সিলেটে পূজায় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা : আটক ছাত্রলীগ নেতা মুচলেকায় মুক্ত!
- এম জে এইচ জামিল, সিলেট
- ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১৭:০২
সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজে (সিওমেক) সরস্বতী পূজায় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির মাধ্যমে ধর্মীয় সম্প্রীতি বিনষ্টের ষড়যন্ত্র করার অভিযোগে সজল এস চক্রবর্তী নামে এক ছাত্রলীগ নেতাকে আটক করেছে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। পরে মুচলেকা দিয়ে মুক্তি পান তিনি।
সোমবার (৩ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে সিওমেক ক্যাম্পাসে এ ঘটনা ঘটে।
আটক সজল সিওমেকের এমবিবিএস ৫১তম বর্ষের শিক্ষার্থী।
জানা গেছে, নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের সিওমেক শাখার সাধারণ সম্পাদক সজল এস চক্রবর্তী জুলাই আন্দোলনে ছাত্র-জনতার উপর হামলায় জড়িত থাকায় ক্যাম্পাসে আজীবনের জন্য নিষিদ্ধ।
আরো জানা গেছে, ধর্মীয় ইস্যু তৈরি, ক্যাম্পাসে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি ও বিভিন্ন মিডিয়ার সংবাদে শিরোনাম হতে ক্যাম্পাসে এসেছিলেন।
পরে এ ঘটনাকে সাম্প্রদায়িকতার রূপ দিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অপপ্রচার চালাচ্ছে নিষিদ্ধ পলাতক ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সোমবার দুপুর ১টার দিকে সিওমেক ক্যাম্পাসে সরস্বতী পূজায় যান সজল। এসময় উপস্থিত কতিপয় শিক্ষার্থী তাকে আটক করে কলেজ অধ্যক্ষের কার্যালয়ে নিয়ে যান। সেখানে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে সজলকে পূজা কমিটির কাছে হস্তান্তর করা হয়। এরপর পূজা কমিটির সদস্যদের উদ্যোগে তাকে বাসায় পৌঁছে দেয়া হয়।
সজল বর্তমানে ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ক্লিনিক্যাল প্যাথলজিস্ট হিসেবে কর্মরত।
গত ৫ আগস্ট আওয়ামী সরকারের পতনের পর গত ১ সেপ্টেম্বর মেডিক্যাল কলেজের একাডেমিক কাউন্সিলের এক সভায় সজল এস চক্রবর্তীসহ আটজন সাবেক ও বর্তমান ছাত্রলীগ নেতাকর্মীকে ক্যাম্পাসে আজীবনের জন্য অবাঞ্ছিত করা হয়।
ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ সরস্বতী পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি ডা: সুকান্ত মজুমদার বলেন, ‘ক্যাম্পাসে অবাঞ্ছিত সাবেক এক ছাত্রলীগ নেতা পূজায় আসেন। তার উপস্থিতিতে ছাত্রদের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়। তখন তাকে অধ্যক্ষ অফিসে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর আমাদের কাছে হস্তান্তর করা হলে আমরা বাসায় পাঠিয়ে দেই। সে কলেজের পূজা কমিটিতে ছিল না এমনকি আমন্ত্রিতও ছিল না।’
মুচলেকায় যা লিখেছেন সজল
এদিকে, কলেজে ধর্মীয় ইস্যুতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির কথা স্বীকার করে পূজা কমিটির নেতৃবৃন্দের উপস্থিতিতে অঙ্গিকারনামায় মুচলেকা দিয়েছেন সজল এস চক্রবর্তী।
অঙ্গীকারনামায় তিনি বলেন, ‘আমি সজল এস চক্রবর্তী (সিওমেক, ৫১তম ব্যাচ) নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক। ক্যাম্পাসে থাকাকালীন সময়ে আমি চাঁদাবাজি, দখলদারিত্ব, র্যাগিংসহ বিভিন্ন অপকর্মের সাথে জড়িত ছিলাম। আমি বিভিন্ন সময়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদেরকে শিবির ট্যাগ দিয়ে নির্যাতন করেছি। ক্যাম্পাসে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করতে শামসুদ্দিন ও জিয়া হলের একাধিক রুমে ছাত্রলীগের মদদে আগ্নেয়াস্ত্র রেখেছি।
সর্বশেষ জুলাই গণঅভ্যুত্থানে সিওমেকের সাধারণ শিক্ষার্থীরা স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে অবস্থান করলে আমি ১৫ জুলাই নিউ বয়েজ হোস্টেলের ২০৫ নম্বর রুমে ছাত্রলীগের সকল ক্যাডারদের নিয়ে মিটিং করে সাধারণ শিক্ষার্থীদের দমনে নির্দেশ প্রদান করি। ৫৪ ব্যাচের সাইফুল ইসলাম (তৎকালীন ছাত্রলীগের সভাপতি) ও ৫৪তম ব্যাচের নাজমুল ইসলামের (তৎকালীন ছাত্রলীগের সেক্রেটারি) নির্দেশনায় গত ৩০ জুলাই আমি জিয়া হলে অভিযান চালিয়ে হলে সব সাধারণ শিক্ষার্থীকে হল থেকে উৎখাত করি।
গত ৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে একাডেমিক কাউন্সিল আমার বিরুদ্ধে দণ্ডারোপ করে।
৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগ ঘোষিত কর্মসূচি বাস্তবায়নের উদ্দেশে এবং অসাম্প্রদায়িক ক্যাম্পাসকে অস্থিতিশীল করার লক্ষে ওপর মহলের নির্দেশে ক্যাম্পাসে আসি, এ বিষয়ে আমার কিছু প্রাক্তন সহচর আমাকে আশ্বাস প্রদান করে। উদ্দেশ্য ছিল সরস্বতী পূজাকে কেন্দ্র করে ধর্মীয় ইস্যু তৈরি করা, বিশৃঙ্খলা তৈরির মাধ্যমে ন্যাশনাল নিউজে কাভার হওয়া। আমি এহেন ধৃষ্টতা দেখিয়ে ভুল করেছি। আমি মুচলেকা দিচ্ছি যে, আমার সাথে পূজা কমিটির কোনো সম্পৃক্ততা নেই। সাধারণ শিক্ষার্থীরা আমাকে ধর্মীয় পরিচয় কোনো রকম হয়রানি করেনি, পূজামণ্ডপে অবস্থানরত সময়ে আমাকে কোনো রকমের হেনস্তাও করা হয়নি। পরবর্তী সময়ে ক্যান্টিনে বসে চা খাওয়ার সময় সবাই আমাকে জবাবদিহিতার আওতায় আনে এবং স্যারদের মাধ্যমে আমাকে প্রিন্সিপাল স্যারের কাছে পাঠানো হয়। আমি সজ্ঞানে অঙ্গীকার করছি যে, আমি আজকের পরে সজ্ঞানে আর কখনো সিওমেক ক্যাম্পাসে প্রবেশ করব না।’
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা