২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

কুলাউড়ায় বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি, লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দী

- ছবি : নয়া দিগন্ত

গত কয়েকদিনের অবিরাম বৃষ্টি ও ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে কুলাউড়া উপজেলায় মনু নদীর তিনটি স্থানে বাঁধ ভেঙে টিলাগাঁও ইউনিয়ন প্লাবিত হয়েছে। এতে নতুন করে আরো অর্ধ-শতাধিক গ্রামে পানি প্রবেশ করেছে।

শুক্রবার সকাল থেকে নতুন করে মনু নদীর পানি উপজেলার রাউৎগাঁও, ব্রাহ্মণবাজার, কাদিপুর ইউনিয়নের অর্ধ শতাধিক গ্রামে প্রবেশ শুরু হয়।

কুলাউড়া পৌর এলাকার কিছু কিছু এলাকাসহ হাকালুকি হাওরে পানি ক্রমশই বাড়ছে। এতে উপজেলার ভূকশিমইল, জয়চন্ডী, কাদিপুর, ভাটেরা, বরমচাল ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হলে তৃতীয়বারের মতো বন্যা দেখা দেয়। এছাড়া কুলাউড়া পৌরসভার বিভিন্ন ওয়ার্ডে বন্যার পানি ঢুকেছে। এতে উপজেলা পরিষদ সড়কে হাঁটুপানি সমান পানি প্রবাহিত হচ্ছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, মনু নদীর বাঁধ ভাঙায় বন্যার পানি ব্রাহ্মণবাজার-শমসেরনগর সড়কে ওপর প্রায় দুই ফুট, কুলাউড়া-মৌলভীবাজার সড়কের ওপর দিয়ে প্রায় একফুট পানি প্রবাহিত হচ্ছে। যত সময় যাচ্ছে ততই নতুন করে বিভিন্ন ইউনিয়নে পানি প্রবেশ করছে। রাত পর্যন্ত উপজেলার বরমচাল, ভূকশিমইল, ভাটেরা ইউনিয়ন প্লাবিত হবার সম্ভাবনা রয়েছে। যার কারণে নানা উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা নিয়ে সময় পার করছেন কয়েক লাখ মানুষ। টিলাগাওঙ ইউনিয়নে পানিবন্দি মানুষ যারা বাড়িতে আটকা পড়েছিলেন তাদের উদ্ধারে কাজ করছে উপজেলা প্রশাসন, সেনাবাহিনী, ফায়ার সার্ভিস, স্কাউটস, স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের জনপ্রতিনিধিরা।

জানা যায়, মঙ্গলবার টিলাগাঁও ইউনিয়নের হাজীপুর গ্রামে প্রায় ৬০০ ফুট, বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে মিয়ারপাড়ায় প্রায় ৬০০ ফুট, সকাল ৭টায় চক সালন গ্রামে প্রায় ১৫০ ফুট জায়গা জুড়ে বাঁধ ভেঙে যায়।

অন্যদিকে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী কুলাউড়া ক্যাম্পের একটি টিম স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সদস্যদের সাথে নিয়ে দুর্গত মানুষদের উদ্ধারে বৃহস্পতিবার সারারাত থেকে এখন পর্যন্ত উদ্ধার কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। এখন পর্যন্ত উদ্ধারকৃত মানুষের সংখ্যা আনুমানিক সাত শতাধিক।

মনু নদীর প্রতিরক্ষা বাঁধে সৃষ্ট ভাঙনের খবর পেয়ে শুক্রবার বিকেল ৩টায় টিলাগাঁও ইউনিয়নে বন্যাকবলিত এলাকা পরিদর্শন করেন জেলা প্রশাসক ড. উর্মি বিনতে সালাম। এ সময় তিনি বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্র পরিদর্শন করে ইউনিয়ন পরিষদের সামনে দুর্গত মানুষের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করেন।

এছাড়া দুর্গত মানুষের পাশে ত্রাণ সহায়তা ও রান্না করা খাবার বিতরণ করছেন কুলাউড়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, ঠিকানা ফাউন্ডেশন, কুলাউড়া উপজেলা স্কাউটস, স্টুডেন্টস মুভমেন্ট কুলাউড়া, হাজীপুর এভারগ্রীণ, কুলাউড়া মুক্ত স্কাউটসহ বিভিন্ন সামাজিক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের নেতারা।

এদিকে রাজনৈতিক দলের মধ্যে বিএনপি, ছাত্রদল ও অঙ্গ সহযোগী সংগঠন, জামায়াতে ইসলাম, শিবির দুর্গত মানুষের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন। আশ্রয়কেন্দ্রে থাকা মানুষদের সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে চিকিৎসা সেবা দিচ্ছে একটি মেডিক্যাল টিম।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো: মহিউদ্দিন, সেনাবাহিনীর কমান্ডিং অফিসার লেফটেন্যান্ট কর্নেল সাজ্জাদুল আহসান, মেজর রিয়াদ, ক্যাপ্টেন আদনান, সহকারী কমিশনার (ভূমি) শাহ মুহাম্মদ জহরুল হোসেন, উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো: শিমুল আলী, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী মো: মহসিন, টিলাগাঁও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো: আব্দুল মালিক ভাঙনকবলিত এলাকা পরিদর্শন করে দুর্গত মানুষের পাশে থেকে উদ্ধার কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন।

উদ্ধার কাজে অংশ নেয়া কুলাউড়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক ফরহাদ মাহমুদ জানান, ‘গত দুই দিন থেকে আটকে থাকা একজন গর্ভবতী মহিলা, পুরুষ ও শিশুকে উদ্ধার করেছি। গতকাল একাধিকবার চেষ্টার পরেও উদ্বার করা যায়নি। পানির স্রোত অনেক বেশি ছিল। উপজেলা প্রশাসন, সেনাবাহিনীর সাথে সম্পৃক্ত থেকে আমরা প্রায় সাত শতাধিক মানুষকে উদ্ধার করে নিরাপদ স্থানে পৌঁছে দিয়েছি।’

পরিস্থিতি মোকাবেলায় সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো: মহিউদ্দিন বলেন, ‘ভাঙনের খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের একটি টিম নিয়ে ছুঁটে যাই। পরে আমাদের সাথে যোগ দেন সেনাবাহিনী, স্কাউটসসহ বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের নেতারা। পরে কয়েকটি নৌকা ব্যবস্থা করে ভাঙনকবলিত টিলাগাঁও ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রায় সাত শতাধিক লোকদের উদ্ধার করে নিরাপদ স্থানে নেয়া হয়েছে। আমাদের সাথে সেনাবাহিনীর একটি টিম পানিবন্দীদের উদ্ধারে কাজ করছে। পরিস্থিতি মোকাবেলায় উপজেলা প্রশাসন একটি কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে।


আরো সংবাদ



premium cement