২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

দিরাইয়ে আ’লীগের ২ পক্ষের সংঘর্ষে নিহত ১, আহত শতাধিক

দিরাইয়ে আ’লীগের ২ পক্ষের সংঘর্ষে নিহত ১, আহত শতাধিক - ছবি : নয়া দিগন্ত

সরকারি জায়গার দখল নিয়ে সুনামগঞ্জের দিরাইয়ে আ’লীগের তিন চেয়ারম্যানের লোকদের সংঘর্ষে হারুন মিয়া (৬৫) নামে একজন নিহত ও শতাধিক লোক আহত হয়েছেন।

বৃহস্পতিবার (২৯ আগস্ট) উপজেলার রফিনগর ইউনিয়নের বাংলা বাজারে সকাল ১০টা থেকে দুপক্ষের সংঘর্ষে চেয়ারম্যান রেজুয়ান খান ও শৈলেন্দ্র দাসের পক্ষের হারুন মিয়া ঘটনাস্থলেই নিহত হন।

জেলা আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশ সম্পাদক সাবেক চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর চৌধুরীর পক্ষ এবং উপজেলার রফিনগর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাবেক চেয়ারম্যান রেজুয়ান খান ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বর্তমান চেয়ারম্যান শৈলেন্দ্র কুমার দাস পক্ষের লোকজনের মাঝে দফায় দফায় সংঘর্ষে এই হতাহতের ঘটনা ঘটে।

নিহত হারুন রফিনগর গ্রামের মরহুম শাহ আলমের ছেলে। খবর পেয়ে দিরাই থানা পুলিশ ও সেনাবাহিনীর একটি দল ঘটনাস্থলে পৌঁছালে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। তবে নিহতের পক্ষের লোকেরা বাংলাবাজারে অবস্থিত প্রতিপক্ষের প্রায় ২০টা দোকানে ব্যাপক ভাঙচুর ও লোটপাট করে মালামাল নিয়ে যায়।

দিরাই থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ ইখতিয়ার উদ্দিন সংঘর্ষে হতাহত ও লুটপাটের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। তবে সরকারি ভূমি দখল জবর দখলের নেপথ্যে উপজেলা ভুমি অফিসের ঘুষ বানিজ্যের বিস্তর অভিযোগ এলাকাবাসীর।

সরেজমিনে এলাকাবাসীর সাথে আলাপকালে ও থানা পুলিশ সূত্রে জানা যায়, সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার রফিনগর ইউনিয়নের বাংলা বাজার-সংলগ্ন সুনাম পুর মৌজায় সরকারি খাস খতিয়ানের ৪৬ দাগের প্রায় ২৬ একর জায়গা রয়েছে। বিস্তৃত এই ভূমি দখল জবর দখলকে কেন্দ্র করে দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগের দুপক্ষের মাঝে দ্বন্দ্ব সংঘাত চলে আসছে। ক্ষমতাসীন দলের প্রভাব বিস্তার, উপজেলা ভুমি অফিস ও ইউনিয়ন তহশিলদারের যোগসাজশে গত বছর জেলা আ’লীগের বন ও পরিবেশ সম্পাদক রফিনগর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর চৌধুরী বাংলাবাজার অদূরে সরকারি জমি মাটি ভরাট করে দখলের পায়তারা করলে প্রতিপক্ষগ্রুপ রফিনগর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাবেক চেয়ারম্যান রেজুয়ান খান ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বর্তমান চেয়ারম্যান শৈলেন্দ্র কুমার দাস পক্ষের লোকজন বাধা দেয়। একপর্যায়ে উপজেলা সহকারী কমিশনারের (ভূমি) হস্তক্ষেপে মাটিভরাট কাজ বন্ধ করে দেয়া হয়। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে জাহাঙ্গীর চৌধুরী প্রতিশোধের অপেক্ষায় থাকেন।

এ বছর একইভাবে রফিনগর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাবেক চেয়ারম্যান রেজুয়ান খান ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বর্তমান চেয়ারম্যান শৈলেন্দ্র কুমার দাস পক্ষের নেতৃত্বে একই জায়গার পাশে বাজার বর্ধিত করনের নামে মাটি ভরাট করে দখলের চেষ্টায় লিপ্ত হয়।

বাংলাবাজারের ব্যবসায়ীরা জানান, চেয়ারম্যান শৈলেন দাস ও রেজুয়ান খান প্রভাব খাটি ভরাটকৃত জায়গায় দোকান কোটা বিক্রির নামে টোকনের মাধ্যমে মোটা অংকের টাকা সংগ্রহ করেন। এ বিষয়ে প্রতিবাদী হয়ে ওঠে চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর চৌধুরীর লোকজন। তারা সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নিকট লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। এনিয়ে দু’পক্ষের মাঝে মাস খানেক দিন ধরে ভীষণ দ্বন্দ্ব ও উত্তেজনা বিরাজ করছিল। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর উত্তেজনাকর পরিস্থিতির কারণে দিরাই উপজেলা দায়িত্বপ্রাপ্ত সেনা বাহিনীর মেজর মহি উদ্দীন ফারুকী দুপক্ষের লোকজন নিয়ে আলাদা বৈঠক করেছেন। তাছাড়া দিরাই উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) কার্য্যালয়ে বারবার বিষয়টি নিয়ে দু’পক্ষই ধরনা দেয়, এতে কোনো সমাধান হয়নি। অদৃশ্য কারণে ভূমি সহকারী কমিশনার বা প্রশাসন কোনো প্রদক্ষেপ নেয়নি বলে স্থানীয় এলাকাবাসীর বিস্তর অভিযোগ রয়েছে।

সরেজমিনে বাংলাবাজারের একাধিক ব্যবসায়ী জানান, ইউনিয়ন ভূমি অফিসের তহশিলদার জহুর উদ্দিনের যোগসাজশে আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যানগণ সরকারি জমিতে মাটি ভরাট কাজে লিপ্ত হন। ফলে এলাকায় চরম উত্তেজনা বিরাজ করে। বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর চৌধুরীর লোকজন সরকারি খাস খতিয়ানভূক্ত একই জায়গার একটি ডুবিতে বাঁশ কাটা দিতে গেলে বাঁধা দেয় চেয়ারম্যান রেজুয়ান খান ও শৈলেন্দ্র দাসের লোকজন। একপর্যায়ে দেশীয় অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে দুপক্ষের সহস্রাধিক লোক দফায় দফায় সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। সংঘর্ষ চলাকালে ঘটনাস্থলেই রেজুয়ান খান ও শৈলেন্দ্র দাসের পক্ষের হারুন মিয়া নিহত হন। এ সময় দুপক্ষের অন্তত শতাধিক লোক আহত হন। এ দিকে সংঘর্ষে হারুন মিয়ার মৃত্যুর খবরে জাহাঙ্গীর চৌধুরী পক্ষের লোকেরা ধীরে ধীরে পিছু হটে সংঘর্ষস্থল ত্যাগ করতে থাকে। এ সুযোগে চেয়ারম্যান রেজুয়ান খান ও শৈলেন্দ্র দাসের পক্ষের লোকেরা বাংলাবাজারে থাকা প্রতিপক্ষের অন্তত ২০টা দোকানে ব্যাপক লোটপাট ও ভাঙচুর চালায়।

সংঘর্ষের বিষয়ে একপক্ষ অপর পক্ষের লোকদের দায়ি করে বক্তব্য দিচ্ছেন। বিকেলে দিরাই উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) অভিজিৎ সূত্রধর ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।

দিরাই থানা অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ ইখতিয়ার উদ্দিন চৌধুরী বলেন, খবর পেয়ে সাথে সাথে ঘটনাস্থলে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর একটি দল পাঠানো হয়। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শহিদুল ইসলাম মুন্সিসহ আমরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। এলাকার পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে।


আরো সংবাদ



premium cement