২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

বিরোধিতা সত্ত্বেও তামাবিল হয়ে আসছে ভারতীয় বিপজ্জনক মিথানল

তামাবিল হয়ে আসছে ভারতীয় বিপজ্জনক মিথানল - ছবি : নয়া দিগন্ত

বাংলাদেশী ব্যবসায়ীদের বিরোধিতা সত্ত্বেও সিলেটের তামাবিল স্থলবন্দর হয়ে দেশে আসছে ভারতীয় বিপজ্জনক বিস্ফোরক পদার্থ মিথানল।

শনিবার (৯ নভেম্বর) বিকেল ২টার দিকে ভারতীয় মিথানলবাহী একটি ট্যাংকলরিতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় পুরো বন্দরজুড়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, ‘তামাবিল স্থলবন্দরে সুরক্ষিত জোন নেই তবুও ভারত থেকে আমদানি হচ্ছে ঝুঁকিপূর্ণ জ্বালানি পদার্থ মিথানল। আমদানি রফতানিকারক ও পাথর ব্যবসায়ীরা প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা ও অবকাঠামো নির্মাণ না করা পর্যন্ত এই বন্দর দিয়ে বিপজ্জনক বিস্ফোরক পদার্থ মিথানল আমদানি বন্ধের আহ্বান জানিয়েছেন।
ব্যবসায়ী নেতারা দীর্ঘদিন ধরে মিথানল আমদানির বিরোধিতা করে আসছেন বলেও জানায় সূত্রটি।

সূত্র জানায়, ‘তামাবিল স্থলবন্দরে সুরক্ষিত জোন ও প্রয়োজনীয় অবকাঠামোগত সুবিধা না থাকায় ভারতীয় মিথানলবাহী ট্যাংকলরিতে এ ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে।’

এ সময় পোর্টে থাকা ভারতীয় মিথানলবাহী অন্য ট্যাংকলরি ও আমদানি করা পাথর ও কয়লাবোঝাই ভারতীয় শত শত ট্রাক নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেয়া হয়। এ সময় শ্রমিকরা নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যান।

জানা গেছে, ভারতীয় ডাউকি পোর্টে থাকা তাদের ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি এসে স্থানীয় জনতার সহযোগিতায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। খবর পেয়ে জৈন্তাপুর ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের ইন্সপেক্টর আল আমীনের নেতৃত্বে ফায়ার সার্ভিস টিম ঘটনাস্থলে ছুটে যান। আগুন লাগার ঘটনায় তদন্ত করা হচ্ছে।

সরজমিনে ঘটনাস্থলে গিয়ে জানা গেছে, ‘বাংলাদেশের বিভিন্ন পোশাককারখানার কাঁচামাল এবং জ্বালানিসহ বিভিন্ন কাজে ব্যবহার যোগ্য উচ্চ মাত্রার রাসায়নিক ও বিপজ্জনক বিস্ফোরক পদার্থ মিথানল সিলেটের তামাবিল স্থলবন্দর দিয়ে আমদানি করা হচ্ছে। জানুয়ারি মাসে বিভিন্ন আইনি জটিলতার কারণে এক সপ্তাহ স্থলবন্দরেই আটকা ছিল মিথানল বহনকরী শতাধিক ট্যাংকলরি। এরপর নিয়মিতভাবেই মিথানলবহনকারী ট্যাংকলরি বাংলাদেশে প্রবেশ করছে। বিপদজ্জনক হওয়ায় মিথানল বহনকারী লরি প্রবেশে নিরুৎসাহিত করছেন স্থানীয় আমদানিকারক ব্যবসায়ী নেতারা।’

তামাবিল স্থলবন্দর কাস্টমস সূত্রে জানা গেছে, ‘ভারতের আসাম রাজ্যের পার্বতপুর ডিব্ৰুগড় পেট্রোকেমিক্যাল থেকে সংগ্রহ করে বাংলাদেশী টিকে গ্রুপ অব কোম্পানি মিথানল আমদানি করছে।’

তামাবিল কাস্টমসের একজন রাজস্ব কর্মকর্তা জানান, ‘তামাবিল স্থলবন্দরে এসব রাসায়নিক পদার্থ পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার মত প্রয়োজনীয় কেমিক্যাল ল্যাব বা টেস্ট মেশিন ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেই।’

তিনি জানান, ‘ভারতের ডাউকি স্থলবন্দরেও মিথানল নিরাপদে রাখার মতো সুযোগ-সুবিধা নেই। এই কর্মকর্তা মনে করেন, সরকারি বৈধতা থাকলেও মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় তামাবিল স্থলবন্দর দিয়ে মিথানল প্রদার্থ আমদানি করার কোনো সুযোগ নেই। একমাত্র চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে এটা আমদানি করা হয়ে থাকে।’

এদিকে তামাবিল স্থলবন্দরে বিপজ্জনক উচ্চ মাত্রার রাসায়নিক পদার্থ আমদানি নিয়ে ব্যবসায়ীরা উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা প্রকাশ করেছেন।

তামাবিল স্থলবন্দরে কেমিক্যাল ল্যাব, সুরক্ষিত জোন, ফায়ার সার্ভিস স্টোশনসহ অন্য অবকাঠামোগত সুযোগ-সুবিধা না থাকার পরও কিভাবে বিপজ্জনক রাসায়নিক পদার্থ মিথানল আমদানি করা হয় এবং কাস্টমস কর্তৃপক্ষ কিভাবে তা প্রবেশের অনুমতি দেন? বিষয়টি সরকারের উচ্চ পর্যায়ের বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা অনুসন্ধান করতে মাঠে তৎপর রয়েছেন বলে জানিয়েছে একটি সূত্র।

ভারত থেকে বিপজ্জনক এই কেমিক্যাল জাতীয় রাসায়নিক পদার্থ মিথানল আমদানি বন্ধ করতে তামাবিল পাথর আমদানীকারক গ্রুপের নেতারা আহ্বান জানান।

গ্রুপের প্রধান সমন্বয়কারী মি. হেনরি লামিন, রফিকুল ইসলাম শাহপরান, শাহ রব মিয়া, আব্দুল মান্নান, ইসমাইল হোসেনসহ ব্যবসায়ী প্রতিনিধি দল স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, কাস্টমস রাজস্ব কর্মকর্তাদের সাথে দেখা করে কেমিক্যাল ল্যাব স্থাপনসহ অবকাঠামোগত উন্নয়ন কাজ সম্পন্ন না করে ভবিষ্যতে এসব এই রাসায়নিক পদার্থ আমদানি ও তামাবিল স্থলবন্দর দিয়ে প্রবেশ করা থেকে বিরত থাকার অনুরোধ জানান।

তামাবিল স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের সহকারী পরিচালক আমিরুল হক জানান, ‘দুর্ঘটনা এড়াতে নিরাপদ দূরত্বে মিথানল খালাসের উদ্যোগ নেয়া হবে। তামাবিল স্থলবন্দরে ফায়ার সার্ভিস স্টেশন স্থাপনে তারা স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষকেও জানিয়েছেন।


আরো সংবাদ



premium cement