দেড় মাস পর কাজে ফিরছে সিলেটের চা শ্রমিকরা
- এম জে এইচ জামিল, সিলেট
- ০২ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০:২৮
বকেয়া পরিশোধের আশ্বাসে সিলেটে কাজে ফিরছে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ন্যাশনাল টি কোম্পানির (এনটিসি) ১১ হাজার চা-শ্রমিক। আগামী বৃহস্পতিবার থেকে শ্রমিকরা কাজে যোগ দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
সোমবার (২ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন ন্যাশনাল টি কোম্পানির আওতাধীন লাক্কাতুরা চা বাগানের ব্যবস্থাপক আক্তার শহীদ।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ন্যাশনাল চা কোম্পানির (এনটিসি) ১২টি বাগানে (ফাঁড়ি বাগানসহ ১৯টি) চা শ্রমিকরা আগামী বৃহস্পতিবার থেকে কাজে ফিরবে। চা শ্রমিকরা মজুরি না পেয়ে টানা কর্মবিরতি পালন করে আসছিল। এর ফলে এ বাগানগুলো অচল হয়ে পড়ে। এতে কোম্পানির ৬০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে জানা গেছে।
এ কর্মবিরতির মধ্যে তাদের দাবি ছিল বকেয়া মজুরি দেয়া ও শ্রমিকদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রত্যাশা বাস্তবায়ন। এগুলোর আশ্বাসের প্রেক্ষাপটে ন্যাশনাল চা কোম্পানির সবগুলো বাগানের চা শ্রমিকরা কাজে যোগ দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, একটি উচ্চপর্যায়ের বৈঠক থেকে চা শ্রমিকদের নিজ নিজ বাগানে কাজে যোগদানের সিদ্ধান্ত এসেছে। সম্প্রতি মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল শ্রম অধিদফতর কার্যালয়ে চা শ্রমিকদের শীর্ষ পর্যায়ের নেতা ও ন্যাশনাল চা কোম্পানির যৌথ বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। রোববার (১ ডিসেম্বর) অনুষ্ঠিত বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন এনটিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহমুদ হাসান, এনটিসির মহাব্যবস্থাপক এমদাদুল হক, নাহিদুল ইসলাম এবং বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের (বাচাশ্রই) ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নিপেন পাল, চা শ্রমিক নেতা রামভজন কৈরিসহ অনেকে।
এ ব্যাপারে চা শ্রমিক নেতা নিপেন পাল বলেন, ‘চা-শ্রমিক প্রতিনিধি, চা বাগান পরিচালনা প্রতিনিধি এবং সরকারি অধিদফতরের প্রতিনিধি এ তিন পক্ষের যৌথ বৈঠকে চা বাগানগুলো শিরগির চালু করানোর প্রস্তাবটিকে সবাই সম্মতি দেন। শ্রমিকদেরও ক্ষতি হচ্ছে আর বাগান কর্তৃপক্ষের তো হচ্ছেই। সর্বোপরি দেশের ক্ষতি হচ্ছে। এ দিকগুলো সার্বিকভাবে বিবেচনা করে সীমিত পরিমাণে শ্রমিকদের বকেয়া মজুরি দেয়ার পরের দিনই বাগান চালুর প্রতিশ্রুতি আসে। এক্ষেত্রে দু’ সপ্তাহের বকেয়া মজুরি প্রায় দু’ হাজার ২০০ টাকা করে শ্রমিকদের দেয়া হবে।’
বৈঠকের সিদ্ধান্ত উল্লেখ করে এক চা শ্রমিক নেতা বলেন, ‘আগামী বৃহস্পতিবার কাজে যোগ দেয়ার প্রথম দিন শ্রমিকদের দু’ সপ্তাহের বকেয়া মজুরি দেয়া হবে। মাসিক বেতনধারী শ্রমিকদের এক মাসের বেতন দেয়া হবে। এখন থেকে শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন নিয়মিত পরিশোধ করা হবে। বাগানের কর্মচারীদের ২০ ডিসেম্বরের মধ্যে এক মাসের বেতন দেয়া হবে। এছাড়া বাগান বন্ধের দিনগুলোতে চা শ্রমিকদের রেশন কাটা হবে না। বোনাস ও বার্ষিক ছুটির দিন গণনার ক্ষেত্রে বাগান বন্ধের দিনগুলো অনুপস্থিত দেখানো হবে না। এ দিকে, অবশিষ্ট বকেয়া মজুরি আগামী ২০২৫ সালের মার্চ এর মধ্যে পরিশোধ করা হবে। একইসাথে ২০২৫ সালের ৭ এপ্রিলের মধ্যে প্রভিডেন্ট ফান্ডের বকেয়া চাঁদা পরিশোধ করা হবে।’
তিনি আরো বলেন, ‘আমাদের চা-শ্রমিক ইউনিয়েনের পক্ষ থেকে শ্রমিকদের আরো বেশি মজুরি দেয়ার দাবি ছিল। কিন্তু বাগান কর্তৃপক্ষ তো দিতে পারছে না। শ্রমিকরা প্রায় তিন মাস আন্দোলন করেছে। কেউ কেউ না খেয়ে ছিল। আবার খালি হাতে কাজে ফিরবে এটা তো অমানবিক। তাই আমাদের জোর দাবি ছিল কাজে ফেরার আগেই তাদের বকেয়া যতটুকু সম্ভব দিতে হবে। এরই প্রেক্ষাপটে এ সিদ্ধান্ত এসেছে। অন্তত খাওয়া-দাওয়া করে শ্রমিকরা কাজে ফিরতে পারবে।’
এনটিসির ফাঁড়ি চা বাগানসহ ১৯টি চা বাগানে নারী-পুরুষ মিলিয়ে প্রায় ১২ হাজার শ্রমিক কর্মরত আছে। সেই হিসেবে শ্রমিক প্রতি দু’ সপ্তাহের মজুরি দু’ হাজার ২০০ টাকা করে প্রায় দু’ কোটি ৬৪ লাখ টাকার প্রয়োজন হবে বলে জানান নিপেন পাল।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা