবের টেরাই করে কোনো লাভ নেই। জীবনে কোনো দিন সিদ্ধি লাভ হবে না। পেটে ভুখ রেখে মুখে লাজ দেখিয়ে লাভ নেই। সুন্দরীদের জন্য কোমরজলে এবার ছিপ ফেলেছি কোমর বেঁধে। ছিপ না গিলে ললনারা যাবে কই? কেউ না কেউ তো টুপ করে বড়শি গিলবেই!’
আমি একটু ঠেস মেরে বললাম, ‘কিন্তু বড়শির আধার ঠিকঠাক মতো আছে তো? তলিয়ে দেখেছিস?’
রবিন সাথে সাথে বলে, ‘আছে আছে, এ নিয়ে তোকে ভাবতে হবে না। এবার আর কোনো ভুলচুক নয়। ডিরেক্ট হোমওয়ার্ক করে আদাজল খেয়ে কোমরজলে নেমে পড়েছি!’
আমি সানন্দে বলে উঠি, ‘বাহ! বেশ বেশ। ভালো মানের আধার দিতে হবে কিন্তু। ওসব কেঁচো-মেচোতে আজকাল কাজ হবে না! এই যুগের মেয়েদের রুচিবোধ অনেক উন্নত ও প্রখর। সস্তা আলাপে বস্তা বেঁধে লাভ নেই। বার্গার, স্যান্ডুইচ কিংবা চাইনিজ না হলে ওদের মন গলার চান্স নেই!’
রবিন আমার থেকেও এককাঁদি ওপরে। ভাঙবে মাগার মচকাবে না। চাপাবাজিতে মস্তবড় ওস্তাদ। গত বছর আন্তর্জাতিক চাপা চ্যাম্পিয়নসশিপে ট্রফিটা সেই বগলদাবা করেছে। সমগ্র বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের মুখ উজ্জ্বল করেছে। আমাকে উল্টো পাটকেল মেরে বলে, ‘আরে ইয়ার জানি জানি, প্রয়োজনে কলেজ ক্যাম্পাসে উন্নতমানের চাইনিজ রেস্টুরেন্ট বসিয়ে দেবো, শুধু ছিপটা একটু হা করে গিলতে দেরি!’
এই হলো মি. রবিন। গণ্ডারের চামড়াও ওর কাছে নস্যি। আজ বড়সড় একটা কাতুকুতু দিলে কমসেকম তৃতীয় সপ্তাহান্তে গিয়ে হিহিহি করে হাসবে। নিয়ম করে কলেজে আসা, সারাণ মেয়েদের পিছু পিছু হেঁটে যাওয়া ওর নিত্যনৈমিত্তিক রুটিন ওয়ার্ক। চোখ টেপাটেপি, শিস মারা, সিটি বাজানো থেকে শুরু করে দেয়ালে দেয়ালে অশ্লীল চিকা মারা কিংবা কলেজ সিঁড়িতে মেয়েদের সাথে ইচ্ছে করে ধাক্কাধাক্কি, সবই তার নখদর্পণে। ইন্টারমিডিয়েট এখনো কমপ্লিট না হলেও এ বিষয়গুলোতে কিন্তু এরই মধ্যে সে পিএইচডি অর্জন করে ফেলেছে। সামনে বিসিএস-টিসিএসও দিতে পারবে। এখন সে কলেজের সবচেয়ে সুন্দরী মেয়ে অষ্টাদশী মৌর পিছে লেগেছে। এ নিয়ে রবিনের নাওয়া-খাওয়া ও ঘুম নিদ্রা নেই বললেই চলে। একপ্রকার বলা যায়, বিলকুল হারাম হয়ে গেছে। মৌ সুন্দরীর সাথে আগ বাড়িয়ে নানা ছলছুতোয় কথা বলার চেষ্টা করছে। যখন-তখন ভাব-খাতির জমানোর মওকা খ্ুঁজছে। কোনো একটা মেয়ে যদি ওর দিকে কোনো কারণে ঈষৎ তাকিয়ে মৃদু হাসে; ব্যস, খুশিতে বাগ বাগ হয়ে মোমের মতো গলে যায় রবিন। তার দু’চোয়ালে দাঁতের সংখ্যা যত, তার চেয়ে একটু বেশি তার প্রপোজাল সংখ্যা! হিসাব নেই কতজনকে যে প্রপোজাল দিয়েছে। কিন্তু কেউ তার প্রপোজালের ছিপ আজতক গিলেনি। বরং এসব মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ কাণ্ডকীর্তিতে বেশির ভাগ েেত্র তাকে নিউটনের তৃতীয় সূত্রের রূঢ় বাস্তবতার মুখোমুখি হতে হয়েছে। ঊাবৎু ধপঃরড়হ যধং ধহ বয়ঁধষ ধহফ ড়ঢ়ঢ়ড়ংরঃব ৎবধপঃরড়হ. সুতরাং যা হওয়ার কথা রবিনের তাই হলো। ইতর, বদমাশ, লম্পট, কুত্তা, বিলাই থেকে শুরু করে চর-থাপ্পড় কিংবা স্যান্ডেল থেরাপি কোনো কিছুই বাদ যায়নি।
গল্পের শুরুতেই বলেছি, গণ্ডারের চামড়াও ওর কাছে নস্যি। সুতরাং এসব পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াতে রবিনের গা সওয়া হয়ে গেছে। এ নিয়ে তার সামান্যতম দুঃখবোধও নেই। উল্টো সমঝদার দার্শনিকের মতো কিছুটা গুরুগম্ভীর ভাব নিয়ে আমাকে বলে, ‘মনে রাখিস প্রেম আর যুদ্ধে লড়াই করতে হয় দম নিয়ে, এখানে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার ভয়ে হাল ছেড়ে দিলে চলবে না। কথায় আছে না, বিনা যুদ্ধে নাহি দেব সূচগ্র মেদিনী! আমিও নাছোড়বান্দা সুযোগ বুঝে চেপে ধরি।’
প্রশ্ন করি, ‘কিরে রবিন, ছিপ গিলেছে?’
সহাস্যমুখে রবিন বলে ওঠে, ‘গিলবে গিলবে। সবুরে মেওয়া ফলে। লেগে থাকলে কপাল খোলে। এই যুগের মেয়েরা বাইন মাছের মতো পিছলা, ধরতে গেলে দ্রুত পিছলে যায়!!’
আমি পাল্টা বলি, ‘আর কবে ছিপ গিলবে, তোর মারা যাওয়ার পরে, নাকি চল্লিশা খাওয়ার পরে?’
রবিন আর কথা বাড়ায় না। শুধু বলে, ‘দেখিস লাইন লেন্থ ঠিক রেখে পটাপট কয়েকটা ইয়র্কার মেরে মৌকে ঠিকই বউ বানিয়ে শিগগির নিয়ে আসব! তখন আবার হিংসেয় মরিস না যেন!’

বিধির বিধান একেই বলে। সাত মণ ঘিও জোগাড় হয়নি, রাধাও আর নাচেনি। রবিনের তথাকথিত ছিপ গিলেনি সুন্দরী ললনা মৌ। সে দিন দূর থেকে হঠাৎ রবিনকে দেখে আমি প্রথমে চিনতে পারিনি। ধাতস্ত হতে কিছুটা সময় লাগে। চেহারার বিচ্ছিরি অবস্থা। দু’গালজুড়ে খোঁচা খোঁচা দাড়ি। চেহারায় রুতার ছাপও স্পষ্ট। মাথার চুলগুলো এলোমেলো। দেবদাস দেবদাস লাগছে। চোখের নিচে কালচেপড়া দাগ। রাতে ঘুম হয় না বুঝতে অসুবিধা হয়নি আমার। আমি এগিয়ে গিয়ে রসিকতা করে বললাম, ‘কিরে মন খারাপ করে বসে আছিস কেন? মৌর খবর কী? ঘ্যাচাং করে ছিপ গিলেছে?’
রবিন আমার দিকে মুখ তুলে তাকায়। কিছুটা কাষ্ঠ হেসে বলে, ‘দোস্ত রে, আর বলিস না, মৌকে সরাসরি প্রপোজাল দিয়ে সেই জালে আজ নিজেই পুরো ফেঁসে গেছি!’
রাজ্যের অবিশ্বাস নিয়ে আমি বলে উঠি, ‘বলিস কী!’
এক দম নিয়ে রবিন বলে, ‘মৌ আমাকে ইচ্ছেমতো অপমান ও জুতাপেটা করেছে! এমনকি হুমকি দিয়ে বলেছে, আমাকে এই কলেজ থেকে চিরতরে বিতাড়িত করবে। মেয়েদের সঙ্গে ইতরামি ও অশ্লীলতার শিা কিভাবে দিতে হয় সে নাকি বেশ ভালো করেই জানে। তাছাড়া তার এক ষণ্ডামার্কা গুণ্ডা ভাইকে দিয়ে নাকি আমাকে ইচ্ছেমতো শায়েস্তাও করবে। দোস্ত রে, তুই আমারে বাঁচা, প্লিজ কিছু একটা কর।’
রবিন আমার হাত চেপে ধরে। আমি আশ্বস্ত করে বলি, ‘তোকে আগে থেকেই শুধু শুধু এসবের পেছনে ঘুরতে বারণ করেছিলাম, কিন্তু তুই আমার কোনো প্রকার বাতচিতে কান দিসনি। এখন শিে হলো তো?’
রবিন লাফিয়ে ওঠে, ‘হয়েছে দোস্ত হয়েছে, উচিত শিে হয়েছে। আমাকে তুই এই যাত্রায় বাঁচা। জীবনে কোনো মেয়েকে আর উত্ত্যক্ত করব না, কথা দিলাম।’
আমি একগাল হেসে রবিনের বুক চাপড়ে দিই, ‘ওকে রবিন, তাই যেন হয়। ওসব প্রপোজাল-ট্রপোজাল আর নয়। কথাটা যেন মনে থাকে। আমি আজই মৌ সুন্দরীর সাথে এ বিষয়ে বিস্তারিত কথা বলব। তুই একদম টেনশন করিস না। এখন থেকে ভালোয় ভালোয় পড়ালেখায় মনোযোগী হও, রেজাল্ট ভালো করতে হবে।’ হ


আরো সংবাদ



premium cement
খালেদা জিয়ার সাথে সৌদি রাষ্ট্রদূতের বৈঠক মাওলানা আতাহার আলীকে বাদ দিয়ে দেশের ইতিহাস রচিত হতে পারে না : ধর্ম উপদেষ্টা ‘মানবিক সমাজ বিনির্মাণে কাজ করে যাচ্ছে বিএনপি’ ছাত্র সংঘর্ষ ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ভাঙচুরের ঘটনায় ছাত্রশিবিরের উদ্বেগ কোনো পত্রিকা বন্ধে চাপ প্রয়োগ সহ্য করা হবে না : তথ্য উপদেষ্টা সিলেটে ব্যবসায়ী হত্যায় বাবাসহ ২ ছেলের মৃত্যুদণ্ড ভারতে মসজিদ ভাঙাকে কেন্দ্র করে নিহতের ঘটনায় জামায়াতের প্রতিবাদ গুগল ম্যাপ দেখে গাড়ি চালাতে গিয়ে ব্রিজ থেকে পড়ে নদীতে, নিহত ৩ গাজীপুরে বেক্সিমকো শ্রমিকদের ফের মহাসড়ক অবরোধ ছাত্র সংঘর্ষ ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ভাঙচুরের ঘটনায় জামায়াতের উদ্বেগ মালয়েশিয়া ভ্রমণকারীদের জন্য সুখবর দিলো দেশটির সরকার

সকল