‘আমার পুয়া নাই, আর টাউনো থাকতাম নায়, বাড়িত যাইমুগি’
- এম জে এইচ জামিল, সিলেট
- ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ১৬:৪৯, আপডেট: ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ১৬:৫০
সিলেটে পুলিশের গুলিতে নিহত সাংবাদিক এ টি এম তুরাবের মৃত্যুর সাড়ে তিন মাস পেরিয়ে গেলেও এখনো ছেলে শোকে কাতর সত্তর বছর বয়সী মা মমতাজ বেগম। এক মুহূর্তের জন্যও ভুলতে পারছেন না নিজের নাড়ি ছেঁড়া ধনকে। তুরাবের কথা মনে হলেই অঝোর ধারায় কাঁদতে থাকেন তিনি। ছেলেহারা মা এবার জানালেন, ‘আমার পুয়া নাই, আর টাউনো থাকতাম নায়, বাড়িত যাইমুগি’ অর্থাৎ যে শহরে তার ছেলে নেই সেই শহরে আর থাকতে চান না তিনি। চলে যেতে চান গ্রামের বাড়িতে।
শুক্রবার (৮ নভেম্বর) সিলেট জেলা মহিলা দলের নেতারা তাকে দেখতে গেলে এসব কথা বলেন তিনি।
উপস্থিত মহিলা দল নেত্রীদের সাথে আলাপকালে চোখের পানি মুছতে মুছতে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে পুলিশের গুলিতে নিহত তুরাবের মা বলেন, ‘আমার সুবিধার লাগি আমরা টাউনো আইছলাম, এখন আমার পুয়া আর নাই, আমরা আর টাউনো থাকতাম নায়, অউমাসো আমার নাতিনর পরীক্ষা শেষ ওইলে আমরা বাড়িত যাইমুগি।’
এ সময় সিলেট জেলা মহিলা দলের সভাপতি ও জেলা বিএনপির মহিলা বিষয়ক সম্পাদক তাহসিন শারমিন তামান্না, সহ-সভাপতি ফেরদৌসী ইকবাল, জেলা বিএনপির সহ-মহিলা বিষয়ক সম্পাদক ও জেলা মহিলা দলের দফতর সম্পাদক সুলতানা রহমান দিনাসহ উপস্থিত নেত্রীরা তাকে শান্তনা দেন।
সিলেট জেলা মহিলা দলের সভাপতি ও গুম হওয়া ছাত্রদল নেতা ইফতেখার হোসেন দিনারের বোন তাহসিন শারমিন তামান্না বলেন, ‘তুরাবের লাশ তো স্বজনরা দেখেছেন, তার কবর জিয়ারত করতে পারছেন। কিন্তু আমার ভাই দিনার কোথায় আছেন, কীভাবে আছেন? আমরা তার কিছুই জানি না। এ জাতি ত্রিশ লাখ জীবন দিয়ে স্বাধীনতা এনেছে, সময়ের প্রয়োজনে বারবার রক্ত দিয়ে এ স্বাধীনতাকে রক্ষা করেছে। শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে এনে সকল গুম ও খুনের বিচার করা হবে ইনশাআল্লাহ।’
দৈনিক নয়া দিগন্তের সিলেট ব্যুরো প্রধান ও দৈনিক জালালাবাদের স্টাফ রিপোর্টার এ টি এম তুরাব সিলেট শহরে তার বোনের বাসায় থেকে সাংবাদিকতা করতেন। বছর তিনেক আগে তার বোন আমেরিকায় চলে গেলে ছেলের কষ্টের কথা বিবেচনায় পরিবার নিয়ে গ্রামের বাড়ি বিয়ানীবাজার থেকে সিলেট শহরে আসেন তুরাবের মা।
শহীদ সাংবাদিক এ টি এম তুরাবের বড় ভাই আবুল আহসান মোহাম্মদ আজরফ (জাবুর আহমদ) বলেন, ‘মামলার এত দিন পরও পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)-এর তদন্তের কোনো অগ্রগতি নেই, এটি রহস্যজনক। আজ পর্যন্ত আমার ভাইয়ের মূল খুনিরা বুক ফুঁলিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। সরকারি সুযোগ-সুবিধা ভোগ করছেন। আমরা দিন দিন বিচার নিয়ে হতাশায় নিমজ্জিত হচ্ছি।’
তিনি বলেন, ‘পুলিশের যে কর্মকতা আমার ভাইয়ের বুকে গুলি করেছিলেন, তিনিসহ তার সহযোগীরা এখনো চাকুরিতে বহাল থেকে মামলার তদন্ত প্রভাবিত করছেন। অবিলম্বে তাদেরকে চাকুরিচ্যুত করে গ্রেফতার করা হোক। অন্যথায় আমার ভাই হত্যার সঠিক বিচার পেতে প্রতিবন্ধকতা তৈরি হচ্ছে।’
এ সময় উপস্থিত ছিলেন সিলেট জেলা মহিলা দলের শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক নুরুন নাহার ইয়াসমিন, মহিলা দল নেত্রী জান্নাত জামান চৌধুরী, বিলকিস আক্তার, জুলি পুরকায়স্থ, আমিনা বেগম, মিনা বেগম, রাবিয়া বেগম, রায়না বেগম প্রমুখ।