ইয়ার্কি
- পাভেল হোসাইন ইমরান
- ২১ জুন ২০১৮, ০০:০০
মর্মান্তিক একটি ঘটনা ঘটে গেছে। যার দরুন মাথায় ব্যান্ডেজ পেঁচিয়ে পুলিশ স্টেশনে এসে পৌঁছুলেন রতন সাহেব। তাকে দেখে এক কনস্টেবল দৌড়ে এলো। ভাই কী হয়েছে, ছিনতাই না ডাকাতি? রতন সাহেব কনস্টেবলের ওপর খানিকটা বিরক্ত হলেন। ছিনতাই ডাকাতি ছাড়া এ শহরে আর কোনো দুর্ঘটনা ঘটে না বুঝি! তিনি বললেন, না ভাই তার চেয়েও বিরাট কিছু। এমনটা শুনে কনস্টেবলের চোখ তো কপালে! সে ভেবে বসল মার্ডারটার্ডার হয়েছে হয়তো। তাই আর দেরি না করে সে রতন সাহেবকে নিয়ে গেল বড় অফিসারের রুমে।
এসআই ইলিয়াস জামান টেবিলের ওপর কাগজে কী যেন লিখছিলেন। রতন সাহেব আর কনস্টেবলকে দেখে চোখ তুলে তাকালেন। বললেন, কী কেস?
রতন সাহেবের উত্তরÑ সিরিয়াস কেস। আমি এর ন্যায়বিচার চাই।
Ñআচ্ছা ঠিক আছে। আপনি আগে বসুন।
কনস্টেবল একটি চেয়ার টেনে রতন সাহেবকে বসিয়ে দিলো।
Ñবলুন, কী সমস্যা? মাথা ফাটল কী করে? অজ্ঞান পার্টি না কি মলম পার্টি? কার খপ্পরে পড়েছিলেন?
Ñবউয়ের খপ্পরে পড়েছিলাম।
রতন সাহেবের এহেন কথায় কনস্টেবল ব্যাপক মাত্রায় চমকিত হলেও এসআই ইলিয়াস জামান স্বাভাবিকভাবে প্রশ্ন করতে লাগলেন।
Ñহয়েছিল কী?
Ñবউ মোবাইল ছুড়ে মেরে আমার মাথা ফাটিয়ে দিয়েছে।
Ñকেন এমন করল?
Ñআজ সকালে অনেক দিন পর আমার শ্বশুর-শাশুড়ি কুষ্টিয়া থেকে ঢাকায় আমার বাসায় বেড়াতে এসেছে। তারা আসায় খুশি হয়ে বউ তাদের জন্য কিছু নিয়ে আসতে বলল।
Ñতো আপনি কিছু আনেননি?
Ñএনেছিলাম তো। ঢাকা টু কুষ্টিয়ার দু’টি রিটার্ন টিকিট।
রতন সাহেবের স্যাড স্টোরি শুনে কনস্টেবল হো হো করে হেসে উঠল। কিন্তু এবারো স্বাভাবিক এসআই ইলিয়াস জামান। তিনি হাসলেন না। উল্টো কনস্টেবলের ওপর খিটমিটিয়ে উঠলেনÑ এই চুপ! মানুষের বিপদে মজা পাচ্ছেন আপনি!
ঝাড়ি খেয়ে চুপসে গেল কনস্টেবল। এসআই ইলিয়াস জামান তাকালেন রতন সাহেবের দিকে। বললেনÑ দেখেন ভাই যদিও আপনার সাথে ক্রাইম হয়েছে। তবুও আমি আপনার ভালোর জন্য কেসটা নিতে পারছি না।
Ñকেন পারবেন না?
এসআই ইলিয়াস জামান তার মাথার পেছনে একটি সেলাইয়ের দাগ দেখিয়ে বললেন, আমিও একদিন ইয়ার্কি করে আমার স্ত্রীকে বলেছিলাম, আজ তোমার থেকে পাশের ফ্যাটের ভাবীকে বেশি সুন্দর লাগছে। ব্যাস রেগেমেগে সে তার হাতের রিমোট ছুড়ে মেরে দিলো আমার মাথা ফাটিয়ে। আমিও আপনার মতো বউয়ের ওপর রেগে গিয়েছিলাম। বলেছিলাম, তোমার নামে আজই থানায় জিডি করব। সে আমায় উল্টো শাসিয়ে বলেছিল, যদি বেশি তেড়িবেড়ি করো তাহলে তোমার থানায় তোমার নামেই নারী নির্যাতনের মামলা ঠুকে দেবো! তাই বলি কী, যা গিয়েছে অল্পের ওপর দিয়ে গিয়েছে। আরো বড় বিপদ না চাইলে এখনি অফ যান।