২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

সিমেবি’র ‘লাপাত্তা ভিসি’ কার্যালয়ে ফিরেই অবরুদ্ধ

ভিসি অধ্যাপক ডা. এ এইচ এম এনায়েত হোসেন অবরুদ্ধ - ছবি : নয়া দিগন্ত

সিলেট মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (সিমেবি) ভিসি অধ্যাপক ডা. এ এইচ এম এনায়েত হোসেন বেশ কয়েক দিন লাপাত্তা ছিলেন।

বৃহস্পতিবার (৭ নভেম্বর) তিনি নিজ কার্যালয়ে ফিরলে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা তাকে সাড়ে তিন ঘণ্টা অবরুদ্ধ করে রাখেন।

জানা যায়, ‘আজ সকাল সাড়ে ১০টা থেকে নগরের চৌহাট্টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্থায়ী ক্যাম্পাসে অধ্যাপক ডা. এ এইচ এম এনায়েত হোসেনকে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়। খবর পেয়ে সেনাবাহিনী ও পুলিশসহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বিশ্ববিদ্যালয়ে পৌঁছান। এ সময় ভিসি ১৫ দিনের মধ্যে দাবি দাওয়া পূরণের আশ্বাস দেন।’

এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বেতন-ভাতাসহ বিভিন্ন দাবি সংবলিত ব্যানার নিয়ে কার্যালয়ের সামনে অবস্থান করেন।

তারা জানান, ‘আওয়ামী লীগের শাসনামলে নিয়োগ বাণিজ্যে অনিয়ম দুর্নীতির কারণে সিলেট মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি ডা. মোর্শেদ আহমদ চৌধুরীকে অপসারণ করা হয়। ২০২৩ সালের ১ জানুয়ারি ভিসি হিসেবে নিয়োগ পান ডা. এ এইচ এম এনায়েত হোসেন। কিন্তু গত ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর থেকে প্রায়ই লাপাত্তা থাকতেন তিনি।’

তারা আরো জানান, ‘তার সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। কিন্তু তার পক্ষ থেকে কোনো প্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি। এমনকি তিনি কারো সাথে দেখাও করতেন না। এমন পরিস্থিতিতে বেতন-ভাতা ও দাফতরিক কাজ আটকে অচলাবস্থা সৃষ্টি হয় সিমেবিতে।’

কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দাবি, ‘পট পরিবর্তনের পর ভিসি লাপাত্তা হয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু লাপাত্তা থেকেও তিনি গত ২১ অক্টোবর বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিন হিসেবে মহানগর বিএনপির সহ-সভাপতি ডা. নাজমুল ইসলামকে নিয়োগ দেন।’

সূত্র জানায়, ‘ডিন হিসেবে নিয়োগ পাওয়া বিএনপি নেতা ডা. নাজমুল ইসলামের আশ্বাসে ভিসি অধ্যাপক ডা. এ এইচ এম এনায়েত হোসেন বৃহস্পতিবার কার্যালয়ে আসেন। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীসহ নিজের কার্যালয়ে ঢুকে গুরুত্বপূর্ণ নথি নিয়ে যাচ্ছেন, এমন খবর ছড়িয়ে পড়ে। তখন সিমেবির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা শীঘ্রই ভিসি কার্যালয়ে যান ও তাকে অবরুদ্ধ করেন।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈষম্যবিরোধী কর্মকর্তা-কর্মচারী পরিষদের সভাপতি আব্দুস সামাদ চৌধুরী বলেন, ‘৫ আগস্টের পর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের অভিভাবক বলতে কেউ ছিলেন না। ভিসি, রেজিস্ট্রার ও কোষাধ্যক্ষ তিনজনই লাপাত্তা হয়ে যান। বৃহস্পতিবার যুবলীগ-ছাত্রলীগের কতিপয় নেতাকর্মী নিয়ে ভিসি ক্যাম্পাসে আসার খবর পেয়ে সবাই অবস্থান নিয়েছি আমরা।’

এ বিষয়ে সিলেট মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন দায়িত্ব পাওয়া ডিন ডা. মো: নাজমুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা স্বৈরাচারের দোসরদের সাথে আপস করব না। তারা আমাদের কাছে আশ্রয় পাবে না। আর উনাকে (ভিসি) টেক কেয়ার করা কিংবা সহযোগিতার প্রশ্নই আসে না।’

স্বৈরাচারের দোসর বললেও ভিসির সইয়ে ডিন পদে নিয়োগের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০তম সিন্ডিকেটের সভায় আমাকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। তিনি সই করেছেন মাত্র। দেশের বৃহত্তম স্বার্থে এটা এমন কিছু না। কর্মকর্তা-কর্মচারীরা তাকে অবরুদ্ধ করে দাবি-দাওয়া জানিয়েছেন।’

তাছাড়া বঙ্গমাতা শেখ ফজিলতুন্নেছা মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় প্যাডে নিয়োগ কার্যকর হলেও এ নাম তিনি সমর্থন করেন না জানিয়ে নাজমুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের আগের নামে ফিরে যাব। এই নাম মানি না, মানব না।’

পরে জানা যায়, ভিসি ১৫ দিনের মধ্যে দাবি দাওয়া পূরণের আশ্বাস দিয়েছেন। এরপর তার অবরুদ্ধ অবস্থার অবসান হয়। বিষয়টি নিয়ে ভিসি ডা. এ এইচ এম এনায়েত হোসেনের সাথে যোগাযোগের চেষ্টাও করা হয়। তবে তার সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।


আরো সংবাদ



premium cement