বন্যায় আবারো প্লাবিত জৈন্তাপুর, আশ্রয়কেন্দ্রে যাচ্ছে মানুষ
- জৈন্তাপুর (সিলেট) সংবাদদাতা
- ১৮ জুন ২০২৪, ১৯:৫৮
সিলেটের জৈন্তাপুরে ভারি বৃষ্টিপাতে আবারো সারি ও করিচ নদীর পানি বেড়ে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হতে শুরু করেছে। সোমবার (১৭ জুন) সারা রাতের বৃষ্টিপাতের কারণে মঙ্গলবার বিকেল ৩টায় সারী নদীর পানি বিপৎসীমার ১২.৩৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।
এদিকে, করিচ ও কাপনা নদীর পানি অতিরিক্ত মাত্রায় বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড জৈন্তাপুর।
শনিবার (১৫ জুন) ভোর রাত থেকে ভারতের মেঘালয় ও বাংলাদেশের সিলেটে ভারি বর্ষণের ফলে জৈন্তাপুর ও গোয়াইনঘাটে ফের পানি প্রবেশ করতে শুরু করেছে। এতে জৈন্তাপুরের নতুন নতুন গ্রাম পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। বন্যার পানি বাড়তে শুরু করায় অনেকেই আশ্রয় নিয়েছে বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে।
জৈন্তাপুর উপজেলার হরিপুর বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ে ২০টি পরিবার এরইমধ্যে আশ্রয় নিয়েছে। বসতভিটায় পানি ওঠায় বাধ্য হয়ে সোমবার রাত থেকে পরিবার-পরিজন ও গৃহপালিত পশুপাখি নিয়ে এখানে আশ্রয় নিয়েছেন অসহায় মানুষগুলো। গ্রামীণ সড়ক একের পর এক ডুবছে। হেমু তিনপাড়া সড়কের প্রায় এক কিলোমিটার অংশ বানের পানিতে তলিয়ে গেছে। এসব সড়কের উপর দিয়ে তীব্র স্রোত যাচ্ছে। এছাড়া, সোমবার থেকেই প্লাবিত আছে উপজেলার প্রায় অর্ধেকেরও বেশি গ্রাম। এতে ভোগান্তিতে পড়েছে হাজার হাজার মানুষ।
সারি, করিচ, বড়গাং ও কাপনা নদীর পানি বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় উপজেলার ছয়টি ইউনিয়ন বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে। মারাত্মক দুর্ভোগে পড়েছেন এসব উপজেলার বাসিন্দারা।
এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, পানিবন্দী হয়ে পড়েছে হাজার হাজার মানুষ। গৃহপালিত পশুপাখি নিয়েও তারা পড়েছেন মহাবিপদে। বন্যায় কারো ঘরে পানি, কারো দুয়ারে। বন্যাকবলিত এসব মানুষ আশ্রয় নিয়েছে উঁচু স্থানে ও অন্যের বাড়িতে। কেউ টং পেতে পরিবার নিয়ে নানা কষ্টে দিন কাটাচ্ছে। রাস্তাঘাট তলিয়ে যাওয়ায় তাদের ভোগান্তির শেষ নেই। অনেকের রাত দিন কাটাতে হচ্ছে নৌকায়। অর্থনৈতিক দিক দিয়ে পিছিয়ে থাকা মানুষগুলোর কষ্টের শেষ নেই। তিন বেলা খেতেও পারছেন না অনেকেই।
বন্যাকবলিত হয়েছে উপজেলার দরবস্ত ইউনিয়নের মহাইল, মুটগুঞ্জা, সেনগ্রাম, গর্দনা, ফরফরা, শুকইনপুর, রনিফৌদ, সাতারখাই। ফতেপুর ইউনিয়নের হেমু ভাটপাড়া, মাঝপাড়া, দত্তপাড়া, বালিপাড়া, নয়াগ্রাম, নয়াগ্রাম দক্ষিন, ভেলোপাড়া, হরিপুর। জৈন্তাপুর ইউনিয়নের মুক্তাপুর, বিরাইমারা, বিরাইমারা হাওর, লামনীগ্রাম, কাটাখাল, খারুবিল, চাতলারপাড়, ডুলটিরপাড়, ১ নম্বর লক্ষীপুর, ২ নম্বর লক্ষীপুর, আমবাড়ী, ঝিঙ্গাবাড়ী, নলজুরী হাওর। নিজপাট ইউনিয়নের মেঘলী, বন্দরহাটি, লামাপাড়া, ময়নাহাটি, জাঙ্গালহাটি, মজুমদার পাড়া, হর্নি, বাইরাখেল, গোয়াবাড়ী, তিলকৈপাড়া, বড়খেল, ফুলবাড়ী, ডিবিরহাওর, ঘিলাতৈল, হেলিরাই। ৩ নম্বর চারিকাটা ইউনিয়নের বালিদাঁড়া, লালাখাল, রামপ্রসাদ, থুবাং, বাউরভাগ উত্তর, বাউরভাগ দক্ষিণ, পুঞ্জীসহ উপজেলার ছয়টি ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। তাদের চলাচলের একমাত্র বাহন নৌকা।
হেমু ভাটপাড়া গ্রামের বাসিন্দা আব্বাস উদ্দিন জানান, তার ঘরসহ আশপাশের আরো কয়েকটি এলাকার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। তার ঘরের ভেতরে কোমর পানি। ঘরে থাকা সবকিছু নষ্ট হয়ে গেছে।
তিনি বলেন, ‘এখনো আরো পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে, খুব দুশ্চিন্তায় আছি। ঘরের সব ফেলে রেখে অপরের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছি। এখানে রান্নাবান্নাসহ নানা সমস্যায় চরম ভোগান্তিতে রয়েছি। গরু-ছাগলসহ গৃহপালিত পশুপাখি নিয়ে রয়েছি মহাবিপদে।’
জৈন্তাপুর উপজেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপসহকারী প্রকৌশলী মো: হাসান পারভেজ রিয়াদ বলেন, সারি নদীর পানি বিপৎসীমার ১২.৩৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পাহাড়ে বৃষ্টি থেমে গেলে পানি নিচের দিকে প্রবাহিত হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) উম্মে সালিক রুমাইয়া বলেন, ‘বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলায় উপজেলা প্রশাসন প্রস্তুত রয়েছে। আমরা ইতোপূর্বে পানিবন্দী মানুষকে উদ্ধার করছি। উপজেলায় আশ্রয়কেন্দ্রের ব্যবস্থা করা হয়েছে মোট ৪৮টি। মানুষের মাঝে ত্রাণ ও শুকনো খাবার বিতরণ করেছি। একইসাথে পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেটও বিতরণ করা হচ্ছে। আমরা উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে পানিবন্দী মানুষের সহায়তায় সার্বক্ষণিক কাজ করতে প্রস্তুত আছি।’
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা