বিশ্বকাপ উন্মাদনায় ঘটে যাওয়া কিছু ঘটনা
- এস আর শানু খান
- ১২ জুলাই ২০১৮, ০০:০০
বাঙালি এমন এক চিজ শুধু কোনো একটা বিষয় ধরিয়ে দিতে পারলেই হলো। জানুক না জানুক, বুঝুক না বুঝুক সেটা নিয়ে শুরু করে দিবে কথা। শুরু হবে হরেক রকমের বিশ্লেষণ। ফুটবল বিশ্বকাপ শুরু হলে এই শ্রেণীর মানুষের সংখ্যা আরো বৃদ্ধি পায়। রাস্তা, ঘাটে, দোকানে, মাঠে এমনকি খেতে বসেও ফুটবল নিয়ে শুধুই বকবকানি শুরু হয়। বিশ্বকাপ ফুটবল নিয়ে কিছু বাস্তব ঘটনা বলব আপনাদের!
ঘটনা ০১
এমন অনেকে আছে যারা ফুটবলের নিয়ম নীতির হাজার ভাগের একভাগও বোঝে না তারাও রেফারির থেকে নিয়ম নীতি বেশি বুঝে ফেলে। রেফারির নানা ভুল ধরে বসে চায়ের দোকানে বসে। আর আমরা যেহেতু হুজুগে বাঙালি সেহেতু এসব কোনো ব্যাপারই না আমাদের কাছে। কথায় আছে না দেখা দেখি চাষ আর পাশাপাশি বাস। তার মানে আশপাশের মানুষকে দেখে শিখতে হয়। তারা যা করে সেটা করার চেষ্টা করতে হয়। সেদিন হঠাৎ করে কি মনে হলো বন্ধু নাজমুলের সাথে মোড়ের একটা চায়ের দোকানে ফুটবল খেলা দেখতে গেলাম। খেলা আর্জেটিনা আর ফ্রান্স। খেলা শুরুর আগেই কেউ কেউ আর্জেটিনাকে বিশ-পঁচিশ খানা গোল দিয়ে দিচ্ছে। আবার কেউ কেউ ফ্রান্সকে খেলার আগেই বাড়ি পাঠিয়ে দিচ্ছে মুখে। মানুষের এমন কথা চালাচালি ভালোই উপভোগ করছিলাম।
ঘটনা ০২
খেলা শুরু হলো। কেউ কেউ দুই দলের বেশ কিছু প্লেয়ারকে বাদ দিয়ে দিচ্ছে। কেউ আবার বল মিস করা প্লেয়ারদের খারাপ খেলা কিংবা ভুল খেলা নিয়ে গালিগালাজ করে তার জাত বংশ বিনষ্ট করে ফেলছে মুখে মুখেই। কেউ আবার রেফারি আর্জেন্টিনার দিকে টানতেছে। আর অন্য গ্রুপ বলছে রেফারিরে মনে হয় কিছু ঘুষ দিয়েছে ফ্রান্স। ফ্রান্সের কোনো ফাউল ধরতেছে না। সে এক এলাহি- বেলাহি কাণ্ড।
ঘটনা ০৩
ফ্রান্স গোল দিয়ে বসল। আর্জেন্টিনার বিপক্ষ পার্টি চিৎকার চেঁচামেচি করতে শুরু করল। আর নানাভাবে টিটকারি মারতে লাগলো আর্জেন্টিনার সাপোর্টারদের। আর আর্জেন্টিনার সাপোর্টাররা বলতে লাগল অফ সাইড হয়েছে রেফারি ধরে নাই। বিধায় গোল হয়েছে।
ঘটনা ০৪
একপর্যায় আর্জেন্টিনা গোল দিলো ফ্রান্সকে। দর্শক আনন্দে ফেটে পড়ল নিমেষেই। গলাবাজি করতে লাগল টিভির সামনে গিয়ে। এমনভাবে লাফালাফি করছিল যে, কেউ কেউ দোকানের টিনের চালে গিয়ে গুঁতো খাচ্ছে। দোকানদার থামাতে চেষ্টা করছে, কিন্তু ব্যর্থ। দেখলাম দোকানদারও বেশ মজা পাচ্ছে তাইতো টিন থাবায় সমান করলেও তেমন কিছু বলছে না।
ঘটনা ০৫
দোকানদার সবাইকে এক কাপ করে চা, কফি দিচ্ছে। নাজমুলকে বললাম এবারই তো বিপদ ঘটেছে। পকেটে এক পয়সাও নাই দু’জনের। এমন জায়গায় বসে আছি ওঠার সুযোগ নাই। কি আর করা চোখ কান বুঝে বসে আছি। এমন ভাব দেখাচ্ছি যে বিরাট ধ্যান জ্ঞান দিয়ে খেলা দেখছি। আর মনে মনে ভাবছি কোনোভাবে এই বিপদ থেকে মুক্তি পাওয়া যায় কিনা। কথায় আছে না যেখানে বাঘের ভয় সেখানেই রাত হয়। কে যেন সামনের থেকে নাম ধরে ডাকদিলো আমাকে। এরই কিছুক্ষণ পরে দোকানদার দুই কাপ চা এনে ধরিয়ে দিলো হাতে। সবাইকে চা দিয়ে দোকানদার জোরে জানিয়ে দিলো সবাই টাকা রেডি করো কাপ জমা দিয়ে যাবা আর টাকা দিয়ে যাবা। কোনো বাকিজুকি হবে না। রাত জেগে জেগে খেলা দেখাবো আর কেউ কিছু খাবার না। আমার দোকান কি হাওয়া চলবে? বিপদ ঘনিয়ে এলো। অভাগা যেদিকে যায় সাগর শুকিয়ে যাওয়ার মতো ঘটনা। কিছু বলছি না।
নাজমুল চা খেয়ে কাপ আমার হাতে দিয়ে বললো যা করবি কর। আমি বললাম চুপচাপ বসে থাক। আমি কাপ দুইটা লুঙ্গিতে গুঁজে বসে খেলা দেখছি। কেউ কেউ কাপ জমা দিচ্ছে টাকা দিচ্ছে। কেউ বা টাকা দিচ্ছে না। দোকানদারের সাথে নানা তর্কবিতর্ক হচ্ছে। দোকানদার নানাভাবে হেনস্তা করছে। আমি শুনছি। খেলা শেষে কাপ নিয়ে সবাই হাঁটা দিছে। আমরাও হাঁটা দিছি। দোকানদার ডাক দিয়ে বললÑ কিরে তোদের টাকা। আমি বললাম কাপতো জমা দেইনি। সকালে কাপ জমা দিয়ে টাকা দিয়ে যাবো। তোমার কথার বাইরে যাচ্ছি না। দোকানদার হা করে তাকিয়ে রইলেন।