বুদ্ধি
- জোবায়ের রাজু
- ০৭ জুন ২০১৮, ০০:০০
পড়ন্ত বিকেল। বেশ মন খারাপ আমার। কারণ, ১০ দিন আগে ঈদের কেনাকাটা হিসেবে আকাশি কালারের যে শার্টটি মোটা অঙ্কের টাকা দিয়ে কিনে এনে আলমারিতে ভরে রেখেছি, ঈদের দিনে সেটা বের করে দেখি পিঠের অংশ ইঁদুরে কেটে...। এমন দৃশ্য দেখে টপটপ করে চোখের জলে গাল ভেসে একাকার।
ঈদে পছন্দের জামা গায়ে দিয়ে এ পাড়া ও পাড়া ঘুরে বেড়াতে পারিনি বলে এক তীব্র ব্যথায় যখন বিছানায় গা বিছিয়ে শুয়ে আছি, এমন সময় আমার মোবাইলে রনির ফোন। রিসিভ করতে ইচ্ছে করছে না। ওপার থেকে কি আর বলবে রনি। ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়ে দু-চার মিনিট কথা বলে কল রেখে দেবে, এই তো। মন খারাপ হলে আমি সাধারণত কারো সাথে কথা বলি না। ফোনে তো নয়Ñই। তবুও কি মনে করে কল কেটে যাওয়ার শেষ পর্যায়ে এসে রনির কল রিসিভ করলাম।
Ñকিরে রঞ্জু! ঈদ মোবারক।
Ñঈদ মোবারক।
Ñগলা এমন শোনাচ্ছে কেন? মন খারাপ?
Ñনা।
Ñআমাদের বাড়িতে আয়।
Ñনা।
Ñআহা আয় না।
Ñনা।
Ñনা না করিস না। আয় বলছি।
Ñআচ্ছা।
রনি আমার বন্ধু। একই পাড়ায় আমাদের বাস। ওরা বেশ ধনী। বিলাসবহুল বাড়ি। বাড়ির নাম সেতারা মঞ্জিল। রনির দাদীর নামে নাম।
২.
আমি এখন সেতারা মঞ্জিলের সামনে। সেতারা মঞ্জিলের গেট সাধারণত খোলা থাকে না। ভেতর থেকে আটকানো থাকে। আজ খোলা কেন! সম্ভবত ঈদের দিন বলে। আজ দলে দলে মেহমান আসবে। এই বাড়িতে যথেষ্ট আপ্যায়ন করার একটা সুনাম আগ থেকে আছে। মেহমানদের জন্য প্রতিবার গেট খুলতে আসা ঝামেলার বলে সম্ভবত রনির বাবা আজ গেট উন্মুক্ত রাখার পরিকল্পনা করেছেন।
সদর দরজা দিয়ে ভেতরে গিয়ে যখন রনিদের বিশাল পাকা উঠানে দাঁড়াই বিকেলের মরা রোদ মাথায় নিয়ে, ঘরের দরজায় তাকিয়ে দেখি বিশাল এক তালা ঝুলছে। মানে কি! রনিরা বাড়িতে নেই, কিন্তু রনি আমাকে ফোন করে এখানে ডেকে আনবে কেন! বোকা বানাতে নয় তো! ঈদের জামার কেলেঙ্কারিতে আজ আমার এমনিতেই মন খারাপ, তার ওপর রনির এমন কর্মকীর্তি আমার মুড আরো নষ্ট করে দিলো। এক্ষুণি রনিকে কল করে বকা দিতে হবে।
প্রথম রিং বাজতেই ফোন রিসিভ হলো।
Ñরঞ্জু তুই কই?
Ñজাহান্নামে। এসব পাগলামির মানে কি?
Ñমানে?
Ñতোরা বাড়িতে নেই। অথচ আমাকে ডাকলি কেন?
Ñতুই কই?
Ñতোদের উঠানে।
ওপার থেকে লাইন কেটে দেয়া হলো। রাগে ক্ষোভে আমার গা জ্বলতে থাকে। বাড়ি ফিরে আসার জন্য পা বাড়াতেই কে যেন পেছন থেকে নাম ধরে ডাকলÑ ‘এই রঞ্জু, কই যাস! এ দিকে আয়’।
পিছু ফিরে দেখি কেউ নেই। ভুল শুনলাম না তো! মাঝে মধ্যে আমি এমন ভুল শুনি। ‘রঞ্জু, জানালার দিকে তাকা, এই যে আমি!’
তাকিয়ে দেখি রনি জানালার ওপারে। ব্যাপার কি! ও ঘরে, কিন্তু বাইরে দিয়ে দরজায় তালা ঝুলছে। জানালার পাশে রনির কাছে যেতেই সে বলল, ‘পেছনের দরজা খোলা। ওখান দিয়ে ভেতরে আয়’।
৩.
পেছনের দরজা দিয়ে ঘরে ঢুকতেই রহস্য জানা গেল। রনি নিচু গলায় বলল, ‘আর বলিস না, সকাল থেকে বানের স্রোতের মতো মেহমান আসতে লাগল। এত এত নাশতা পরিবেশন করতে করতে আম্মা কান্ত। শেষে আব্বা বুদ্ধি বের করে সিদ্ধান্ত নিলেন দরজার বাইরে তালা ঝুলিয়ে রাখবেন। এরপর যারাই আসবে, তারা তালা দেখে বাড়িতে কেউ নেই ভেবে ফিরে যাবে। আব্বার বুদ্ধি খারাপ না, বরং কাজে লাগল। দরজায় তালা ঝোলানো দেখে কয়েক দফা মেহমান চলেও গেল। আমি জানালার ছোট্ট ফাঁক দিয়ে দেখেছি। আব্বার বুদ্ধিটা দারুণ না?’ আমি হাসতে হাসতে বললাম, ‘আসলেই দারুণ’। রনি আমাকে থামিয়ে দিয়ে বলল, ‘আস্তে বল। কেউ এসে আমাদের কথা শুনতে পাবে তো।’ বলতে না বলতে কার যেন আভাস শোনা গেল বাইর থেকে। আমি আর রনি জানালার কাছে এসে ছোট্ট ফাঁক দিয়ে তাকিয়ে দেখি একদল মেহমান বাইরে পায়চারী করছে। তারপর দরজায় তালা ঝুলছে দেখে বাড়িতে কেউ নেই বলে ফিরেও যাচ্ছে। সে দৃশ্য দেখে আমি আর রনি মিটি মিটি হাসছি।