চা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা গতবারের চেয়ে বেশি হবে : টি বোর্ড চেয়ারম্যান
- এম এ রকিব, শ্রীমঙ্গল (মৌলভীবাজার)
- ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৭:১১
চা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা গতবারের চেয়ে বেশি হবে মন্তব্য করে বাংলাদেশ চা বোর্ডের চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল শেখ মো: সরওয়ার হোসেন বলেছেন, ‘গত বছর লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১০৪ মিলিয়ন কেজির মতো। এবার আমরা কাছাকাছি চলে যাব। তবে রফতানির দিক থেকে গতবারের চেয়ে লক্ষ্যমাত্রা এবার বেশি আছে।’
তিনি বলেন, এ সময়ে অকশনের দামটা বাজারের দামের চেয়ে কম আছে। এটা নিয়ে আমরা অকশন ব্রোকারদের সাথে মিটিংয়ের ব্যবস্থা করেছি এবং যারা প্রধান স্টেকহোল্ডার আছেন, লাইক পার্সেস করছেন ইস্পাহানি, আবুল খায়ের গ্রুপ তাদের সাথেও আমি কথা বলেছি। পরবর্তীতে অকশনের দামটা আরেকটু বাড়ানো যায় কিনা। এটা নিয়ে আমরা কাজ করছি। আমরা চিন্তা করছি সবমিলিয়ে চায়ের বিক্রি দামটা আরো ভালো পর্যায়ে আনতে।’
সোমবার (২৩ ডিসেম্বর) দুপুরে বাংলাদেশ চা গবেষণা কেন্দ্র (বিটিআরআই) আয়োজিত প্রকল্প উন্নয়ন ইউনিটে ‘সেমিনার অন দ্য ইউজ অব বিটিআরআই অপ্টিমাইজড টেকনোলজিস ফর দ্য স্টেকহোল্ডারস’ শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি একথা বলেন।
বাংলাদেশ চা বোর্ডের পরিচালক ড. মোহাম্মদ ইসমাইল হোসেনের সভাপতিত্বে এবং বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. শেফালী বোনার্জীর পরিচালনায় সেমিনারে বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ চা বোর্ডের নবনিযুক্ত সদস্য এবং যুগ্ম সচিব ড. পিযুষ দত্ত। এ সময় বক্তব্য দেন ফিনলে টি কোম্পানির সিইও তাহসিন আহমেদ চৌধুরী ও প্রকল্প পরিচালক ড. এ কে এম রফিকুল হক।
এ সময় টি বোর্ডের চেয়ারম্যান বলেন, ‘আমি গত অক্টোবরের ২৩ তারিখ টি বোর্ডের দায়িত্ব নিয়েছি। ইতোমধ্যে অনেক বাগানের মালিক এবং ব্যবস্থাপকের সাথে কথা বলেছি। আমাদের নিজস্ব বাগানগুলো ঘুরে দেখেছি। তারা বাগানে লোকসানের বিষয়গুলো তুলে ধরেন। এভাবে বাগান চালিয়ে যাওয়া সম্ভব না বলেও জানান। কিন্তু একেকটা বাগানে হাজার হাজার শ্রমিক, কর্মচারী রয়েছেন। এটা যদি ঝুঁকির মধ্যে পড়ে এবং এভাবে বাগানগুলোকে লোকসান দিতে হয়, তাহলে আমার মনে হয় না কেউ টি বিজনেসে আগ্রহী হবে। আমি নিজে কোনো বাগানের মালিক হলে এভাবে লোকসান দিয়ে বাগান চালিয়ে যেতাম না।’
তিনি উপস্থিত সকলের উদ্দেশে প্রশ্ন রেখে বলেন, ‘বড় বড় কোম্পানি বা কারখানাগুলো কি বছরের পর বছর এভাবে লোকসান দিয়ে চলছে? না। এখানে দু’টি ক্লাস হয়ে গেছে। একটা চায়ের ভালো দাম পাচ্ছে, আরেকটা ঠিক থাকতে পারছে না, অনেকটা সাঁতার না জানার মতো। যারা ঠিক থাকতে পারছে না তাদের ব্যবস্থাপনার সমস্যা আছে। সেটা দূর করতে হবে। কারো মাথা ব্যথা ওঠলে কেউ ম্যাসেজ করে, কেউ প্যারাসিটামল সেবন করে আবার কারো এন্টিবায়োটিকের প্রয়োজন পড়ে। সমস্যা চিহ্নিত করে সমাধানের পথ খুঁজতে হবে এবং কোয়ালিটি উৎপাদন করতে হবে। চায়ের প্রতি কেজির গড় বিক্রি যদি ২৩০ টাকা থাকে, তাহলে কোনো বাগানে লোকসান হবে না। আমি সেটা দেখিয়ে দিব।’
তিনি আরো বলেন, ‘যদিও আমাদের এই সেক্টরটা ক্রিটিক্যাল সময় পার করছে। এই সেক্টরে যারা জড়িত তাদেরকে বলব, উন্নতি করতে হলে আন্তরিকতা নিয়ে যুক্ত থাকতে হবে। বাগানের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে ম্যানেজার। একটা বাগানের ম্যানেজার ঠিক থাকলে কোনোভাবেই বাগানে লোকসান হবে না। ম্যানেজার ঠিক না থাকলে কোনোভাবেই বাগান লাভবান হবে না। চা বাগান লোকসানের ডিসক্রেডিট দিতে হলে টি বোর্ডকেও দিতে হবে। কারণ টি বোর্ডও এর সাথে জড়িত।’
এ সময় টি বোর্ডের চেয়ারম্যান কিছুটা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘আমাকে টি রিসোর্টে চা দেয়া হলো। কথার ছলে আমি জানতে চাইলাম এটা কোথাকার চা? তারা জানায়, বাহির থেকে কিনে এনেছে। আমাদের তিনটা বাগান থাকার পর, নিজস্ব প্রোডাক্ট থাকার পর, বাজার থেকে চা কিনে কেন খাওয়াবেন? সেটার উত্তর আমি এখনো পাইনি। সকালে আরেকটা জিনিস জানলাম, আমাদের বিক্রয় কেন্দ্রে একটা ছেলে ছিল। তিন লাখ টাকা সে নিয়ে গেছে। একজন বিক্রয় কেন্দ্রের কর্মচারীর পকেটে তিন লাখ টাকা থাকবে কেন? সে প্রতিদিন চা বিক্রি করছে নয় থেকে ১০ হাজার টাকা। তাহলে তিন লাখ টাকা একসাথে করতে তার কত দিন সময় লেগেছে? কমপক্ষে ৩০ দিন লেগেছে। আমার ব্যবস্থাপনার কেউ খবরও নেয়নি যে, ওই আদম চা বিক্রির পরে টাকাটা অ্যাকাউন্টে জমা দেয়নি। তাহলে আমাদের কি লাভ হবে? এগুলো হচ্ছে আমাদের ব্যবস্থাপনার দুর্বলতা। প্রত্যেকটা জায়গায় যদি আমরা ব্যবস্থাপনা ঠিক করি, তাহলে সব ঠিক হবে যাবে। ব্যবস্থাপনার দুর্বলতা থাকলে কখনো কোনো প্রতিষ্ঠান ঠিক হবে না।’
বাগান মালিকদের উদ্দেশ্যে টি বোর্ডের চেয়ারম্যান আরো বলেন, ‘চা এবং এই সেক্টরের উন্নতির জন্য প্রতি বছর আমরা ৩৫ থেকে ৪০ কোটি টাকা খরচ করি। আমাদের গবেষকরা অনেক যোগ্যতাসম্পন্ন গবেষক এবং তাদের অনেক অভিজ্ঞতা ও দক্ষতা আছে। এটাকে আপনারা কাজে লাগানোর চেষ্টা করেন এবং যেকোনো সহযোগিতা আপনারা নেন। আপনারা চিহ্ণিত করুন আপনাদের বাগানের দুর্বলতাগুলো। আমি চা’কে কৃষি শ্রমিক হিসেবে ঘোষণা করার প্রস্তাব পাঠিয়েছি। যাতে কৃষি ব্যাংক থেকে লো ইন্টারেস্টে লোন দেয়া হয়। আমি কাজ করে যাচ্ছি। কাজ করতে কখনো দ্বিধাবোধ করব না। আপনারাও কাজ করুন, আমি ধরিয়ে দেব কোথায় কোথায় সমস্যা আছে। প্রয়োজনে আমি নিজে আপনাদের বাগানে যাব।’
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা