২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
বাড়ছে হোম কোয়ারেন্টাইনের সংখ্যা

করোনা : শ্রীমঙ্গলে হোটেল-রিসোর্ট বন্ধ রাখার নির্দেশ

- প্রতীকী ছবি

করোনা ভাইরাসের (কোভিড-১৯) প্রাদুর্ভাব রোধে চায়ের রাজধানী মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে দেশি-বিদেশি পর্যটকদের আগমন নিরুৎসাহিত করতে অনির্দিষ্টকালের জন্য সব হোটেল-রিসোর্ট বন্ধ রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। বুধবার শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) এবং ‘করোনা ভাইরাস’ প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি মো: নজরুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে এ নির্দেশনা দেয়া হয়। এতে আশা করা হচ্ছে দেশি-বিদেশি ও বিদেশফেরত পর্যটকের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে।

অন্যদিকে মৌলভীবাজার জেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি হোম কোয়ারেন্টাইনে আছেন শ্রীমঙ্গল উপজেলার মানুষ। যাদের সংখ্যা বুধবার রাত নয়টা পর্যন্ত ছিল ৬৪ জন। তবে এদের সংখ্যা আরো বাড়বে এবং বেশিরভাগই তারা বিদেশ ফেরত বলে বৃহস্পতিবার দুপুর সোয়া ১২টায় দৈনিক নয়া দিগন্তকে জানিয়েছেন উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. সাজ্জাদুর রহমান।

ইউএনও মো: নজরুল ইসলাম বলেন, ‘প্রত্যেক হোটেল/রিসোর্ট/রেস্টহাউজ মালিকদের সঙ্গে আমার মৌখিকভাবে কথা হয়েছে এবং চিঠিও পাঠানো হয়েছে যে, কোনো বিদেশিকে তো অ্যালাউ করা যাবেই না; বাংলাদেশেরও কোনো পর্যটকের বুকিং নেয়ার দরকার নেই। আগে মানুষ বাঁচুক তারপর ব্যবসা করবেন। শ্রীমঙ্গলে বর্তমানে হোম কোয়ারেন্টাইনের সংখ্যা ৬৪ জন হয়ে গেছে।’

তিনি আরো বলেন, ‘শ্রীমঙ্গলে হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকা মানুষের সচেতনতার মাত্রা খুবই কম। যেখানে বিদেশ থেকে আসা মানুষেরা নিজ দায়িত্বে হোম কোয়ারেন্টাইনে যাবেন যেখানে দু-একজন শহরে বের হয়ে যাচ্ছেন। আমরা ফোন করে মোবাইল নম্বর দিয়ে বলেছি সার্বক্ষণিক তাদের শারীরিক অবস্থা আমাদের জানাতে, আমরা তাদের বাড়িতে গিয়ে বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা দিয়ে আসবো। তারপরও কেউ কেউ আমাদের সরকারি নির্দেশনা মানছেন না।’

শ্রীমঙ্গল উপজেলায় হোম কোয়ারেন্টাইনের শর্তভঙ্গ করলে তাদেরকে অর্থ জরিমানা করতে প্রশাসন বাধ্য হবে বলেও জানান ইউএনও মো: নজরুল ইসলাম।

এদিকে করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব রোধে সচেতনতার অংশ হিসেবে শ্রীমঙ্গলে ৬৪ ব্যক্তিকে হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে বলে শ্রীমঙ্গল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে। তাদেরকে গভীর পর্যবেক্ষণে রাখার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. সাজ্জাদুর রহমান। তিনি দৈনিক নয়া দিগন্তকে জানান, হোম কোয়ারেন্টাইনে যারা আছেন তাদের বেশিরভাগই বিদেশ ফেরত। তবে পর্যায়ক্রমে এ সংখ্যা আরো বাড়তে পারে।

তিনি বলেন, ‘যেহেতু শ্রীমঙ্গল প্রবাসী অধ্যুষিত এলাকা তাই বুধবার রাত পর্যন্ত যে সংখ্যা ছিল সেটা বেড়ে যাবে, আমরা আপডেট খবরটা বিকেলেই আপনাদেরকে জানিয়ে দিব। প্রতিনিয়তই সর্বশেষ পরিস্থিতি নিরূপণ করা হচ্ছে। এছাড়া করোনা মোকাবেলায় আমাদের প্রস্তুতি নেয়া আছে। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের একটি ভবনের ৩টি কক্ষে ৮টি বেড প্রস্তুত করে রাখা হয়েছে। এছাড়া প্রশাসনের সমস্বয়ে গঠিত কমিটি পরিস্থিতির উপর সার্বক্ষণিক নজর রাখছেন।’

তিনি সব ধরনের গনজমায়েত এড়িয়ে চলতে সকলের প্রতি অনুরোধ জানান।

অপরদিকে, ‘করোনা ভাইরাস’ সংক্রমণ থেকে রেহাই পেতে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে শ্রীমঙ্গলের সবকটি সিনেমা হল, চিড়িয়াখানা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।

এদিকে শ্রীমঙ্গলে সাধারণ মানুষকে অতিরিক্ত নিত্যপণ্য কিনতে দেখা গেছে। ব্যবসায়ীরা জানান, গত ৩/৪ দিন ধরে মানুষজন প্রচুর পরিমাণে নিত্যপণ্য কিনছেন। মানুষের কেনাকাটার ধরণ দেখে মনে হচ্ছে ঈদের বাজার করছেন। এভাবে নিত্যপণ্য ক্রয় করলে দাম বেড়ে যেতে পারে বলেও ব্যবসায়ীরা জানান। ইতোমধ্যে শ্রীমঙ্গলের চাউলের প্রতি বস্তাতে এক/দুইশত টাকা বেড়ে যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এছাড়া পেয়াজের প্রচুর আমদানী থাকায় গত মঙ্গলবার পর্যন্ত ৩৫ টাকা করে বিক্রি হলেও বুধবার রাতে পেয়াজের সংকট দেখা দেয়।

ব্যবসায়ীরা জানান, এতো পরিমাণে পেয়াজ এর আগে কখনো বিক্রি হয়নি। খুচরা বাজারে বুধবার রাতে ৬০ টাকা পর্যন্ত পেয়াজ বিক্রি করতে দেখা গেছে। সাথে বেড়েছে আলুর দামও। তবে তেল, মসলাসহ অন্যান্য নিত্যপণ্য আগের দামেই বিক্রি হয়েছে।

শ্রীমঙ্গল ব্যবসায়ী সমিতির কোষাধক্ষ্য ও সেন্ট্রাল রোডের পাইকারী ব্যবসায়ী মো: আব্দুল বাছিল দৈনিক নয়া দিগন্তকে বলেন, ‘হঠাৎ করে আমদানীর তুলনায় প্রকারভেদে চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় পেয়াজসহ অন্যান্য পণ্যের দাম কিছুটা বেড়েছে। চাহিদা কমে গেলে বাজার স্থিতিশীল হয়ে যাবে। তবে পণ্যের কোনো সংকট নেই বলেও তিনি জানান।


আরো সংবাদ



premium cement