২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

দোয়ারাবাজারে ইচ্ছামাফিক খোলা হয় কমিউনিটি ক্লিনিক

- ছবি : নয়া দিগন্ত

সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার উপজেলার সুরমা ইউনিয়নের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মাঝে দ্রুত সময়ের মধ্যে জরুরি চিকিৎসা সেবা দিতে কমিউনিটি ক্লিনিক রয়েছে। তবে এই ক্লিনিক সপ্তাহের বেশিরভাগ দিনই বন্ধ থাকে। ইচ্ছামাফিক খোলা হয়। এতে সরকারের স্বাস্থ্যসেবা জনগণের কাছে সময়মতো পৌঁছাচ্ছে না।

চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন মহব্বতপুর, মোহাম্মদপুর, শিমুলতলা মারপশী, কাওয়ারঘর, রাজনগর, বরকতনগর, গোজাউারা খাগুর, জিয়াপুরসহ প্রায় ১৫টি গ্রামের কয়েক হাজার মানুষদের। অথচ মা-শিশু ছাড়াও সাধারণ রোগের পাশাপাশি ক্যান্সারের স্কিনিং করার কথা এসব ক্লিনিক থেকে। রয়েছে রোগী রেফার করার পদ্ধতি। বিনামূল্যে দেয়া হয় ২৭টি জরুরি ওষুধ।

জানা গেছে, স্বাস্থ্যসেবা ও প্রয়োজনীয় ওষুধ তৃণমূলে পৌঁছে দিতে বর্তমান সরকারে উদ্যোগে কমিউনিটি ক্লিনিক করা হয়। চাহিদা অনুযায়ী বছরে তিন থেকে চার বার ওষুধ সরবরাহ করা হয়ে থাকে এ ক্লিনিকে। সরকার ক্লিনিকে টাকা খরচ করলেও পর্যাপ্ত সেবা পাচ্ছে না এলাকাবাসী। জেলা বা উপজেলা থেকে তদারকি না থাকায় সিএইচসিপি, এইচএ, এফডব্লিউএ দায়সারাভাবে দায়িত্ব পালন করছেন।

স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, কোনো নিয়মনীতির তোয়াক্কা নেই মহব্বতপুর কমিউনিটি ক্লিনিকে। সেবা নিতে আসা রোগীদের ফিরে যেতে হয় খালি হাতে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের তদারকির অভাবে কার্যক্রম অনেকটা ঝিমিয়ে পড়ছে।

শুক্রবার ছাড়া সপ্তাহে ছয় দিন কমিউনিটি ক্লিনিক খোলা থাকার কথা। যেখানে কমিউনিটি হেলথ কেয়ার ছাড়াও পর্যায়ক্রমে তিন দিন করে, স্বাস্থ্য সহকারী এবং পরিবার পরিকল্পনা সহকারীর চিকিৎসা দেয়ার কথা। ওই হিসেবে প্রতিদিন ক্লিনিকে দু’জনের সেবা প্রদান করার কথা। কিন্তু রোগীদের অভিযোগ, সপ্তাহের বেশিরভাগ দিনই বন্ধ থাকে ক্লিনিক। এছাড়াও সকাল ৯টা থেকে বেলা ৩টা পর্যন্ত খোলা থাকার কথা থাকলেও দুপুর ১টা বাজতে না বাজতেই বন্ধের তোড়জোড় শুরু করেন কর্তব্যরতরা। ফলে সাধারণ মানুষজন এ সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।

সরেজমিনে ১১টায় মহব্বতপুর কমিউনিটি ক্লিনিকে দেখা যায় ক্লিনিক ভবনের মূল ফটকে তালা ঝুলছে। এখানে অনেকেই জানেন না কেউ সেবা দিতে আসেন বা সরকারের বিনামূল্যে ওষুধ পাওয়া যায়।

স্থানীয়রা জানায়, টানা বৃষ্টি আর পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট বন্যার পানি কমতে শুরু করলেও পানি কমার সাথে সাথে বন্যাকবলিত এই এলাকার মানুষরা সর্দি, জ্বর, ডায়েরিয়া, আমাশয়সহ নানান রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। অসুস্থ হয়ে ক্লিনিকে এসে দেখেন কেউ নেই, তখন পড়েন নানান ভোগান্তিতে। সপ্তায় দুই থেকে তিন দিন পর একজন চিকিৎসক আসেন অফিস খোলেন। ঘণ্টা তিনেক থেকে আবার চলে যান। তাই এ ক্লিনিক নিয়ে ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী।

স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মী শাহ মাশুক নাইম জানান, ‘মহব্বতপুর কমিউনিটি ক্লিনিক নিয়ে অভিযোগের শেষ নেই। ক্লিনিকে একজন সিএইচসিপি কাজ করেন। তিনি নিয়মিত আসেন না। ইচ্ছেমাফিক খোলা হয়। অনেক দূর থেকে রোগীরা এসে চিকিৎসা না পেয়ে ফিরে যান। আসলেও দেরিতে আসেন আর দুপুরেই আগেই ক্লিনিক বন্ধ করে চলে যান।’

এ বিষয়ে মহব্বতপুর কমিউনিটি ক্লিনিকের সিএইচসিপি রফিকুল হাসানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, ‘আমি ট্রেনিংয়ে থাকায় ক্লিনিকে যেতে পারছি না। ট্রেনিং থাকলে ক্লিনিক বন্ধ থাকবেই স্বাভাবিক।’

দোয়ারাবাজার উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আবু সালেহীন খান বলেন, ‘মহব্বতপুর কমিউনিটি ক্লিনিকে দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তা আজ (বৃহস্পতিবার) থেকে ট্রেনিং যাবেন। গত তিন-চার দিন ক্লিনিক বন্ধ থাকার বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।’


আরো সংবাদ



premium cement