২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

দ্য অ্যান্ড অব কেদারস গ্রান্ডি

-

অসম্ভব ঘুম কাতুড়ে কেদার। কিন্তু কোনো এক রহস্যজনক কারণে গিনেস বুকে তার নাম নেই। গিনেস বুকে তার নাম না থাকলেও ঘুম নিয়ে অফিসে তার বদনামের শেষ নেই। বসও ইতোমধ্যে একদিন আলটিমেটাম দিয়ে গেছেনÑ ঘুম কমাতে না পারলে চাকরি নট। বদনাম থেকে নাম কেটে সুনামে ফিরে আসতে অফিসে সে আগের চেয়ে অনেক সতর্ক। সে পণ করেছে অফিসে কোনো অবস্থাতেই ঘুমাবে না। এ জন্য সে এক কৌশলের আশ্রয় নিয়েছে। একটু কষ্ট হলেও অফিসে আসার সময় অতিরিক্ত একটি লুঙ্গি নিয়ে আসে। ঘুম এলে সে টয়লেটে ঢুকে লুঙ্গি পরে গোসল সেরে নেয়। এতে তার ঘুম অনেকটাই কমেছে। কিন্তু এই ধারা সে বেশি দিন ধরে রাখতে পারল না। কিছু দিন যেতে না যেতেই সে তার বন্ধুর পরামর্শ মতো নাকে তেল দিয়ে ঘুমানো শুরু করল। শুরু হলো তার নাক ডাকার দ্বিতীয় পর্ব। কেদারের এহেন কর্মকাণ্ডে অফিসের সবাই বিরক্ত হলেও কেউ কিছু বলার সাহস পেতো না। বলা নেই কওয়া নেই, হঠাৎ করেই দ্বিতীয়বারের মতো বস হানা দিলো কেদারের ডেস্কে।
‘কেদার সাহেব, পুরো বিষয়টা একদিন আপনি মিথ্যা, বানোয়াট বলেছিলেন। সেদিন প্রমাণের অভাবে আপনার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিতে পারিনি। আপনি আমার কোম্পানির শুধু আর্র্থিক ক্ষতিই করেননি। মান-ইজ্জত সব পাংচার করে দিয়েছেন। এই দেখুন আপনার নাক ডেকে ঘুমানোর দৃশ্য ইউটিউবেও পাওয়া যাচ্ছে।
কেদার চেয়ারে মাথা দিয়ে নাক ডেকে ঘুমাচ্ছে আর গুড়গুড় নাক ডাকছে অনবরত। ক্যাপশনে লেখা ‘অফিসে বসের নাক ডেকে ঘুমানোর এক্সকুসিভ ভিডিও।’
কেদার তার এহেন কীর্তিকলাপের ভিডিও দেখে দাঁত দিয়ে জিহ্বা কামড়ে ধরলো। ডান হাত মাথায় তুলে মনে মনে বললো, ‘খাইছেরে! এত আসলেই আমার ভিডিও।’
‘দেখলেন তো কেদার সাহেব, এবার আপনি নিজের মুখেই বলুন, এটা আপনার নিজের চেহারা কি না?’
‘জি স্যার, এটা আমার নিজেরই সুরত।’ বলে আবারো জিহ্বায় কামড় বসালো কেদার।
বস এবার একটা পাতলা খাম কেদারের হাতে ধরিয়ে দিয়ে বললেন, ‘এটা রাখুন, আর আমার বাসায় একদিন দাওয়াত রইলো।’
‘দাওয়াত!’
বস হনহন করে রুম হতে বের হয়ে গেলেন। কেদার যেন হাফ ছেড়ে বাঁচলো। বলল, ‘আমিতো ভেবেছিলাম এবার বুঝি চাকরিটাই গেলো। যাক বাঁচা গেলো। কই রে কদম। (পিয়নের নাম) আমার জন্য এক গ্লাস পানি আন। খেয়ে মাথাটা ঠাণ্ডা করি। এক গ্লাস পানি ঢোক ঢোক করে খেয়ে ফেললো কেদার। সে মনে মনে আবার ভাবছে, ‘বস তো অমায়িক লোক। তিরস্কারের পরিবর্তে তিনি আমাকে তার বাসায় দাওয়াত দিয়ে গেলেন!’ সে এবার হুঙ্কার ছাড়লো, ‘দেখলেন তো আমার সম্মানীত কলিগগণ, আপনারা ভেবেছিলেন, আমার ওপর দিয়ে প্রলয়ঙ্করী ঝড়, টর্নেডো বয়ে যাবে। আমার ঘরের চাল উড়ে যাবে। কই? কিছুই তো হলো না? আমার বরং উপকারই হলো। বস আমাকে তার বাসায় মোরগ-পোলাও খাওয়ার দাওয়াত দিয়ে গেলো।’ হঠাৎ তার মনে পড়লো, বস কিসের প্যাকেট যেন দিয়ে গেলো, এবার সেটা দেখা যাক। কেদারের চোখ খুশিতে ঝলমল করছে। ‘কত দিন পর বস নিজ হাতে এমন একটি প্যাকেট দিলেন।’এটা আবার প্রমোশন লেটার নয় তো! নাকি বস যে মুখে দাওয়াত দিয়ে গেলো। এটা সেই দাওয়াতপত্র? সে খামটি খোলে কম্পোজ করা চিঠিটিতে চোখ বুলালো।
জনাব,
শাহজাহান ওরফে কেদার সাহেব
এসির ঠাণ্ডা বাতাস আপনার শরীরের সাথে বেশ মানিয়ে গেছে। আপনার বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে আপনি হাঁ করে এসির বাতাস খান আর ঘুমান। উক্ত বিভোর ঘুমের সময় আপনি এতটাই অচেতন থাকেন যে আপনার হাঁ করা মুখের মধ্যে দিয়ে অনায়াসে মশা, মাছি ঢুকে তারা আনন্দে লাফালাফি করে। অনেকেই দেখেছে, এই সব মশামাছি মুখ দিয়ে পেটের মধ্যে জমা থাকা খাবার নিয়ে আসে। যার ফলে আপনি লাঞ্চ আওয়ারে পাঁচজনের খাবার একাই সাবার করেন। এতে কোম্পানির আর্থিক লস হচ্ছে। আরো অভিযোগ আছে, ঘুমের ঘোরে আপনার নাক ডাকাডাকির শব্দে কলিগরা তাদের কানে হাত চেপে ধরে রাখে। আপনার নাক ডাকার শব্দে পরিবেশ দূষণ হচ্ছে বলে পরিবেশ রক্ষা ইউনিট অভিযোগ করেছে। সর্বোপরি আপনার নাক ডাকার ভিডিও দেখে, আপনার ঘুমানোর বেহাল দশা দেখে পরিচালনা পর্ষদ আধা ঘণ্টা যাবৎ ছি: ছি: করেছেন। সুতরাং আপনি আজ অফিস শেষে হাত-পা পকেটে ঢুকিয়ে, এই ধবলা নাক নিয়ে অফিস থেকে এই যে যাবেন চিরদিন এই অফিসের সম্মুখে আসবেন না। আপনার দেনা-পাওনা সব এই চিঠির সাথে পরিশোধ করা হলো। পত্র পড়া শেষে কেদারের মৃগী রোগের উদয় হলো। পা কাঁপার কারণে কেদার ধপাস করে চেয়ারে বসে পড়লো। সে চোখে অন্ধকার দেখছে। তার এরূপ বেগতিক অবস্থা দেখে সকলে দৌড়াদৌড়ি করে জমায়েত হলো। কেউ বলল, ‘পানির সাথে বিষ মিশানো ছিল’, আবার কেউ বলল, ‘মনে হয় প্রেসার উঠেছে।’ একজন কৌতূহলবশত তার হাতে থাকা কাগজটি পড়ে সবাইকে শুনালো। এতে কেদারের বেহুঁশ হওয়ার রহস্য বেরিয়ে এলো। কেউ একজন বললো, ‘জনাবকে তাহলে ওষুধে ধরেছে, এ কথা শুনে সবাই হাসিতে ফেটে পড়লো।


আরো সংবাদ



premium cement