হেকমত সাহেবের জ্ঞান ফেরা
- তারেকুর রহমান
- ১৯ জুলাই ২০১৮, ০০:০০
হেকমত সাহেব ক্রিকেটের অন্ধ ভক্ত। একদিকে পৃথিবী অন্যদিকে ক্রিকেট। যেদিন খেলা হয় সেদিন হেকমত সাহেব আগেই খাওয়া শেষ করে বসে থাকেন। অবশ্য খেলা দেখার সময় তার আশপাশে কেউই বসে না। হেকমত সাহেব অতি উত্তেজনায় হাতে যা পায় তাই ছুড়ে মারেন। তার হাত থেকে কেউই রেহাই পায়নি। পরিবারের সবারই শরীরে আঘাতের চিহ্ন আছে। এটা অবশ্য হেকমত সাহেবেরই অবদান। শুধু তাই নয়, খেলায় দল হেরে গেলে হেকমত সাহেবের পাগলামি শুরু হয়ে যায়। এমনো হয়েছে হেরে যাওয়ার পর হেকমত সাহেব পা দুইটা উপরের দিকে দিয়ে মাথাকে নিচের দিকে রেখে দীর্ঘণ থেকেছেন। এটা উনার মাথা ঠাণ্ডা করার থেরাপি।
প্রায় সাত-আট বছর আগের কথা। বাংলাদেশের খেলা দেখতে বসেছেন হেকমত সাহেব। আজ তার হাতের পাশে নানা জিনিসপত্র। এই যেমন ঝাড়ু, বালতি, বদনা, হাতপাখা, পাতিল ইত্যাদি। দল খারাপ খেললে এগুলো উনি ছুড়ে মারবেন। হেকমত সাহেবের স্ত্রী বেশ বুদ্ধিমতী। তিনি হেকমত সাহেবের টিভির রুমের আশপাশে কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে দিয়েছেন, যেন এসব ছুড়ে মারলেও কারো কোনো তি না হয়।
ইদানীং হেকমত সাহেবের নতুন রোগ দেখা দিয়েছে। খেলা দেখতে দেখতে উত্তেজনায় উনি চেয়ারের উপর বসে পড়েন। এরপর ইয়াহু করে একটা লাফ দেন। টিভিতে বাংলাদেশের খেলা চলছে। টানটান উত্তেজনা নিয়ে হেকমত সাহেব খেলা দেখছেন। ছুড়ে মারার সব কিছু উনি শেষ করে ফেলছেন। ব্যাটসম্যান ভালো ব্যাটিং করছেন। বল উড়িয়ে মারলেন ব্যাটসম্যান। বল আকাশে ভাসছে। নিশ্চিত ছয় হবে। হেকমত সাহেব ছয় হওয়ার আগেই ইয়াহু করে লাফ দিলেন। আর ধপাস করে নিচে পড়ে গেলেন। সাথে সাথে হেকমত সাহেব জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। কোমরটাও ভেঙে যায়। জ্ঞান ফিরলেও তিনি কাউকে চিনতে পারছে না। শুধু বিড়বিড় করে গালিগালাজ করছেন। কারো হাতে ব্যাট দেখলেই তেড়ে আসেন। এদিকে বাংলাদেশ ক্রিকেটের সুদিন এসে গেল। হেকমত সাহেবকে টিভির সামনে বসিয়ে দেয়া হয়। তিনি কিছুই বলেন না। তার সে উত্তেজনা নাই। পরিবারের মানুষ চিন্তিত। এত বছর হয়ে গেল এখনো তিনি সুস্থ হচ্ছেন না।
কিছু দিন আগে বাংলাদেশ দল আফগানিস্তানের সাথে টি-টুয়েন্টি ম্যাচ খেলে। পরিবারের লোকজন হেকমত সাহেবকে প্রতিদিন খেলা দেখার সুযোগ করে দিয়েছে। বাংলাদেশ একে একে তিনটা ম্যাচ হেরেছে। হেকমত সাহেব এই খেলা দেখে অস্বাভাবিক আচরণ করা শুরু করে দিয়েছেন। সবাই খুব আশাবাদী হয়ে উঠল এই বুঝি হেকমত সাহেব সুস্থ হয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু সবার আশাকে হতাশায় পরিণত করে হেকমত সাহেব আগের মতোই থেকে গেলেন।
বাংলাদেশ ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজ চলাকালে হেকমত সাহেবের আরো পরিবর্তন দেখা দিলো। বাংলাদেশ একের পর এক ম্যাচ হেরে যাচ্ছে। প্রথম টেস্টের প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশ দল ৪৩ রানে অল-আউট হয়ে যায়। হেকমত সাহেব কেমন যেন করছেন। হাত দিয়ে কি যেন খুঁজছেন। পরিবারের লোকজন বিভিন্ন জিনিস এনে তার হাতের পাশে রাখল। প্রথম টেস্ট বাংলাদেশ হেরে গেল। হেকমত সাহেব খুব মনোযোগ দিয়ে খেলা দেখছেন। দ্বিতীয় টেস্টের দিন ঘটল আসল ঘটনা। বাংলাদেশ হেরে যাচ্ছিল। হেকমত সাহেব হাতের পাশে যা পাচ্ছেন তা ছুড়ে মারছেন। পুরো ঘর এলোমেলো করে ফেলছেন। কারো কপাল ফেটেছে। কারো হাত কেটে গেছে। তারপরও সবার মুখে হাসি। হেকমত সাহেবের জ্ঞান ফিরে এসেছে। হেকমত সাহেব অনবরত বকাঝকা করেই যাচ্ছেন। টাকা খরচ করে বিদেশ যান ফুর্তি করতে। একটাও খেলতে যাননি। দল হেরে গেছে অথচ অমুক প্লেয়ার হাসছে। তার মুখ থামছেই না। হেকমত সাহেব ঘেমে গেলেন। সবাই আজ খুব খুশি। কারণ হেকমত সাহেব এত বছর পর জ্ঞান ফিরে পেয়েছেন।