আবারো বন্যায় প্লাবিত সুনামগঞ্জ
তাহিরপুর ও জামালগঞ্জ-সুনামগঞ্জ সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন, পাহাড়ি ঢলে ডুবছে ঘর-বাড়ি- তৌহিদ চৌধুরী প্রদীপ, সুনামগঞ্জ
- ০১ জুলাই ২০২৪, ১৮:২৯
ভারতীয় পাহাড়ি ঢল আর বর্ষণে আবারো প্লাবিত হয়েছে সুনামগঞ্জ। সুরমা, যাদুকাটা, কুশিয়ারা, বৌলাই, ধনু, রক্তি নদীসহ সকল নদ-নদীর পানি বাড়ছেই। আজ সোমবার বিকেলে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত, সুরমা নদীর পানি বিপৎসীমার ৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।
ঢলের পানিতে প্লাবিত হয়েছে তাহিরপুর, বিশ্বম্ভরপুর, জামালগঞ্জ, মধ্যনগর, ধর্মাপাশাসহ বিভিন্ন উপজেলার নিম্নাঞ্চল। ডুবেছে হাট-বাজার ও গ্রামীণ সড়ক। জেলা শহরের সাথে তাহিরপুর ও জামালগঞ্জ উপজেলার সরাসরি সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। পাহাড়ি ঢলে ডুবছে ঘর-বাড়ি, হাটবাজার, রাস্তা-ঘাট। এতে আবারো বন্যার দুর্ভোগে পড়েছে সুনামগঞ্জবাসী।
এদিকে, সুনামগঞ্জ জেলা শহর ও শহরতলীর আশপাশ এলাকার বন্যার পানি আবারো বাড়ছে। গত শুক্রবার থেকে ভারতের মেঘালয়ে ভারি বৃষ্টি শুরু হওয়ায় এমন উদ্ভূত পরিস্থিতিতে জুলাই মাসের প্রথম দিকে সিলেট- সুনামগঞ্জ জেলার সুরমা, কুশিয়ারা, কালনী নদী সহ বিভিন্ন নদীর পানি বেড়ে বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।
যাদুকাটা নদী দিয়ে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের পানিতে ডুবে গেছে তাহিরপুর-বাদাঘাট সড়ক, জেলার বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার শক্তিয়ার খলা-কৈয়ারকান্দা সড়ক। এছাড়া তাহিরপুর উপজেলার আনোয়ারপুর সড়ক পানিতে ডুবে যাওয়ায় ও শক্তিয়ার খলায় সড়ক ভেঙে যাওয়ায় সুনামগঞ্জ জেলার শহরে যাতায়াতে দুর্ভোগে পড়েছেন বিশ্বম্ভরপুর, তাহিরপুর, মধ্যনগর ও ধর্মপাশা উপজেলার চলাচলকারীরা। বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার বাঘমারা থেকে তাহিরপুরের আনোয়ারপুর পর্যন্ত নৌকা দিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে। সাচনাবাজার সুনামগঞ্জ সড়কের নিয়ামতপুর-ইচ্চার চরের মাঝখানে নতুন ব্রিজের ডাইভারসনে হাঁটু ও উরু পানিতে চলছে ছোট নৌকা।
পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, ঢলের কারণে রোববার থেকে থেমে থেমে বৃষ্টি হওয়ার কারণে সুরমা নদীর পানি ছাতক পয়েন্টে বিপৎসীমা অতিক্রম করেছে। সিলেট ও সুনামগঞ্জের বাকি সবগুলো নদনদীর পানিই বাড়ছে।
এদিকে, টানা কয়েক দিনের ভারি বৃষ্টিতে তলিয়ে গেছে পৌর শহরের উত্তর আরপিননগর, সাহেববাড়ি ঘাট, পুরানপাড়াসহ বেশ কয়েকটি এলাকার রাস্তাঘাট। এমনকি ঢলের পানিতে বিশ্বম্ভরপুর-সুনামগঞ্জ, সুনামগঞ্জ-তাহিরপুর, সুনামগঞ্জ-সাচনাবাজার সড়কের প্রায় জায়গায়ই ডুবতে শুরু করেছে। এতে জেলা শহরের সাথে তাহিরপুর-জামালগঞ্জ উপজেলার সরাসরি সড়কপথে যোগাযোগ বিছিন্ন হয়ে পড়েছে।
অপরদিকে ছাতক, দোয়ারাবাজার, মধ্যনগরসহ বেশ কয়েকটি উপজেলার নিম্নাঞ্চলের গ্রামীণ সড়ক তলিয়ে যাওয়ায় আবারো ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে নিম্নাঞ্চলের লাখো মানুষ। পর পর দুইবার পানি বাড়ায় নাজেহাল হয়ে পড়েছে নিম্নাঞ্চলের বাসিন্দাদের জীবন।
জামালগঞ্জের সিএনজি ড্রাইভার শামসু মিয়া বলেন, ‘সাচনাবাজার-সুনামগঞ্জ সড়কের নিয়ামতপুরের সামনের নতুন ব্রিজ নির্মাণের পাশে ডাইভারশন রোডের ব্রিজ ডুবে গেছে। এখানে প্রায় উরু পানি রয়েছে, কিছু গাড়ি যাতায়াত করছে ঝুঁকি নিয়ে। যাত্রীদের ছোট নৌকা দিয়ে এপার-ওপার যাতায়াত করে গাড়িতে চড়তে হচ্ছে। পানি যেভাবে বাড়ছে আবারো যদি বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয় তাহলে আমাদের অবস্থা আরো বেগতিক হবে।’
তাহিরপুর উপজেলার সংবাদকর্মী মো: মুরাদ মিয়া বলেন, ‘গত কয়েক দিনের বন্যায় মানুষে কষ্ট এখনো শেষ হয়নি। এখন আবারো যাদুকাটা নদী দিয়ে নামছে ঢল, বাড়ছে নদীর পানি। তাহিরপুর উপজেলা শহর থেকে সুনামগঞ্জে সরাসরি সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে। বন্যার পানি না কমা পর্যন্ত এলাকার মানুষের অবস্থা নাজেহাল হয়ে পড়ছে।’
সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মামুন হাওলাদার বলেন, ‘সুনামগঞ্জে নদ-নদীর পানি এরইমধ্যে বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে ভারতের চেরাপুঞ্জিতে বৃষ্টি কমে গেলে সুনামগঞ্জের নদ-নদীর পানি কমে যাবে। আর এখন যেহেতু পানি বাড়ছে সেক্ষেত্রে জেলায় স্বল্পমেয়াদী একটা বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে।’
তিনি জানান, ছাতকে সুরমা নদীর পানি বিপৎসীমার ২৩ সেন্টিমিটার ও তাহিরপুরের যাদুকাটা নদীর পানি বিপৎসীমার ৯৬ সেন্টিমিটারের উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রাশেদ ইকবাল চৌধুরী বলেন, ‘জেলায় বন্যা পরিস্থিতিতে আমরা সতর্ক অবস্থানে আছি। বিভিন্ন উপজেলায় আশ্রয়কেন্দ্রগুলো খোলা রয়েছে। যেকোনো প্রয়োজনে জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।’