বউ সুন্দরী হওয়ার সুবিধা-অসুবিধা
- এস আর শানু খান
- ২১ জুন ২০১৮, ০০:০০
বউকে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে বিভিন্ন মনীষি বিভিন্ন বিশেষণে বিশেষায়িত করেছেন। কেউ বলেছেন জাদুর বাক্স। কেউ বা বলে ভাইরাস। কেউ আবার ভালোবেসে বলেছেন জল্লাদ। কেউ বলেছেন বউ ক্যান্সারের থেকেও ভয়ানক এক ব্যাধির নাম। আমার কাছে বউকে অবশ্য একনায়ক মনে হয়। কেননা সে সারাক্ষণ আমার স্বাধীনতা হরণ করতে আপ্রাণ চেষ্টা চালায়। যা-ই হোক, আমি আপনি যে যা-ই বলি না কেন বউতো আসলে বউই। খালাতো বোন নয়। আর এই বউকে নিয়ে মানুষ বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন রকমের সুবিধাও লুটে নিতে পারে আবার এই বউই বিরাট মুসিবতের কারণও হয়ে থাকে চলুন শুনি তার কিছু কথা।
০১.
বন্ধু অনন্ত কবিরাজ। কাসের সবার কাছে যে নামটাই ছিল এক বিরক্তিকর অধ্যায়। সজারুর মতো খাড়া খাড়া উসকো খুশকো চুল আর বোতাম ছেঁড়া তিলেপড়া জামার দুর্গন্ধ সবাইকে জ্বালাত। আচার-আচরণেও বেয়াদবির কোনো কমতি ছিল না। তাইতো স্যারেরাও তেমন সহ্য করতে পারতেন না। যে যেমন পারত সেই তেমন অপমান অপদস্থ করতে ব্যস্ত থাকত অনন্তকে। এমনই হতো যে অনন্ত বসলে ওই বেঞ্চ থেকে কেউ কেউ উঠে যেত। অনন্ত যে কত মার খেয়েছে স্কুল জীবনে সেটি বোঝানোর নয়। যা-ই হোক, স্কুল থেকে বের হয়ে যাওয়ার পরও অনন্তর সাথে দেখা হতো। কিন্তু কেউই ওকে পাত্তা দিত না। এটা-ওটা বলে অপমান করত আর দূরে সরিয়ে দিত। অল্প কিছুদিন আগে বন্ধুদের আড্ডায় বেশ প্রশংসা শুনছিলাম। আমি বুঝলাম না। কেমন হলো। পরক্ষণেই দেখলাম ফেসবুকে ঢুকে সুন্দরী এক নববধূর ছবি দেখাদেখিতে ব্যস্ত সবাই। এরই মধ্যেই এক বন্ধু কাকে যেন ফোন করে দোস্ত করে করে মাথায় উঠাচ্ছে। তার সাথে ফোনে কথা বলার জন্য ফোন কাড়াকাড়ি পর্যন্ত গেছে। পরক্ষণে আমি জানতে পারলাম ওই ছবিটা হলো অনন্তর বউয়ের। সেই অনন্ত বিয়ে করেছে সুন্দরী বউ। সুন্দরী বউয়ের উসিলায় অন্তত সবার কাছে প্রিয় হয়ে উঠেছে।
মোরাল অব দ্য স্টরি : সুন্দরী বউ থাকলে বন্ধুর অভাব হয় না।
০২.
তাগড়াই জোয়ান। দুধের মতো সাদা সুন্দর চেহারার মানুষ উল্লা ভাই। উল্লা ভাই আমাদের দুই বছরের সিনিয়র। চলতে ফিরতে অনেকটা বন্ধুর মতোই হয়ে উঠেছিলাম আমরা। উল্লা ভাইর সাথে ফ্রি হওয়ার আর একটা উল্লেখযোগ্য উৎস ছিল উল্লা ভাই প্রেম করে ‘বের’ করে নিয়ে বিয়ে করেছিল আমাদের এক বান্ধবীকে। বান্ধবী ছিল ভয়ানক সুন্দরী। চেহারা-ফিগার সব কিছু মিলিয়ে এক্কেবারে বলিউড হিরোইন সোনাক্ষী সিনহার মতো। বন্ধু মহলে উল্লা ভাইর বিরাট কদর ছিল। প্রায়ই দেখতাম উল্লা ভাইর বন্ধু বড় বড় বিস্কুটের প্যাকেট, ভাজার প্যাকেট, কোল্ড ড্রিঙ্কের বোতল নিয়ে উল্লা ভাইদের বাড়ি যেতেন। আর এক জায়গায় বসলেই শুধু উল্লা ভাইয়ের বউয়ের আচার আচরণের প্রশংসা করত সবাই। দারুণ ফ্রি নাকি উল্লা ভাইয়ের বউ। হাসিমুখে ছাড়া কথা বলেন না। উল্লা ভাইর সব বন্ধুর সাথে উল্লা ভাইর বউয়ের যোগাযোগ হয়। উল্লা ভাই আর পেরে উঠলেন না। বন্ধুদের মুখে বউয়ের গল্প শুনতে শুনতে হাঁফিয়ে উঠলেন। এবং পারিবারিক বিভিন্ন সমস্যার উদঘাটন করলেন। সেই সাথে সাংসারিক অশান্তির কারণ হিসেবে বউয়ের সুমিষ্ট কণ্ঠস্বর আর সুন্দরী চেহারাকেই শনাক্ত করলেন। অবশেষে সামান্য কিছু দিনের মধ্যেই একে একে প্রায় সব বন্ধুর সাথে উল্লা ভাইর সম্পর্ক নষ্ট হলো। উল্লা ভাই এখন কোনো বন্ধুর সাথেই কথা বলেন না।
মোরাল অব দ্য স্টরি : বন্ধুর মুখে নিজের বউয়ের মাত্রাতিরিক্ত প্রশংসা নিজেকে বন্ধুশূন্য করে তুুলতে পারে।